Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
বেহালা

ভোট মেটার পরেই ‘আক্রান্ত’ অম্বিকেশ

শাসক দলের নির্দেশ ছিল, ভোট দিতে যাওয়া যাবে না। বাম-কংগ্রেস জোট সমর্থিত নির্দল প্রার্থী অম্বিকেশ মহাপাত্র দিনভর তাঁদের টেনে বার করে ভোট দিতে পাঠানোর চেষ্টা করে গেলেন। সেই চেষ্টারই মাসুল দিতে হল সন্ধ্যায়।

—নিজস্ব চিত্র।

—নিজস্ব চিত্র।

রোশনী মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৬ ০০:৫৪
Share: Save:

শাসক দলের নির্দেশ ছিল, ভোট দিতে যাওয়া যাবে না। বাম-কংগ্রেস জোট সমর্থিত নির্দল প্রার্থী অম্বিকেশ মহাপাত্র দিনভর তাঁদের টেনে বার করে ভোট দিতে পাঠানোর চেষ্টা করে গেলেন। সেই চেষ্টারই মাসুল দিতে হল সন্ধ্যায়। বেহালা পূর্ব কেন্দ্রের ঢালীপাড়ায় অম্বিকেশবাবুর গাড়ি ভাঙচুর হল। এ ছাড়াও, নেপালগঞ্জের ঘোলপাড়ায় এক বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠল। সেখানে সাত বছরের বালিকার মাথা ফাটার খবরও মেলে। রাতে হরিদেবপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। সব ক্ষেত্রেই অভিযুক্ত তৃণমূল।

বেহালা পূর্বের ১৪২, ১৪৩ এবং ১৪৪— এই তিনটি ওয়ার্ড কয়েক দিন আগেও জোকার গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ছিল। সম্প্রতি কলকাতা পুরসভার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ওই অঞ্চল। তার প্রতিদান হিসেবে এই বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের প্রার্থী এবং মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে ফের জেতানোর নির্দেশ এসেছে ওই তিন ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের কাছে। নির্দেশ পালন করার দুটো পদ্ধতিও বলে দেওয়া হয়েছে। হয় বুথে গিয়ে তৃণমূলকে ভোট দিতে হবে। আর যাঁরা প্রাণে ধরে সেটা পারবেন না, তাঁদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে বুথে যেতে হবে না। অভিযোগ— শুক্রবার, অর্থাৎ, ভোটের আগের রাতে ওই তিনটি ওয়ার্ডের সিংহভাগ মানুষকেই ঠান্ডা গলায় সমঝে দিয়ে এসেছে বাইক বাহিনী। ফলে ভালুকের সামনে পড়ে বাঁচার জন্য মৃত সাজার কৌশল নিয়েছেন অনেক গ্রামবাসীই।

মল্লিকপুরের ১৫০ পরিবার এ দিন ভোট দিতে বেরোননি। গুটিকয়েক সঙ্গী নিয়ে তাঁদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভোট দিতে যাওয়ার আবেদন করেছেন অম্বিকেশবাবু। এক বার নয়, দু’বার। তাঁরা সবিনয়ে জানিয়েছেন, তাঁরা সিপিএমের ভোটার। কিন্তু ভোট দিতে যাবেন না। কারণ ২০১১-র বিধানসভা ভোটের পর তাঁদের বাড়িতে বোমাবাজি হয়েছিল। ঘরছাড়া থাকতে হয়েছিল অনেককে। ফিরে এলেও তাঁদের জীবন দুর্বিষহ। যখন-তখন দুষ্কৃতীরা ওই অঞ্চলে গুলি চালায়, বোমা মারে। বাড়ি গিয়ে হুমকি দেয়। সংবিধান যে হেতু তাঁদের প্রাণ বাঁচায় না, অতএব তাঁরাও ভোটের দিন সংবিধানের মান বাঁচাতে পারবেন না। এমনকী, সাংবাদিকদের সামনে কথা বলার জন্যও এ দিন রাতে তাঁদের বাড়িতে হামলার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন মিনতি প্রামাণিকরা। এই সব কথাবার্তা চলাকালীনও বাইকে চড়ে চৌকি দিয়ে গিয়েছে দুটো কঠিন মুখ।

বিকেলে ভোট শেষ হওয়ার মুখে মল্লিকপুরের ভোটারদের বুথে পাঠানোর সাহস জোগানোর শেষ চেষ্টা হিসেবে কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং পুলিশ ডেকেছিলেন অম্বিকেশবাবু। কিন্তু হরিদেবপুর থানার ওসি-র নেতৃত্বে তারা গ্রামের ভিতর রুট মার্চ করে ৫ মিনিটের মধ্যে বেরিয়ে আসে। কোনও বাড়িতে তারা ঢোকেনি।

অম্বিকেশবাবু এ দিন শুধু একটা পাড়ার পাঁচ-ছ’জনকে ভয় ভাঙিয়ে ভোট দেওয়াতে নিয়ে যেতে পেরেছেন। ১৪২ নম্বর ওয়ার্ডের ১৯টা বুথের মধ্যে ১৩টায় এবং ১৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের ২৮টার মধ্যে দু’টিতে অম্বিকেশবাবুর কোনও পোলিং এজেন্ট ছিলেন না। ব্যঙ্গচিত্র-কাণ্ডের পর যিনি প্রতিবাদ করেছিলেন, সেই অধ্যাপক এ দিন অসহায় গলায় বলেছেন, ‘‘আমরা তো মানুষকে অবাধে ভোট দেওয়ানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু সব ক্ষেত্রে পারলাম না।’’

এই সন্ত্রাসের জন্য স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্ব আঙুল তুলেছেন হরিদেবপুর থানার ওসি এবং এলাকার দুই তৃণমূল নেতা অমর মাখাল ও সর্বেশ্বর মণ্ডলের দিকে। তাঁদের মধ্যে সর্বেশ্বরকে এ দিন বিভিন্ন বুথের কাছে জমায়েতে নেতৃত্ব দিতে দেখা দিয়েছে।

অম্বিকেশবাবুর গাড়ি ভাঙচুরের পর সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, ‘‘চরম হতাশা থেকে কাপুরুষের মতো কাজ করেছে তৃণমূল। সকলে মিলে এই আক্রমণের প্রতিবাদ করা উচিত।’’ শোভনবাবু অবশ্য সব অভিযোগ উড়িয়ে বলেন, ‘‘অম্বিকেশবাবু সারা দিনে ২৫০ অভিযোগ করেছেন। এর সব ক’টাই ভিত্তিহীন।’’ শোভনবাবুর দাবি, অমর এ দিন বাড়িতে ছিল। আর সর্বেশ্বরের সঙ্গেও কারও কোথাও কোনও গোলমাল হয়নি। তাঁর কথায়, ‘‘ওঁর কোথাও কোনও লোক নেই। সংগঠন বোঝেন না। উনিই এখানে অশান্তি পাকানোর চেষ্টা করেছেন। বেহালায় এই রকম সংস্কৃতি নেই।’’

তবে আকাশে এ দিন সূর্যকে ঘিরে যে গোল কালো ছায়া দেখা গিয়েছে, তার পরিধিতে ছিল রামধনু। অম্বিকেশবাবুও যখন উদভ্রান্তের মতো দৌড়চ্ছিলেন ভোটারদের ভয় ভাঙাতে, তখন জেমস লং সরণিতে নিজের পানের দোকানে বসে এক ব্যবসায়ী প্রত্যয়ের সঙ্গে বলছিলেন, ‘‘আমি ভোর ৪টেয় উঠে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েছি। আমি জানি, অম্বিকেশ মহাপাত্রের নাম ৫ নম্বর বোতামে ছিল।’’ ওই পান ব্যবসায়ীর সঙ্গে হয়তো দেখা হয়নি অম্বিকেশবাবুর!

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy