Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
ফের বিতর্কে জেলা পুলিশ

তৃণমূলের মঞ্চে ‘ফেরার’ নেতা

ভোট আসতে দেরি নেই। কিন্তু, পরোয়ানা জারি থাকা অভিযুক্তদের ধরার ক্ষেত্রে বীরভূমের পুলিশ যে এখনও পিছিয়ে, ফের তার প্রমাণ মিলল। এমনকী, ভোট মরসুমে অভিযুক্তদের ধরার ক্ষেত্রে জেলা পুলিশের বিরুদ্ধে উঠল ‘আমরা-ওরা’র অভিযোগও।

নানুরের সভায় অভিযুক্ত আবদুল কেরিম খান (বন্ধনীতে চিহ্নিত)। —নিজস্ব চিত্র

নানুরের সভায় অভিযুক্ত আবদুল কেরিম খান (বন্ধনীতে চিহ্নিত)। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
নানুর শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৬ ০১:২৭
Share: Save:

ভোট আসতে দেরি নেই। কিন্তু, পরোয়ানা জারি থাকা অভিযুক্তদের ধরার ক্ষেত্রে বীরভূমের পুলিশ যে এখনও পিছিয়ে, ফের তার প্রমাণ মিলল। এমনকী, ভোট মরসুমে অভিযুক্তদের ধরার ক্ষেত্রে জেলা পুলিশের বিরুদ্ধে উঠল ‘আমরা-ওরা’র অভিযোগও।

চার বছরেও চার টিকি পর্যন্ত ছুঁতে পারেনি পুলিশ, শনিবার নানুরে দলীয় প্রার্থী গদাধর হাজরার প্রচার সভার মঞ্চে পুলিশের সামনেই দেখা গেল তৃণমূলের সেই ‘ফেরার’ নেতাকে। যা দেখে বিরোধীদের অভিযোগ, এ দিনের ঘটনা এ জেলার পুলিশের শাসকদলের হয়ে তাঁবেদারিরই নমুনা। শাসকদলের দাপুটেনা নেতা হওয়ার কারণেই আবদুল কেরিম খান নামে পরোয়ানা থাকা ওই নেতাকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। গোটা ঘটনায় মুখে কুলুপ এঁটেছেন জেলার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার। ফোন ধরেননি জেলার রিটার্নিং অফিসার তথা ডিএম পি মোহন গাঁধীও।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ২০১২ সালে নানুরের সাঁতরা গ্রামে জামাল শেখ নামে এক তৃণমূল কর্মী আক্রান্ত হন। তার উপর বোমা-গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কলকাতার হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ৪০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। অনেকে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনও পান। কিন্তু, কয়েক জন অভিযুক্ত পুলিশের খাতায় ‘ফেরার’ই থেকে যান। তাঁদেরই অন্যতম এই কেরিম খান। যিনি বর্তমানে তৃণমূলের জেলা কমিটির সদস্য হওয়ার পাশাপাশি জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষও।

এ দিন নানুরের বঙ্গছত্র বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গদাধরের সমর্থনে আয়োজিত এক জনসভায় দেখা যায় কেরিমকে। সভায় দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল, জেলা সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী, স্থানীয় নেতা অভিজিত সিংহের পাশেই বসেছিলেন কেরিম। সভা মঞ্চের নীচেই ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী ও নানুর থানার পুলিশ। এমনকী, হাজির ছিলেন ওসি সৌম্য দত্তও। তার পরেও খুনের অভিযোগে পরোয়ানা থাকা তৃণমূলের ওই দাপুটে নেতাকে ধরার সাহস কেউ দেখাননি। বিরোধীদের দাবি, শুধু এ দিনই নয়, বিধানসভার ভোট মরসুমে এলাকার বিভিন্ন সভা সমাবেশেই কেরিমকে দেখা যাচ্ছে। তার পরেও পুলিশ কিছু করছে না।

অথচ কয়েক দিন আগেই বোলপুরের বাহিরীতে তিন গদাধর অনুগামী খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দলেরই ব্লক তফশিলি এবং আদিবাসী সেলের সভাপতি ভরত মাঝিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এলাকায় ভরত অনুব্রত ঘনিষ্ঠ গদাধর গোষ্ঠীর বিরোধী নেতা কাজল শেখের অনুগামী বলেই পরিচিত ছিলেন। অতি সম্প্রতি অবশ্য তাঁকে গদাধরের হয়ে ভোট প্রচারে নামতে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু তলায় তলায় তিনি ‘অন্তর্ঘাত’ করতে পারেন, এমন আশঙ্কা থাকায় নাকি শাসকদলের সবুজ সঙ্কেত পেয়ে পুলিশ ভরতকে গ্রেফতার করে বলে তৃণমূলেরই একটি সূত্রের দাবি। যে দাবি বিরোধীরাও করছেন। তা না হলে এ দিন হাতের নাগালে পেয়েও কেরিমকে পুলিশ কেন গ্রেফতার করল না, সেই প্রশ্ন তাঁরা তুলেছেন।

এই প্রশ্নের মুখে অস্বস্তিতে পড়েছেন জেলা পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা। তাই কেউ-ই এ নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি। এ দিকে, অভিযুক্ত কেরিমও মেনে নিয়েছেন তাঁর বিরুদ্ধে পরোয়ানা রয়েছে। কেন তাঁকে ধরা হচ্ছে না, তা তাদেরই ব্যাপার বলে পুলিশের দিকেই বল ঠেলে দিয়েছেন কেরিম। তাঁর আবার দাবি, ‘‘আমাদেরই কর্মী খুনে পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত মামলায় আমাকে ফাঁসিয়েছে। আমি আদালতে আগাম জামিনের আর্জি জানিয়েছি। শীঘ্রই তার শুনানি রয়েছে। দলের নির্দেশেই আমি ভোটের কাজ করছি। এখন পুলিশ চাইলে আমাকে গ্রেফতার করতেই পারে।’’

গোটা ঘটনায় নানুরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আনন্দ ভট্টাচার্যের অভিযোগ, শুধু কেরিমই নন, খুঁজলে আরও অনেকের বিরুদ্ধে একই রকম অভিযোগ মিলবে। তাঁর দাবি, ‘‘শাসকদলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণেই পুলিশ ওদের নাগালে পেয়েও ধরছে না। বিষয়টি বহুবার কমিশনে জানিয়েছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy