সন্দেশখালিতে রাজনৈতিক সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার দুপুরে বিজেপি-র এক প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। ওই দলে ছিলেন মীনাক্ষি লেখি, মুখতার আব্বাস নাকভি, বাবুল সুপ্রিয়, সিদ্ধার্থনাথ সিংহ, সুরিন্দর সিংহ অহলুওয়ালিয়া, রাহুল সিংহ, শমীক ভট্টাচার্য-সহ বিজেপি-র অন্য নেতারা। তাঁরা এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি দলীয় কর্মী-সমর্থকদেরও দেখতে যান।
গত ২৬ মে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শপথগ্রহণের দিন রাজনৈতিক সংঘর্ষ বাধে উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালিতে। ওই ঘটনায় এক পুলিশকর্মী-সহ ২১ জন বিজেপি কর্মী ও চার জন তৃণমূল কর্মী আহত হন।
শনিবার সাংবাদিক বৈঠকে বিজেপি নেতৃত্ব জানান, মু্খ্যসচিবের সঙ্গে দেখা করে তাঁরা খুশি নন। এ দিন বিজেপি নেতা মুখতার আব্বাস নাকভি বলেন, “ আইনশৃঙ্খলা নেই রাজ্যে। সারা রাজ্যে অরাজকতার সরকার চলছে। রাজ্যে সরকার সন্ত্রাসে মদত দিচ্ছে।” দিল্লি গিয়ে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, এবং কেন্দ্রীয় তফসিলি জাতি ও উপজাতি কমিশনের কাছে তাঁরা সবিস্তার রিপোর্ট জমা দেবেন বলে জানান বিজেপি নেতৃত্ব।
এ দিন স্থানীয় হালদারপাড়া ভেড়ির পূর্ব রামপুর আদিবাসী প্রাথমিক স্কুলে দাঁড়িয়ে আসানসোলের বিজেপি-সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় বলেন, “এখানে গুন্ডা দিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে তৃণমূল। পুলিশ আপনাদের নিরাপত্তা দেবে না। সিপিএমের আমলে নিজেদের যে ভাবে রক্ষা করেছিলেন, সেই ভাবে রুখে দাঁড়ান।” আদিবাসী সমাজের মানুষের উপর এমন আক্রমণের পরেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘটনাস্থলে কেন এলেন না, তা নিয়েও এ দিন প্রশ্ন তোলেন বাবুল। তিনি বলেন, “আমরা আপনাদের পাশে আছি। মনে রাখবেন, একটা লাঠিকে ভাঙা সহজ। কিন্তু ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়ালে ওরা পালানোর পথ পাবে না।”
ওই দিন সন্ধ্যায় গ্রামের বিজেপি সমর্থকেরা বিজয়োত্সব করছিলেন। ওই সময়ে তৃণমূল সমর্থকদের বাড়িতে বাজি ফাটানোর অভিযোগে দু’পক্ষের মধ্যে বচসা ও মারামারি হয়। এই ঘটনার জেরে পর দিন সকালে আরও এক প্রস্থ মারামারি হয় দু’পক্ষের মধ্যে। প্রতিবাদে ধামাখালি রোড অবরোধ করেন বিজেপি সমর্থকেরা। অভিযোগ, পুলিশের সামনেই তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা গুলি-বোমা নিয়ে চড়াও হয় বিজেপি সমর্থকদের উপর।
এ দিন দুপুর ২টো নাগাদ ৪৭টি গাড়ির কনভয় নিয়ে হালদার পাড়া ভেড়িতে যান বিজেপি নেতৃত্ব।। সকাল থেকে শুরু হয়েছিল বৃষ্টি। তা সত্ত্বেও সেখানে কয়েকশো বিজেপি কর্মী-সমর্থক হাজির ছিলেন। বাগদিপাড়া, ঝুপখালি, বেড়মজুর-সহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ ভিড় করেন। তাঁরা বিজেপি নেতৃত্বের কাছে আবেদন জানান, ‘আপনারা আমাদের বাঁচান। পুলিশ কিছু করছে না। আপনার চলে গেলেই হামলা শুরু করবে তৃণমূল।”
প্রতিনিধি দলের সদস্যেরা সকলের সঙ্গে কথা বলেন। বিজেপি নেতা মীনাক্ষি লেখি বলেন, “স্বাধীনতার ৬৭ বছর পরেও এখানে কোনও উন্নয়ন হয়নি। ভয়, আতঙ্ক আর গরুর খোয়াড়ে পরিণত হয়েছে গোটা এলাকা।” ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহ করা কার্তুজ দেখিয়ে তিনি বলেন, “পুলিশ কার্তুজগুলো সংগ্রহ করেনি। আমি মর্মাহত।” আদিবাসী-সংখ্যালঘু মানুষের উপর এত বড় আক্রমণ হওয়া সত্ত্বেও মাত্র তিন জন গ্রেফতার হয়েছে বলেও এ দিন বিস্ময় প্রকাশ করেন মীনাক্ষিদেবী।
বছর তিনেকের মেয়ে প্রিয়াকে দেখিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ছায়া সর্দার বলেন, “বাড়িতে ঢুকে ওরা আমার স্বামীকে গুলি করে। মেয়েকে লাথি মেরে জলে ও আমাকে ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে দেয়। এখন হুমকি দিচ্ছে, তৃণমূল না করলে গ্রামছাড়া করবে।”
তাঁদের আশ্বস্ত করে দার্জিলিঙের বিজেপি-সাংসদ সুরিন্দর সিংহ অহলুওয়ালিয়া বলেন, “এত বড় একটা অন্যায় হল। অথচ রাজ্যের তফসিলি জাতি ও উপজাতি কমিশনের কোনও প্রতিনিধি এখানে এলেন না!” মুখ্যমন্ত্রীর ছত্রছায়ায় দুষ্কৃতীরা রয়েছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, “এ সব বরদাস্ত করা যাবে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy