কেউ নতুন গাড়ি কিনেছেন, কেউ সোনার গয়না।
কেউ ডাকঘরে ১০ হাজার টাকা করে এক দিনে ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকার এনএসসি কেটেছেন।
মাত্র পাঁচ বছরের ফারাক। ২০১১ সালে মনোনয়ন পেশ করার সময়ে জমা দেওয়া হলফনামার সঙ্গে এ বার জমা পড়া হলফনামার ফারাক। হলফ করে জানিয়েছেন প্রার্থীরাই।
গত বার মুর্শিদাবাদ থেকে জেতা তৃণমূলের একমাত্র প্রার্থী সুব্রত সাহা। সাগরদিঘি থেকে জিতে প্রতিমন্ত্রীও হন তিনি। এ বারও দাঁড়িয়েছেন ওই কেন্দ্রেই। গত বার স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে তাঁর সম্পত্তি ছিল প্রায় ৫২ লক্ষ টাকার। স্ত্রীর নামে আরও ৪ লক্ষ টাকা। এ বছর স্ত্রীর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির বেড়ে হয়েছে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা। সুব্রতর নিজের ব্যাঙ্কে জমেছে প্রায় ৮৮ লক্ষ টাকা। সাড়ে ১২ লাখ টাকা দিয়ে গাড়ি কিনেছেন। সব মিলিয়ে অস্থাবর সম্পত্তি কোটি টাকারও বেশি। স্থাবর সম্পত্তি প্রায় ২৫ লক্ষ টাকার।
গত বার সুতি কেন্দ্রে কংগ্রেসের টিকিটে জিতে পরে তৃণমূলে চলে গিয়েছিলেন ইমানি বিশ্বাস। গত বার স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে প্রায় চার কোটি টাকার ঘোষিত সম্পত্তি ছিল তাঁর। এ বার দেখা যাচ্ছে, গত পাঁচ বছরে তিনি শেয়ার বন্ডই কিনেছেন প্রায় দু’কোটি টাকার। সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার অস্থাবর সম্পত্তি তাঁর নামে। স্থাবর সম্পত্তিও প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার। দুইয়ে মিলিয়ে প্রায় সাত কোটি টাকার সম্পত্তি তাঁর নিজের নামে। তাঁর স্ত্রীর নামেও অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার। স্থাবর সম্পত্তিও প্রায় ২১ লক্ষ টাকার।
ডোমকলে জিততে না পারলেও সম্পত্তি লাফিয়ে বেড়েছে রাজ্য যুব তৃণমূল সাধারণ সম্পাদক সৌমিক হোসেনের। গত বার স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে প্রায় ৫১ লক্ষ টাকার সম্পত্তি ছিল তাঁর। এ বার ফের ডোমকলে টিকিট পেয়ে তিনি যে হিসেব পেশ করেছেন, তাতে পাঁচ বছরেই তিনি কোটিপতি। অস্থাবর সম্পত্তি প্রায় ৫৫ লক্ষ টাকার, স্থাবর সম্পত্তিও বেড়ে হয়েছে ৫২ লক্ষ। স্ত্রীর নামে ব্যাঙ্ক থেকে ১ কোটি ৩১ লক্ষ টাকার ঋণও নেওয়া হয়েছে, যদিও তাঁর মোট সম্পত্তি ২২ লক্ষ টাকাও নয়।
কান্দি থেকে দু’বার কংগ্রেসের টিকিটে জিতেছেন অপূর্ব সরকার ওরফে ডেভিড। তিনি অবিবাহিত। গত বার তাঁর স্থাবর সম্পত্তি ছিল প্রায় ৬৪ লক্ষ টাকার, অস্থাবর সম্পত্তি ৪৭ লক্ষ টাকার। তাঁর মায়ের নামে ছিল মোট ২৮ লাখ টাকার সম্পত্তি। এ বার ডেভিডের স্থাবর সম্পত্তি আড়াই কোটি ছাড়িয়েছে। অস্থাবর সম্পত্তিও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫ লক্ষ টাকায়। ২০১২ সালে প্রায় ৭ লক্ষ টাকা দিয়ে একটি গাড়ি কিনেছিলেন ডেভিড। গত বছর ১৭ লাখেরও বেশি দিয়ে ফের গাড়ি কেনেন। তাঁর মায়ের নামে সম্পত্তির পরিমাণ এক লাফে কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে।
এর মধ্যে, সুব্রত সাহার নামে গ্যাসের এজেন্সি রয়েছে। ইমানি বিশ্বাস পেশায় বিড়ি ব্যবসায়ী। তাঁদের দু’জনেরই দাবি, ব্যবসার লাভের গুড়ে হলফনামায় মিঠে হয়েছে। জেলা তৃণমূল সভাপতি মান্নান হোসেনের বড় ছেলে সৌমিকের দাবি, ‘‘পারিবারিক সূত্রে সম্পত্তি পেয়েছি। মামারবাড়ি থেকেও সম্পত্তি পেয়েছি। তা ছা়ড়া আমি নিজেও ছোটখাটো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।’’ ডেভিডও বলছেন, তিনি পারিবারিক সম্পত্তি পেয়েছেন। তা ছাড়া— ‘‘গত পাঁচ বছরে বিধায়ক হিসেবে যে ভাতা পেয়েছি, কম নয়।’’
নদিয়ার কৃষ্ণনগর (দক্ষিণ) কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের টিকিটে জিতে মন্ত্রী হয়েছিলেন উজ্জ্বল বিশ্বাসও। গত বার তাঁর নিজের এবং স্ত্রীর মিলিত সম্পত্তির পরিমাণ ছিল প্রায় ৬৬ লক্ষ টাকা। গত পাঁচ বছরে তা সওয়া দু’কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে।
পাশের কেন্দ্র, কৃষ্ণনগর (উত্তর) থেকে তৃণমূলেরই টিকিটে জেতেন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার অবনীমোহন জোয়ারদার। সে বার তাঁর নিজের এবং স্ত্রীর স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে মোট সম্পত্তি ছিল প্রায় ৫৬ লক্ষ টাকার। এ বার তা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ কোটি ৩৮ লক্ষে।
কালীগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক নাসিরুদ্দিন আহমেদ আইনজীবী। গত বার তাঁর স্ত্রী-পুত্র মিলিয়ে মোট ঘোষিত সম্পত্তি ছিল প্রায় সাড়ে ৬৫ লক্ষ টাকার। এ বার দম্পতির মিলিত সম্পত্তি দাঁড়িয়েছে প্রায় এক কোটি ৬৪ লক্ষ টাকায়। পুত্রের খাতায় এ বার সম্পত্তির পরিমাণ শূন্য।
চাপড়ার সিপিএম প্রার্থী সামসুল ইসলাম মোল্লা ও তাঁর স্ত্রীর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ গত বার ৪৪ লক্ষ টাকার। এ বারে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫ লক্ষ টাকায়।
একটা কথা ঠিকই যে জমি-বাড়ির দর বাড়ায় অনেকের ক্ষেত্রে সম্পত্তির পরিমাণ লাফিয়ে বেড়েছে। সামসুল ইসলাম মোল্লা যেমন। সকলের ক্ষেত্রে কিন্তু তা নয়। উজ্জ্বল বিশ্বাস বলছেন, ‘‘আমার বরাবরই বাড়ি-গাড়ি, পৈতৃক সম্পতি রয়েছে। বরং মন্ত্রী থাকাকালীন সরকারি গাড়ি ছেড়ে দিয়ে নিজের গাড়ি চড়েছি। জনগণের টাকা বাঁচিয়েছি। ”
নাসিরুদ্দিন আহম্মেদও বলছেন পৈতৃক সম্পত্তির কথা— “জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের জন্য আমাদের জমি অধিগ্রহণ হয়েছে। তার ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫০ লক্ষ টাকা পেয়েছি। আমি ওকালতিও তো করি!” অবনীমোহন জোয়ারদার ফোন ধরেননি। এসএমএস-এরও উত্তর দেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy