—প্রতীকী চিত্র।
কেশপুর থেকে কত ব্যবধানে দেবকে জেতাতে হবে, ভোটের কয়েক দিন আগে কেশপুরে এসে সেই লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। জনসভায় তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘২০১৯ সালে প্রায় ৯০ হাজারের বেশি ব্যবধানে দেবকে জিতিয়েছিলেন। এবার ব্যবধানটা এক লক্ষ করতে হবে। এক লক্ষের বেশি ব্যবধানে খালি কেশপুর থেকেই জেতাতে হবে।’’
ভোটের দিন কেশপুরে দফায় দফায় বিজেপি প্রার্থী হিরণ চট্টোপাধ্যায়ের পথ আটকেছে তৃণমূলের লোকেরা। লাঠিসোটা নিয়ে তাঁকে তাড়াও করেছে। এমনকি, মুগবসানের মতো এলাকা থেকে বিজেপি প্রার্থীকে ফিরতেও হয়েছে। কেশপুরের পথে হিরণ আটকেছেন বারেবারে, তৃণমূলের এক লাখি লিড তাহলে নিশ্চিত? সংশয় তৃণমূলের অন্দরে। তৃণমূলের নেতারা প্রকাশ্যে দাবি করছেন, লিড এক লাখ ছাড়াবে! তবে ভিতরে ভিতরে বেসুরো একাংশ নেতা! দলের এক নেতার কথায়, ‘‘ভোট ভাল হয়েছে। লিডও ভালই হবে। তবে এক লাখ হবে কি না, নিশ্চিত নই!’’ বিজেপিরও দাবি, তৃণমূলের এক লাখের লিডের স্বপ্ন এ বার সফল হবে না! তৃণমূলের লিড কত হতে পারে? কেশপুরের এক বিজেপি নেতার কথায়, ‘‘খুব বেশি হলে ৬০ হাজার লিড পেতে পারে ওরা। এর বেশি নয়। লিড কমে ৪০- ৪৫ হাজারও হতে পারে।’’
হিরণকে আটকানোর তৃণমূলী- কৌশল সে ভাবে কাজে লাগেনি তাহলে? ওই বিজেপি নেতার কথায়, ‘‘তৃণমূলের বাইক বাহিনী, লুঙ্গি বাহিনী হিরণের একটা ফাঁদে পা দিয়ে দিয়েছে! ভোটের দিনে হিরণ কিন্তু সে ভাবে সংখ্যালঘু বুথে ঢোকেনি। তবে ওঁকে আটকানোর জন্য ওরা ওদের যেখানে যা বাইক বাহিনী, লুঙ্গি বাহিনী ছিল, ভোট- ম্যানেজমেন্ট বাদ দিয়ে, তাদের সবাইকে মুগবসানের মতো কয়েকটি এলাকায় এনে জমায়েত করিয়েছিল। বাকি এলাকায় তারা দাপাতে পারেনি। সেখানে কিন্তু নির্বিঘ্নে ভোট হয়েছে।’’ কেশপুরে ১৫টি অঞ্চল। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, অন্তত ৬টি অঞ্চলে বিজেপিই লিড পাবে। এক বিজেপি নেতার কথায়, ‘‘এনায়েতপুরে লিড নিশ্চিত। চার- সাড়ে চার হাজার লিড হবে আমাদের। মিলিয়ে নেবেন!’’
কেশপুরের বেশ কিছু এলাকায় তৃণমূলের প্রভাব বেশি। বিশেষত, সংখ্যালঘু প্রভাবিত অঞ্চলে। আবার কিছু এলাকায় বিজেপির প্রভাব রয়েছে। ভোটের দিন হিরণকে বিজেপি প্রভাবিত এলাকায় বেশি ঘুরতে দেখা গিয়েছে। তিনি তৃণমূল প্রভাবিত এলাকায় সে ভাবে যাননি। দলীয় সূত্রের দাবি, কৌশলগত কারণেই হিরণ সংখ্যালঘু অঞ্চলে সে ভাবে যাননি। তৃণমূলের দেব দু’বারের সাংসদ। ২০১৪ এ তিনি কেশপুর থেকে প্রায় ১ লক্ষ ১৭ হাজার ভোটের লিড পেয়েছিলেন। ২০১৯ এ প্রায় ৯২ হাজার ভোটের লিড পেয়েছিলেন। ভোটের দিন বিজেপি প্রার্থী তৃণমূলের বিক্ষোভের মুখে প্রথম পড়েন খেড়ুয়াবালিতে। তৃণমূলের অবরোধে এখানে ঘন্টা খানেক আটকে থাকতে হয়েছে তাঁকে। পরে মুগবসানে গিয়ে প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে হিরণকে। এখানে তৃণমূলের কয়েকশো লোকের জমায়েত ছিল।
এক লাখি লিডের সঙ্গে কেশপুর যেন জুড়ে রয়েছে! সালটা ২০০১। সে বার বিধানসভা ভোটে কেশপুর থেকেই রাজ্যের মধ্যে সবথেকে বেশি ‘লিড’ পেয়েছিল সিপিএম। প্রায় ১ লক্ষ ৮ হাজার! রাজ্য- রাজনীতিতে শোরগোল পড়েছিল। তৎকালীন বিরোধী তৃণমূল প্রশ্ন তুলেছিল, অবাধ ভোটে কী এত লিড সম্ভব? ওই ভোটপর্বেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘কেশপুর, সিপিএমের শেষপুর’। ২০১৬ সালের বিধানসভায় এখানে তৃণমূলের লিড ছিল প্রায় ১ লক্ষ ১ হাজার। গত পঞ্চায়েত ভোটের নিরিখে তৃণমূলের লিড প্রায় ১ লক্ষ ৬৯ হাজার! যা রাজ্যে অনেকটা বেনজির। রাজ্যে সরকারে যে, কেশপুরে সে, বরাবর এটাই হয়ে এসেছে। কেশপুর নামটার সঙ্গেই লেপ্টে রয়েছে রাজনীতির হানাহানি, সন্ত্রাস। গ্রাম দখলের সংঘর্ষ, দুষ্কৃতীদের দাপট। একবগ্গা রাজনীতি দেখে অভ্যস্ত পশ্চিম মেদিনীপুরের এই জনপদ। একদা লাল- দুর্গ। অধুনা সবুজ- গড়।
রাজনৈতিক মহল মনে করাচ্ছে, বাম এবং তৃণমূল- দুই আমলের গত কয়েকটি বিধানসভা ভোটের মধ্যে গত একুশের ভোটেই সবচেয়ে কম মার্জিনে জয়- পরাজয় নির্ধারণ হয়েছে এখানে। একুশের ভোটে তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৫১ শতাংশ। বিজেপির ৪২ শতাংশ। আর সিপিএমের ৬ শতাংশ। প্রায় ২১ হাজার ভোটে এখানে জিতেছিল তৃণমূল। কেশপুরে ২৮২টি বুথ। বিজেপির এজেন্ট ছিল ১০০- টিরও কম বুথে। তাও স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, তৃণমূল যতটা লিড ভাবছে, ততটা পাবে না। তৃণমূলের লোকেরা ভেবেছিল একদমই কেউ ভোট দিতে যাবে না! সেটা কিন্তু হয়নি। বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল। ফলে, বুথের মধ্যে দেদার ছাপ্পা করতে পারেনি তৃণমূলের বাহিনী। ঘাটাল জেতার আশায় দু’দলই। হিরণ শুনিয়েছেন, ‘‘তৃণমূলের বাহিনী যত সন্ত্রাস করেছে, বিজেপি তত বেশি ভোটে জিতবে এখানে।’’ জয়ের মার্জিন কত হবে? দেব শুনিয়েছেন, ‘‘আজকের দিনে জেতাটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কত মার্জিনে, সেটা নয়। আমরা নিশ্চিত, মানুষের রায় আমাদের দিকেই থাকবে। দেখাই যাক না কী হয়! মানুষ রায় দিয়ে দিয়েছেন। ৪ জুন রায়টা জানতে পারব।’’ কেশপুরে ভোটদানের হার ৮২ শতাংশের কিছু বেশি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy