অমিত শাহ। —ফাইল চিত্র
দেশে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের সাহায্য চাইলেন অমিত শাহ। তাঁর আশা, বিজেপিকে ৩৭০-এ পৌঁছে দিতে পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা এবং দক্ষিণ ভারত বড় ভূমিকা নেবে।
আনন্দবাজার পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শাহ শনিবার শিলিগুড়িতে জানান, এ বারে দলের জন্য যে লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, তা পূরণ করতে এই রাজ্য থেকে তাঁরা ৩০-৩২টি আসন পাবেন বলেই তাঁদের আশা। তবে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ যে ভাবে দাবি করছেন যে, ৩০ বা তার বেশি আসন পেলে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকার পড়ে যাবে, তাতে সায় নেই শাহের। তিনি জানান, বিজেপি কোনও সরকার ফেলায় বিশ্বাসী নয়। তবে তার পরেই তাঁর ছোট্ট মন্তব্য, ‘‘অবশ্য তৃণমূল যদি ভেঙে যায়, তা হলে আলাদা কথা।’’
তৃণমূল প্রায়ই কটাক্ষ করে যে, গত বিধানসভায় ২০০ আসনের কথা বলে ১০০ আসনও পায়নি বিজেপি। সেখানে এ বার তিনি ৩০-৩২টি আসনের কথা বলছেন কী ভাবে? শাহের জবাব, “গত লোকসভা নির্বাচনে ২১টি আসন জয়ের কথা বলেছিলাম। ১৮টি পেয়েছিলাম।”
শনিবার ঘণ্টাখানেকের কথোপকথনে অমিত শাহ রাজ্যের সঙ্গে সংযুক্ত একাধিক বিষয় নিয়েই মুখ খুলেছেন। তার মধ্যে যেমন রয়েছে সরকার ফেলে দেওয়ার প্রসঙ্গ, তেমনই তলে তলে তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির কোনও সমঝোতা হয়েছে কি না, সেই প্রশ্নও। বিরোধী, বিশেষ করে বাম-কংগ্রেস জোট বার বার এই বিষয়টির উপরে জোর দিচ্ছে প্রচারে। তাদের দাবি, ‘সেটিং’ হয়ে গিয়েছে দুই দলে, তাই তৃণমূলের শীর্ষ স্তরের আর কাউকে গ্রেফতার করছে না ইডি বা সিবিআই।
এমন ডিল কি সত্যিই কিছু হয়েছে? না হলে বিরোধীরা যেমন প্রশ্ন করছেন, অরবিন্দ কেজরীওয়ালকে যেখানে গ্রেফতার করা হচ্ছে, সেখানে তৃণমূলের শীর্ষ স্তরের নেতারা এই মুহূর্তে ছাড় পাচ্ছেন কী করে?
জবাবে অমিত শাহ জোরের সঙ্গে বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ‘ডিল’-এর কোনও প্রশ্নই নেই। এই সরকারকে শিকড়সুদ্ধ উপড়ে ফেলাই বিজেপির একমাত্র লক্ষ্য।’’ তিনি যোগ করেন, ‘‘যে সরকার ভোট রাজনীতির জন্য সন্দেশখালির মতো ঘটনা চলতে দেয়, তাদের সঙ্গে ‘ডিল’-এর কোনও প্রশ্নই নেই।’’
এর আগেই শাহ জানিয়েছিলেন, ৩৭০টি আসনের লক্ষ্যপূরণে দক্ষিণের একাধিক রাজ্যের সঙ্গে বাংলার উপরেও জোর দিচ্ছেন তাঁরা। কিন্তু ৩০ বা তার বেশি আসন পেলেও তাঁরা সরকার বা বিপক্ষ দল, কোনওটাই ভাঙবেন না বলেই শাহের দাবি। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল যদি ভেঙে যায়, তবে আলাদা কথা। তবে আমরা কোনও দলকে ভাঙাই না।’’
তা-ই যদি না ভাঙানো হয়, তা হলে ইডি-সিবিআইয়ের তদন্তের চাপ দিয়ে বিভিন্ন দল থেকে নেতাদের বিজেপি নিজেদের দলে নিয়ে আসছে বলে বিরোধীরা কেন বার বার অভিযোগ তুলছেন? কেন তাঁরা বলছেন, বিজেপি হল ‘ওয়াশিং মেশিন’? সেখানে গিয়েই নাকি সব অভিযুক্ত নেতা সাফসুতরো হয়ে যাচ্ছেন। জবাবে শাহ বলেন, ‘‘এমন কিছুই এখনও পর্যন্ত ঘটেনি। যাঁরা অন্য দল থেকে বিজেপিতে এসেছেন, তাঁদের কোনও মামলাই বন্ধ হয়নি।’’ কিন্তু প্রফুল্ল পটেল বা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে যাবতীয় তদন্ত বন্ধ হয়ে গিয়েছে বা তদন্ত থমকে গিয়েছে বলে যে বিরোধীরা অভিযোগ তুলছেন? শাহ বলেন, ‘‘কোনও তদন্ত বন্ধ হয়নি। সব মামলা আদালতে আছে।’’ প্রফুল্ল পটেল যদি একটি মামলায় ছাড় পেয়ে থাকেন, তো তাঁর অন্য আরও চারটি মামলা চলছে। একই ভাবে তিনি ইঙ্গিত করেন, নারদ বা সারদা মামলাও বন্ধ হয়নি।
রাজ্যে বিজেপির সঙ্গীদের নিয়েও কটাক্ষ করছেন বিরোধীরা। বিমল গুরুং বা অনন্ত মহারাজ, দু’জনেই পশ্চিমবঙ্গ ভাগের দাবি তুলেছেন বার বার। এই নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব শুধু কটাক্ষ করেই থেমে থাকেননি, প্রচারও করেছেন বিজেপির বিরুদ্ধে। গুরুং বরাবরই বিজেপির জোটসঙ্গী। মাঝে কিছু দিন ছাড়াছাড়ি হলেও ফের তিনি এ বারে লোকসভা ভোটের আগে রাজু বিস্তার হাত ধরেছেন। আজ, রবিবার পাহাড়ে অমিত শাহের সভাতেও তাঁকে দেখা যেতে পারে বলে সূত্রের খবর। অনন্তকে তো এই রাজ্য থেকেই রাজ্যসভায় পাঠিয়েছে বিজেপি। তা হলে কি দল রাজ্য ভাগকে সমর্থন করে?
শাহের স্পষ্ট মত, ‘‘পশ্চিমবঙ্গকে ভাগ করার কোনও অ্যাজেন্ডা বিজেপির নেই।’’ তা হলে এই সঙ্গীরা যে বার বার দাবি তুলছেন? শাহ বলেন, ‘‘সঙ্গীরা তাদের দাবি তুলবে, বিজেপি নিজের বিচার-বিবেচনা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবে।’’ তার পরে মুচকি হেসে তাঁর মন্তব্য, ‘‘ওঁরা তো ওঁদের দাবি জানিয়েছেন। সবাই তো নিজেদের দাবি জানাতেই পারেন। আপনারা কি এমন দেশ চান যেখানে কোনও দাবিই কেউ জানাবে না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy