—প্রতীকী ছবি।
পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না বিধানসভা কেন্দ্রের বাকচা এলাকায় এক বিজেপি কর্মীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়াল এলাকায়। নিহত যুবকের নাম দীনবন্ধু মিদ্যা (১৮)। তাঁর বাড়ি বাকচার গোড়ামহল গ্রামে। বৃহস্পতিবার রাতে বাড়ি থেকে খানিকটা দূরে একটি পানের বরজের ভিতর থেকে ওই যুবকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এলে তাদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখান এলাকার বাসিন্দারা। ওই যুবককে খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে এলাকাবাসীর দাবি। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। লোকসভা ভোটের সময়ে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়িয়েছে জেলায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার দিনভর এলাকাতেই ছিলেন দীনবন্ধু। তবে সন্ধ্যার কিছু পরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান তিনি। সে সময় তাঁর পরনে ছিল ঘরোয়া ধুতি। সঙ্গে মোবাইলও ছিল। তবে রাত গড়ালেও দীনবন্ধুর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতে পারেননি তাঁর পরিবারের সদস্যেরা। এর পরেই তাঁর খোঁজ শুরু হয় এলাকায়। রাত্রি প্রায় ১১টা নাগাদ বাড়ি থেকে সামান্য দূরের একটি পানবরজের ভিতরে দীনবন্ধুর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। পরনের ধুতির কিছু অংশ ছিঁড়ে সেটি দিয়েই পানবরজের উপরে থাকা একটি লোহার রডের সঙ্গে বাঁধা ছিল তাঁর দেহ। ধুতির বাকি অংশ পাশেই পড়ে ছিল।
মৃতের পরিবারের দাবি, দেহটি ঝুলে থাকলেও হাঁটু মোড়া অবস্থায় মাটিতে লেগে ছিল। সেই সঙ্গে দীনবন্ধুর হাঁটুতে রক্তও দেখতে পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। দীনবন্ধুকে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে বলেই দাবি পরিবারের। দীনবন্ধুর মা হেনারানি মিদ্যা বলেন, “ছেলেটা সন্ধ্যা ৭টার পর স্নান সেরে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। রাত্রি ৯টা নাগাদ ফোন করে বলল বাড়িতে এসে ভাত খাবে। তার কিছু সময় পর থেকেই আর ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর আমরা থানায় গিয়ে নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ জানাই। এর পরেই পুলিশ ছেলের ফোনের টাওয়ার লোকেশান ধরে রাত্রিবেলায় বাড়ি থেকে কিছু দূরের পানবরজের ভিতর ছেলের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করল।”
হেনারানির দাবি, রাজনৈতিক কারণেই তাঁর ছেলেকে খুন করা হয়েছে। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, “আমরা বিজেপি করি বলেই প্রতিনিয়ত এলাকার তৃণমূলের কিছু লোক আমার বাড়িতে এসে হামলা চালায়, মারধর করে। আগে বোমাও মেরেছে। ওরাই আমার নিরীহ ছেলেটাকে মেরে ঝুলিয়ে দিয়েছে।” খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে ছুটে যান বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সম্পাদক তথা হলদিয়ার বিধায়ক তাপসী মণ্ডল। তাপসী বলেন, “মৃত দীনবন্ধুর পরিবারের বাবা, কাকারা সকলেই বিজেপির স্থানীয় কর্মী হিসেবে পরিচিত।” তাপসীর কথায়, “ছেলেটির নাম এখনও ভোটার তালিকায় ওঠেনি। তবে তাঁর মৃতদেহটি যে ভাবে উদ্ধার হয়েছে, তা থেকে স্পষ্ট যে, তাঁকে মেরে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় উপযুক্ত তদন্তের দাবিতে পুলিশে অভিযোগ জানানো হচ্ছে।” যদিও এই ঘটনার সঙ্গে তাঁদের কোনও সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব।
বিজেপির অবশ্য দাবি, গত বুধবার থেকেই নিখোঁজ ছিলেন দীনবন্ধু। নিহত যুবকের বাবা সুদর্শন মিদ্যা দলের সক্রিয় কর্মী বলে দাবি করেছে বিজেপি।
ময়না থানার তরফে জানানো হয়েছে, ঘটনার খবর পেয়ে রাতেই এলাকায় গিয়ে মৃতদেহটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। কী ভাবে এই মৃত্যু, তা জানতে দেহটিকে শুক্রবার তাম্রলিপ্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে আসার পরেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সেই সঙ্গে মৃতের পরিবারের তরফে কোনও অভিযোগ এলে তা-ও তদন্ত করে দেখা হবে বলে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে।
আগেও রাজনৈতিক কারণে সংবাদ শিরোনামে এসেছে ময়না। গত বছর মে মাসে এই বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপির বুথ কমিটির সভাপতি বিজয়কৃষ্ণ ভুইয়াঁ (৬০)-কে খুনের অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি এই খুনের মামলায় জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-কে দিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy