—প্রতীকী ছবি।
তাঁর ঘরের বাইরে দরজা ও দেওয়ালে স্টিকার পড়েছে। তৃণমূলের জোড়া ফুলের প্রতীক তাতে। ছাপার অক্ষরে তিনটি লাইনে লেখা, ‘বাংলার লড়াইয়ে আমি বাংলার সাথে’।
এত অবধি থাকলে আপত্তি ছিল না হুগলির গোঘাটের দইয়াকান্দা গ্রামের দিনমজুর সুলতা দাসের। ঘরের দেওয়ালে যুগ যুগ ধরেই বিভিন্ন দল তাদের সমর্থনে ভোটের প্রচার চালায়। কিন্তু এ বার ওটা কী! স্টিকারে ‘বাংলার লড়াইয়ে আমি’র ঠিক পরেই হাতে লেখা— ‘সুলতা দাস’!
দেখলে মনে হবে, সুলতা যেন নিজেই ঘোষণা করেছেন ওই কথা। কিন্তু তাঁর দাবি, না। তিনি বিস্মিত। কিছুটা ক্রুদ্ধও। তাঁর কথায়, “এর মানে কী! এ বার এদেরই ভোট দিতে হবে?”
আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন বুথে বাড়ি বাড়ি এ রকমই স্টিকার সেঁটে শাসক দলের নতুন প্রচার কর্মসূচি নিয়ে সাধারণ ভোটারেরা কিছুটা বিভ্রান্ত এবং সন্ত্রস্ত। সুলতার উদ্বেগ, “এই নাম লেখা কাগজ সেঁটে দেওয়ার পরে আমরা নিজেদের মতো ভোট দিতে পারব কি না, জানি না।”
বাড়িতে ওই রকম স্টিকার দেখে পুরশুড়ার কেলেপাড়ার প্রভাত মণ্ডল, খানাকুলের মাড়োখানার শেখ আসিফ আলি, আরামবাগের সালেপুরে রতন মালিকের মতো সাধারণ ভোটারদের বক্তব্য, যার যখন জোর, তার সঙ্গেই থাকার চল এখানে। গত লোকসভা ভোটে তৃণমূলের সঙ্গে প্রায় সমানে টক্কর দিয়েছে বিজেপি। বিধানসভা ভোটে মহকুমার চারটি কেন্দ্রে বিজেপি জিতে শক্তি সঞ্চয় করার পর থেকে রাজনৈতিক আবহাওয়া কিছুটা বদলেছে এখানে। এখন খুনোখুনি নেই বললেই চলে। কারও বিশেষ জোর খাটানোর জায়গা নেই। তা ছাড়া, এ বার শাসক দল নানা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ায় ধাক্কা খাচ্ছে ভাবমূর্তি। এই পরিস্থিতিতে ভোটারদের উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করতেই নতুন এই কৌশল বলে মনে করছেন অনেকে।
প্রচারের এই নয়া কৌশলের কথা মানছেন তৃণমূলের আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা যুব সভাপতি পলাশ রায়। তবে, কারও অসম্মতিতে ওই স্টিকার সাঁটা হচ্ছে না বলে তাঁর দাবি। এর জেরে সাধারণ ভোটারদের একাংশ যে ভীত-সন্ত্রস্ত থাকতে পারেন, তা-ও মানছেন না তিনি। তাঁর কথায়, “এমন কোনও অভিযোগ বা আশঙ্কার কথা উঠলে সেটা ব্যতিক্রমী। সেটা বাংলার মানুষের কণ্ঠস্বর নয়। কারণ, বাংলার হয়ে লড়াইয়ের এই কর্মসূচিতে আমরা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে মানুষের সাড়া পাচ্ছি।”
স্টিকার সাঁটছে বিজেপিও। তবে, সেখানে কোনও ভোটারের নাম থাকছে না। তৃণমূলের প্রচার কৌশল নিয়ে বিজেপির আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিমান ঘোষ বলেন, “তৃণমূল ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াতেই নাম লিখে স্টিকার সাঁটছে। আমরাও বাড়ি বাড়ি ‘আবার একবার, মোদী সরকার’ লেখা স্টিকার সাঁটছি। তিন ধরনের লিফলেট বিলি করছি। তবে, কারও নাম খোদাই, ছবি তুলে ভয় দেখানোর দরকার হচ্ছে না।” সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায় বলেন, “স্টিকার সাঁটার ঘটনা নতুন নয়। তবে, এ বার তৃণমূল নাম লিখে ভোটারকে ‘আমার লোক’ বলে চিহ্নিত করে দিতে চাইছে। সচেতন মানুষের কিন্তু ভয় পাওয়ার আর বিশেষ জায়গা নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy