(বাঁ দিকে) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ইউসুফ পাঠান (ডান দিকে)। —গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।
একদম সিনেমার মতো। থ্রিলার যেমন হয়। টানটান! ব্রিগেডের মাঠে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠানের বৈঠক ছিল তেমনই। সিনেমার মতো। থ্রিলার। টানটান।
সকাল ১১টা ৫৬ মিনিটে অভিষেক পৌঁছে গিয়েছিলেন ব্রিগেডে। কিন্তু মঞ্চে ওঠেননি তৃণমূলের সেনাপতি। মূল মঞ্চের পিছনে একটি তাঁবু ছিল। সেখানে ঢুকে যান অভিষেক। তার আগেই সেখানে জড়ো হয়েছিলেন প্রার্থীরা। তাঁদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেন তিনি। তত ক্ষণে তৃণমূলের তরফে মোটামুটি বলেই দেওয়া হয়েছে, ব্রিগেডের মঞ্চ থেকেই লোকসভার প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। এবং ৪২টি কেন্দ্রেই।
সেই বৈঠক চলতে চলতেই থ্রিলারের শুরু। তখন বেলা ১২টা ৩৪ মিনিট। আচমকাই ব্রিগেডের মঞ্চের পিছনে প্রায় নিঃশব্দে এসে দাঁড়ায় একটি এসইউভি। কালো রঙের হুন্ডাই আল্টুরাজ়। যে তাঁবুতে অভিষেক বৈঠক করছিলেন, তার সামনেই দাঁড় করানো ছিল একটি ‘ট্রাভেলার’। তাতে ‘জনগর্জন সভা’র স্টিকার সাঁটা। ট্রাভেলারের দরজার সামনে এসে দাঁড়ায় কালো এসইউভি। ট্রাভেলারের দরজার একেবারে পাশে এসইউভি-র পিছনের দরজা। অঙ্ক কষে। দু’টি গাড়ির মধ্যে সামান্য ফাঁক। এসইউভি-র সামনের আসন থেকে নেমে এক জন দাঁড়িয়ে পড়েন। সম্ভবত দৃশ্যপট আড়াল করতে। পিছনের আসন থেকে নেমে সোজা ট্রাভেলারে ঢুকে যায় একটা অবয়ব— ইউসুফ পাঠান। চকিতে। এক মিনিটের মধ্যে তাঁবু থেকে বেরিয়ে আসেন অভিষেক। উঠে যান ট্রাভেলারে।
অভিষেকের সঙ্গেই ট্রাভেলারে ওঠেন তাঁর আপ্তসহায়ক সুমিত রায়। ১২টা ৪৪ নাগাদ দরজা খোলে ট্রাভেলারের। বেরিয়ে আসেন সুমিত। তিনি নামতেই ফের বন্ধ হয়ে যায় দরজা। তার পর আরও চার মিনিট বন্ধ গাড়িতে কথা বলেন অভিষেক-ইউসুফ। তখন মোটামুটি হাওয়ায় রটে গিয়েছে যে, ‘চমক’ আসছে। ১২টা ৪৮ মিনিটে ট্রাভেলার থেকে নেমে মঞ্চের দিকে রওনা দেন অভিষেক। যে সময়টা তিনি ইউসুফ পাঠানের সঙ্গে কথা বলছিলেন, সেই সময়টা বক্তৃতা করে জনতাকে ব্যস্ত রাখতে হয় মন্ত্রী শশী পাঁজাকে। তার পর থেকে ওই এসইউভি-তেই ছিলেন অতীতের তারকা ক্রিকেটার। বহরমপুরের প্রার্থী হয়ে যিনি আবির্ভূত হবেন র্যাম্পে।
আগে ফোনে কথা হলেও রবিবারই প্রথম অভিষেক-ইউসুফ মুখোমুখি দেখা হল। আর বৈঠক হল গাড়িতে। সংক্ষিপ্ত সেই বৈঠকেই ইউসুফ ভোটে লড়তে চূড়ান্ত সম্মতি দিয়ে দেন। এমনিতে অভিষেকের বেশি ভালবাসার খেলা ক্রিকেট। ইউসুফের ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, তিনি রাজনীতিতে আসবেন-আসবেন করছিলেন। কিন্তু কিছু জায়গায় খেদোক্তি করেছিলেন যে, তেমন ‘সুযোগ’ পাচ্ছেন না। অবশেষে সেই সুযোগ এল।
তবে অভিষেকের সঙ্গে ইউসুফ মঞ্চে ওঠেননি। তিনি ছিলেন গাড়িতেই। যাতে ‘চমক’ বজায় থাকে শেষমুহূর্ত পর্যন্ত। ইউসুফের সঙ্গে বৈঠকের পরে মঞ্চে উঠে এদিক থেকে ওদিকের র্যাম্প হয়ে মঞ্চে ফেরেন অভিষেক। মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলে তিনি জনতার উদ্দেশে বলছেন, ‘‘জয় বাংলা!’’ আর তিনটি মঞ্চের পটভূমিতে বিশাল ভিডিয়ো ওয়ালের এলইডি স্ক্রিনে ভেসে উঠছে সেই ছবি।
অভিষেকের ভাষণ চলতে চলতেই মঞ্চে প্রবেশ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তখন বলতে বলতে কর্ডলেস মাইক্রোফোন হাতে মঞ্চ থেকে র্যাম্পে চলে গিয়েছেন অভিষেক। মঞ্চে এসে মমতা প্রথমে হাত নাড়েন। শুনতে পাচ্ছেন অভিষেক বলছেন। কিন্তু তাঁকে দেখতে পাচ্ছেন না মঞ্চে। ইশারা দেখে মনে হল, মঞ্চের নেতাদের কাছে মমতা জানতে চাইছিলেন, অভিষেক কই? মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তারক্ষী আঙুল উঁচিয়ে দেখালেন, ওই যে অভিষেক!
আয়োজনে চমক তো ছিলই। ওই রকম মঞ্চ, র্যাম্প, ডলবি আল্ট্রা ডিজ়িটাল সাউন্ড— সব মিলিয়ে ময়দানে যেন রবিবার দুপুরে বসন্তের ‘ইভেন্ট’ হয়ে গেল! যে ইভেন্টে রাজনৈতিক বক্তৃতা হল, লক্ষ্মণদাস বাউলের গানে নেচে উঠল জনতা। আবার স্লোগানে গলা মেলাল মাঠ। মমতা বক্তৃতা শুরুর আগেই ঘোষণা করে দিয়েছিলেন, ব্রিগেড সমাবেশ থেকেই সব প্রার্থীর নাম ঘোষণা হবে। তার পর তাঁদের নিয়ে তিনি র্যাম্পে হাঁটবেন তিনি। হলও তাই। অনেকের মতে, রবিবার তৃণমূলের ব্রিগেড একটি বিষয় দেখাল— র্যাম্পওয়াক এখন আর শুধু ফ্যাশনের সঙ্গে যুক্ত বিষয় রইল না। জুড়ে গেল রাজনীতির সঙ্গেও।
সব দিক থেকেই ব্রিগেড ছিল চমকের। যে ভাবে প্রযুক্তি পরিকাঠামো রাখা হয়েছিল, তা-ও ব্রিগেডের ইতিহাসে ‘নজিরবিহীন’ বলেই মত অনেকের। মঞ্চের চৌহদ্দিতেই দফায় দফায় উড়ল অন্তত সাতটি ড্রোন। মাঠের বিভিন্ন প্রান্তে আরও অনেক। এক সময় দেখা গেল, অনেক ড্রোন উড়তে দেখে কাকের দলও তার আশেপাশে ভিড় করেছে! ঠিকই। ‘পাখির চোখে’ ব্রিগেডের জমায়েত দেখানোর জন্যই আয়োজন! শুধু ড্রোন? তৃণমূলের পেজে লাইভ কভারেজের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে অন্তত পাঁচটি ‘জিমি জিপ’ (ছোট ক্রেনে লাগানো ক্যামেরা)। মাঠের বিভিন্ন প্রান্তে ছিল আরও অজস্র ক্যামেরা।
কিন্তু ‘চমকের চমক’ সম্ভবত সেই ইউসুফই। মমতার বক্তৃতার শেষে যখন প্রার্থীদের নাম ঘোষণা হচ্ছে, তখন গাড়ি থেকে নেমে মঞ্চে ওঠেন বিশ্ব ক্রিকেটের এই ‘বিগ হিটার’। অভিষেক ঘোষণা করেন, বহরমপুরে তৃণমূলের প্রার্থী প্রাক্তন কেকেআর তারকা। অর্থাৎ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে লড়বেন তিনি। ঘোষণার পরে ইউসুফও র্যাম্পে হাঁটেন। ঘাটালের প্রার্থী দেব বাদ দিয়ে সকলেই ছিলেন র্যাম্পওয়াকে। কেউ গটগট করে হেঁটেছেন। রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়, জুন মালিয়াদের মতো অভিজ্ঞদের হাঁটা নজর কেড়েছে অনেকের। নজর কেড়েছে মহুয়া মৈত্রের হাঁটা, দু’দিকে তাকিয়ে হাত নাড়া এবং নমস্কার জানানো। শত্রুঘ্ন সিংহ, আবু তাহের খানদের অন্যদের সাহায্য নিতে হয়েছে হাঁটতে। তবে মমতার হাঁটা দেখে অনেকেই বলেছেন, কে বলবে কয়েক মাস আগে পায়ের সমস্যার কারণে দীর্ঘ দিন গৃহবন্দি ছিলেন!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy