গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
ভোটের প্রচারে দেশের মধ্যে এগিয়ে বাংলা। এ রাজ্যে প্রায় ১ লক্ষ সভা, মিছিল-সহ নানা কর্মসূচি হয়েছে। নির্বাচন কমিশন যা জানিয়েছে, আর কোনও রাজ্যে ভোটের প্রচারে এত বেশি সভা, মিছিল হয়নি। বৃহস্পতিবার শেষ দফার প্রচার শেষের পরে কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলায় কর্মসূচি করতে চেয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সংগঠনের তরফে ১ লক্ষ ১৯ হাজার ২৭৬ আবেদন জমা পড়ে। তার মধ্যে ৯৫ হাজার আবেদনের অনুমতি দেওয়া হয়। রাজ্যের মধ্যে আবার সব চেয়ে বেশি প্রচার হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়। সেখানে ১০,৬৮৮টি কর্মসূচি হয়েছে। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা।
১৬ মার্চ, ২০২৪। অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচন ঘোষণার দিনটা ছিল শনিবার। ওই দিন সন্ধ্যা থেকেই চালু হয়ে যায় আদর্শ নির্বাচনী আচরণ বিধি। একই সঙ্গে শুরু হয়ে যায় নির্বাচনের ‘আনুষ্ঠানিক’ প্রচার পর্ব। আনুষ্ঠানিক এই কারণে, তার আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল ভোটের প্রচার। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কমিশনের ঘোষণার অপেক্ষায় না-থেকে রাজ্যের বিভিন্ন আসনে যাওয়া শুরু করে দিয়েছিলেন। একই ভাবে ঘুরছিলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। ভোট ঘোষণার আগে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও এ রাজ্যে চারটি সভা করে ফেলেছিলেন।
ভোট ঘোষণার আগেই প্রার্থিতালিকা প্রকাশ করে দিয়েছিল তৃণমূল। ১০ মার্চ ব্রিগেডের সমাবেশ থেকেই ৪২ আসনের প্রার্থীর নাম জানিয়ে দেন তৃণমূল নেতৃত্ব। বিজেপি এক বারে পারেনি। তবে প্রার্থিতালিকা প্রকাশ শুরু করে দিয়েছিল ২ মার্চ থেকেই। ফলে ভোট ঘোষণার আগে রাজ্যের ৪২ আসনে তৃণমূল এবং ২০ আসনে বিজেপি প্রচার শুরু করে দেয়। তবে সেটাকে হিসাবের মধ্যে না-ধরাই ভাল। কারণ, পরীক্ষা শুরুর ঘণ্টা নির্বাচন কমিশন বাজিয়েছিল ১৬ মার্চ সন্ধ্যা হওয়ার আগে আগে। সে দিন থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা— টানা ৭৫ দিন ধরে চলেছে প্রচারের তাপ-উত্তাপ। তীব্র দহনে যেমন প্রচার হয়েছে, তেমনই বৃষ্টির ভ্রুকুটির মধ্যেও। মাঝে এসেছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। জলমগ্ন হয়ে পড়ে অনেক জায়গা। তবু ভোট ‘বড় বালাই’। রাজনৈতিক নেতাদের প্রচার থেকে দমিয়ে রাখতে পারেনি প্রকৃতিও।
বাংলায় এ বার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এসেছেন বটে, তবে মোদীর থেকে অনেক কম। বালুরঘাট, মালদহ, বাঁকুড়া, বীরভূম-সহ ১৫টি আসনে গিয়েছেন। সমাবেশ ছাড়াও কয়েকটি রোড-শো করেছেন। একই রকম পরিসংখ্যান দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডার। শেষের আগের দিন কলকাতা দক্ষিণে একটি রোড-শো করেছেন তিনি। আর সেই দিনেই রাজ্যে ভোট ঘোষণার পরে ১৯তম সভাটি করেছেন মোদী। তিনি প্রথম সভা করেছিলেন উত্তরবঙ্গের কোচবিহার শহরে। আর শেষটা করলেন দক্ষিণতম প্রান্ত কাকদ্বীপে। মাঝে সব আসনের প্রার্থীর হয়েই সমাবেশ করেছেন তিনি। কলকাতা উত্তর এবং দমদমের জন্য সভার পরিবর্তে রোড-শো করেন। এ বার প্রথম নির্বাচনী প্রচারে এসে কলকাতায় রাত্রিবাসও করেছেন মোদী। তবে একটি সভা করার কথা থাকলেও সেটা করতে পারেননি মোদী। আবহাওয়া খারাপ থাকায় ঝাড়গ্রামের সভা থেকেই মোদী হলদিয়ার সমাবেশের উদ্দেশে বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রী তো বটেই, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ-সহ বিজেপির শাসনে রয়েছে, এমন ছয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও প্রচারে এসেছেন বাংলায়। সবচেয়ে বেশি বার এসেছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। এ ছাড়াও কয়েক জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও এসেছেন বাংলায়। দ্বিতীয় দফায় নিজের আসন বালুরঘাটে ভোট ছিল সুকান্তের। ফলে তৃতীয় দফা থেকেই অন্য আসনে প্রচারে নামেন তিনি। শেষ পাঁচ দফায় সর্বত্র গেলেও এ ব্যাপারে অনেক এগিয়ে শুভেন্দু। বিজেপির হিসাব অনুযায়ী ৭৫ দিনের মধ্যে ৭৪ দিন প্রচারে ছিলেন বিরোধী দলনেতা। সভা আর রোড-শো মিলিয়ে সংখ্যাটা দেড়শোর আশপাশে। তবে রেমালের জন্য গত রবিবার প্রচারে বার হননি তিনি। বিজেপির তারকা প্রচারে সে দিনটা ‘রেনি-ডে’ ছিল। তবে সেই দিনেও প্রচারে বার হন মমতা। যাদবপুর ও কলকাতা উত্তরে কর্মসূচি ছিল তাঁর। তৃণমূল সূত্রে যে তথ্য মিলেছে তাতে মমতার প্রচার সভা ও রোড-শোয়ের মিলিত সংখ্যা ১০৭ আর অভিষেকের ৭২।
শেষ দিনের প্রচারে সুকান্ত গিয়েছিলেন দমদম আসনের বরাহনগরে। এর পরে যান যাদবপুরের নরেন্দ্রপুরে। আর শুভেন্দু সকাল থেকে বিকেলে চার আসনে। প্রথমে বারাসতে রোড-শো। এর পরে বসিরহাটে সমাবেশ। শেষ দিনের প্রচারে কলকাতা দক্ষিণে রোড-শো করার কথা ছিল শাহের। কিন্তু তিনি যে আসছেন না, তা আগেই জানিয়ে দেয় বিজেপি। শাহের পরিবর্তে কলকাতা দক্ষিণে রোড-শো করেন শুভেন্দু। পরে কলকাতা উত্তরেও। এ দিন অভিষেক অবশ্য নিজের আসন ডায়মন্ড হারবারেই ছিলেন।
বামেদের হয়ে প্রচারে যেমন সীতারাম ইয়েচুরি, বৃন্দা কারাতরা এসেছেন তেমনই কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গেও এসেছেন বাংলায়। তবে তাঁরা সে ভাবে দাগ কাটতে পারেননি। শেষ দিনের প্রচারেও সে ভাবে উল্লেখযোগ্য ছিল না বাম-কংগ্রেস জোটের প্রচার। তবে শেষ দিনে মমতা নজর কেড়ে নিয়েছেন টানা ১২ কিলোমিটার পদযাত্রা করে। যাদবপুরের প্রার্থী সায়নী ঘোষ আর কৃষ্ণনগরের প্রার্থী মহুয়া মৈত্রকে পাশে নিয়ে যাত্রা শুরু করেন মমতা। যাদবপুরের সুকান্ত সেতু থেকে কলকাতা দক্ষিণেও প্রবেশ করে এগিয়ে যান তিনি। শেষ হয় গোপালনগরে। কলকাতা দক্ষিণের ৬৯ নম্বর ওয়ার্ডেও প্রচার ছিল মমতার। বিকেলে সেখানে ফুটবলে লাথি মারলেন। স্লোগান উঠল— ‘খেলা হবে’। তখনও খেলার সময় হাতে ছিল। কমিশন ইনজুরি টাইম দেয় না। তাই মুখ্যমন্ত্রী মিনিট ২৫ হাতে থাকতেই বাড়ির পথ ধরেন। ঘড়ির কাটা ছ’টার ঘর ছোঁয়ার আগে আগেই সুকান্ত, শুভেন্দু এবং শেষ দিনের প্রচারে কলকাতায় কাটানো মিঠুন চক্রবর্তীও ঘরমুখো।
অপেক্ষা আরও দুটো দিনের জন্য। সপ্তম দফায় রাজ্যের ন’টি আসনে ভোটগ্রহণ জুনস্য প্রথম দিবসে। তার পরে আসল অপেক্ষা। নির্বাচনে কার মঙ্গল, কার অমঙ্গল, জানা যাবে আগামী মঙ্গলেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy