সল্টলেকে পদযাত্রায় নৃত্যশিল্পীদের সঙ্গে যোগ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। শনিবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।
রোড-শো। শো-ই বটে। বাঙালি-অবাঙালি ভোটারদের মেলানোর এক অদম্য প্রয়াস।
শেষ বিকেলে উল্টোডাঙা উড়ালপুলের নীচে যেন বাঙালি-অবাঙালির মেলবন্ধন ঘটানো হল। গরবা-ডান্ডিয়ার সঙ্গে মিলে গেল বাংলার ছৌ নাচ, খোল ও ঢাকের বাদ্য। কখনও ডান্ডিয়া শিল্পীদের সঙ্গে লাঠিতে লাঠি বাজাতে, কখনও আবার ছৌ শিল্পীদের হাত ধরে ছন্দে পা মেলাতে দেখা গেল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। শনিবার সল্টলেকে মুখ্যমন্ত্রীর রোড শো-এর সমাপ্তিটা ছিল এমনই তাৎপর্যপূর্ণ।
রাজনৈতিক মহলের ধারণা, বাঙালি-অবাঙালি সংস্কৃতির এমন শৈল্পিক মেলবন্ধনের আসল উদ্দেশ্য, সল্টলেক তথা বিধাননগরের অবাঙালি ভোটকে যতটা সম্ভব নিজেদের দিকে নিয়ে আসা। কারণ, ইতিহাস বলছে, লোকসভা ভোটে বরাবরই সিংহভাগ অবাঙালি ভোট শাসকদলের দিকে যায় না। বাম থেকে তৃণমূল, দুই আমলেই একই অবস্থা। বারাসত লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে রয়েছে বিধাননগর। দলীয় প্রার্থী কাকলি ঘোষদস্তিদারকে নিয়ে এ দিন রোড-শো করেন মুখ্যমন্ত্রী। হেলিকপ্টারে বিএফ-সিএফ পার্কে নামার পরে দুই যুযুধান শিবিরের নেতা সব্যসাচী দত্ত ও সুজিত বসু এবং মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী, মন্ত্রী রথীন ঘোষ, নিউ টাউনের বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রায় তিন কিলোমিটার হেঁটে সল্টলেকের এক নম্বর গেটের কাছে থামেন।
গত লোকসভা ভোটে বিধাননগরে প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার ভোটে হেরেছিলেন তৃণমূল প্রার্থী তথা তিন বারের বারাসতের সাংসদ কাকলি। বিধানসভা ভোটেও মূল সল্টলেক, এমনকি, দত্তাবাদেও বিজেপির প্রার্থী হয়ে সব্যসাচী দত্ত তৃণমূলের প্রার্থী সুজিত বসুর চেয়ে ভোট বেশি পেয়েছিলেন। যার নেপথ্যে অবাঙালি ভোটের প্রভাব একটা বড় কারণ বলেই মনে করে বিধাননগরের রাজনৈতিক মহল। যে কারণে এ বার শুরু থেকেই অবাঙালি ভোটের অভাব পূর্ণ করতে বাঙালি ভোটের উপরেও বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে শাসক দল। কোথাও কোথাও দলীয় বিধায়কের নাম করে লোকসভায় তৃণমূল প্রার্থীকে জেতানোর আহ্বানে দেওয়াল লিখনও দেখা গিয়েছে। খবর এমনই যে, অবাঙালি ভোট টানতে লোকসভা ভোটে মুখ্যমন্ত্রীর সল্টলেকে উপস্থিতি জরুরি বলে তাঁর কাছে বার্তাও পাঠানো হয়।
এ দিন সল্টলেকে মুখ্যমন্ত্রীর রোড-শো চলাকালীন তাঁর পিছনে প্রথম সারিতেই রাখা হয় গরবা ও ডান্ডিয়া শিল্পীদের। তার পরে ছিল ছৌ, খোল ও ঢাক। অবাঙালি সমাজের তরফে দীপু শর্মার নেতৃত্বে মুখ্যমন্ত্রীর যাত্রাপথে কোথাও কোথাও লাল কার্পেট বিছিয়ে দেওয়া হয়। অবাঙালি মহিলাদের দেখা যায়, মুখ্যমন্ত্রীর গলায় উত্তরীয় পরিয়ে হাতে স্মারক তুলে দিতে। যদিও এই কৌশল নিয়ে বিধাননগরের তৃণমূল নেতৃত্ব কিছু বলতে চাননি। অবশ্য রোড-শো শেষে বাগুইআটির একটি জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী অবাঙালিদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘আজ আপনারা আমাকে এত সম্মান দিয়েছেন। আমিও আপনাদের একটি অনুরোধ করছি। আমরা দেখি না, কে পঞ্জাবি, কে শিখ, কে কী। আপনারা বাংলা আর দিল্লিকে কেন আলাদা করে দেখেন। আমরা বাংলায় বসে দিল্লি গড়তেও পারি, দিল্লি বাঁচাতেও পারি।’’
বাগুইআটির ওই সভায় তিনি যান দমদমের প্রার্থী সৌগত রায়ের হয়ে প্রচারে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজারহাট-গোপালপুরের বিধায়ক অদিতি মুন্সীর উদ্যোগে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ওই সভার আয়োজন হয়েছে। সেখানে কবি নজরুলের জন্মজয়ন্তীও পালন করেন মুখ্যমন্ত্রী। ৪৪ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে এ দিন তাঁর সভাকে কেন্দ্র করে ভিআইপি রোডের এক দিক বন্ধ করে দেয় পুলিশ। অন্য দিক দিয়ে গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করায় যানবাহনের গতিও শ্লথ হয়ে যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy