কোটশিলায় ডাম্পার। নিজস্ব চিত্র।
পুরুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় রাতভর অভিযান চালিয়ে বালি পাচারের অভিযোগে ছ’টি বড় গাড়ি আটক করে মোট ১৩ জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে এক জন তৃণমূল কর্মী।
বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ঝালদা, বাঘমুণ্ডি, কোটশিলা ও জয়পুর থানা এলাকায় পাঁচটি ডাম্পার ও একটি ট্রাক আটক করা হয়। পুরুলিয়া জেলা পুলিশ সুপার বিশ্বজিৎ মাহাতো বলেন, ‘‘রাতের অন্ধকারে অবৈধ ভাবে বালি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে খবর পেয়ে অভিযান চালানো হয়। বালি নিয়ে যাওয়ার বৈধ নথি না থাকায় ছ’টি গাড়ি আটক করা হয়, গ্রেফতার করা হয়েছে ১৩ জনকে।’’
ধৃতদের মধ্যে শক্তিপদ মাহাতো নামে এলাকার এক তৃণমূল কর্মী থাকায় ওই ঘটনাকে ঘিরে রাজনৈতিক রং লেগেছে। অভিযোগ, তৃণমূলের ওই কর্মীর তত্ত্বাবধানে বেশ কিছু দিন ধরেই এলাকায় বালি পাচারের ‘সিন্ডিকেট’ চালু রয়েছে। যদিও এই বিষয়টিতে দলের কোনও সমর্থন নেই বলে দাবি করেছে জেলা তৃণমূল।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝালদা থানার পুস্তি পঞ্চায়েত এলাকার সুবর্ণরেখা নদীর দু’টি ঘাটে অনেকদিন ধরেই বালি পাচার চলছে। ত্রিবেণী ঘাট ও শ্যামনগর ঘাট থেকে রাতের অন্ধকারে যন্ত্র দিয়ে বালি তোলা হয় বলে অভিযোগ।
গত বৃহস্পতিবার পুলিশ সুপার নিজেও অভিযানে নামেন। পুলিশ সূত্রের খবর, ওই দু’টি ঘাট থেকে বালি বোঝাই ডাম্পার কোন রাস্তা ধরে গন্তব্যে রওনা দেয়, তার নকশা হাতে নিয়ে রাতেই বিভিন্ন রাস্তায় ওত পাতে পুলিশ। ঝালদা থানা থেকে নজরদারি চালাচ্ছিলেন পুলিশ সুপার। এসডিপিও (ঝালদা) সুব্রত দেবের নেতৃত্বে অভিযান শুরু হয়।
পুলিশের দাবি, চাষমোড়-তুলিন রাজ্য সড়কে কোটশিলা থানার টালি সেন্টারের কাছে আটক করা হয় একটি ডাম্পার। আটক করা হয় তিন জনকে। ওই রাস্তায় জয়পুর থানার রাখবড় মোড়ের অদূরে আটক করা হয় আর একটি ডাম্পার ও একটি ট্রাক। সেখানে আটক হয় চার জন। অন্য দিকে, ঝালদা-বাঘমুণ্ডি সড়কে ঝালদা থানার জারগো ও পুস্তি গ্রামের মাঝামাঝি দু’টি ডাম্পার আটক করে আটক করা হয় চার জনকে। একই রাস্তায় বাঘমুণ্ডি থানার দুয়ারসিনি মোড়ের কাছে একটি ডাম্পার আটক করা হয়। আটক হয় দু’জন। শুক্রবার ওই ১৩ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে দাবি করা হয়েছে, কোটশিলা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় ঝালদার পুস্তির বাসিন্দা শক্তিপদ মাহাতোকে। ধৃতদের বিরুদ্ধে বালি চুরি, অবৈধ ভাবে বালি বহন করা, ষড়যন্ত্র এবং মাইনস অ্যান্ড মিনারেলস আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে। শনিবার ধৃতদের আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের ১৪ দিন জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।
শক্তিপদর গ্রেফতার হওয়ার খবর চাউর হতেই জেলা রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন শুরু হয়েছে। অভিযোগ, তাঁর এলাকায় সুবর্ণরেখা নদীর ওই দু’টি ঘাট রয়েছে। ফলে, বালি পাচারের পুরো বিষয়টি তাঁর নিয়ন্ত্রণে ছিল।
এক সময়ে কংগ্রেস করতেন শক্তিপদ। ২০০৮ ও ২০১৩ সালে কংগ্রেসের ঝালদা ১ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য হন তিনি। ২০১৬ সালে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। ২০১৮ সালে ওই আসন মহিলা সংরক্ষিত হওয়ায় শক্তিপদর স্ত্রী তৃণমূলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে হারেন।
বাঘমুণ্ডির বিদায়ী বিধায়ক তথা জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতোর কটাক্ষ, ‘‘শক্তিপদ কেন কংগ্রেস ছেড়েছিলেন তা স্পষ্ট নয়। বোধ হয়, বেআইনি কারবারে কংগ্রেস সুরক্ষা দেবে না বুঝেই দলবদল।’’
যদিও ঝালদা ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি অলোক চট্টোপাধ্যায় দাবি করেন, ‘‘শক্তিপদ তৃণমূলে যোগ দিলেও বেশ কিছু দিন ধরে আর তেমন সক্রিয় নন। বালি পাচার নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে এতে দলের কোনও হাত নেই। দল কোনও ভাবেই এই ঘটনায় হস্তক্ষেপ
করবে না।’’ চেষ্টা করেও শক্তিপদ বা তাঁর তরফে কারও বক্তব্য
পাওয়া যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy