বিজেপি প্রার্থী দেবেন্দ্র ফড়নবিশের জয়ে নাগপুরে দলীয় কর্মীদের উল্লাস। ছবি: পিটিআই।
বুথ ফেরত সমীক্ষাকে সত্যি করে হরিয়ানায় পদ্ম ফুটল। মহারাষ্ট্রেও শতাধিক আসনে জিতে সাফল্য পেল বিজেপির ‘একলা চলো’ নীতি।
রবিবার বেলা যত গড়িয়েছে ওই দুই রাজ্যে নির্বাচনী ফলের চিত্রটা ততই স্পষ্ট হয়েছে। মহারাষ্ট্রে বিপুল জয় পেয়েছে বিজেপি। অন্য দিকে, সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে হরিয়ানায় সরকার গড়তে চলেছে তারা। হরিয়ানার চিত্রটা পুরোপুরি স্পষ্ট হয়ে গেলেও মহারাষ্ট্রের ক্ষেত্রে কিছুটা ধোঁয়াশা রইল। কারণ, এ রাজ্যে ‘ম্যাজিক ফিগার’-এ পৌঁছতে হলে বিজেপির দরকার ১৪৫টি আসন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাজ্যে দল হিসাবে বিজেপি প্রথম স্থানে উঠে এলেও ‘ম্যাজিক ফিগার’ ছুঁতে খানিকটা বেগ পেতে হবে তাদের। সে ক্ষেত্রে একমাত্র পথ শিবসেনার সঙ্গে জোট তৈরি করা। আসন ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে বিজেপি-শিবসেনার দীর্ঘ ২৫ বছরের সম্পর্কে ছেদ পড়ে। অন্য দিকে, একই ছবি দেখা যায় কংগ্রেস-এনসিপি জোটের মধ্যে। লোকসভা নির্বাচনে ভাল ফল করার পর মহারাষ্ট্র বিধানসভা দখলে ‘একলা চলো’ নীতি নেন বিজেপি নেতৃত্ব। কংগ্রেস পরিচালিত সরকারের বিরুদ্ধে দুনীর্তির অভিযোগ তুলে জোট ভাঙে শরদ পওয়ারের এনসিপি-ও। ফলে পাঁচমুখী লড়াইয়ের পরিস্থিতি তৈরি হয়। বিজেপি, শিবসেনা, কংগ্রেস, এনসিপি এবং এমএনএস— এই পাঁচমুখী লড়াইয়ে পাল্লা ভারী কার সেই নিয়ে প্রাক-নির্বাচন এবং নির্বাচন পরবর্তী সময়েও জল্পনা ছিল তুঙ্গে।
জোট ভাঙার পর নির্বাচনী প্রচারে বিজেপিকে প্রবল আক্রমণ করে শিবসেনা। পাল্টা আক্রমণের পথে না গিয়ে বিজেপি নেতৃত্ব জানিয়েছিলেন, বাল ঠাকরের প্রতি সম্মান এবং শ্রদ্ধার কারণে পাল্টা আক্রমণের পথ নেওয়া হয়নি। বিশ্লেষকদের মতে, এই কৌশলে বিজেপি প্রচ্ছন্ন ভাবে শিবসেনার সঙ্গে জোট করার একটা রাস্তা তখনই খোলা রেখেছিল। তা ছাড়া কেন্দ্রে শিবসেনার সঙ্গে বিজেপির সম্পর্ক অটুট রয়েছে। এখন দেখার সরকার গড়তে শিবসেনার সঙ্গে হাত মেলায় কি না বিজেপি। তবে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব এ দিন জানিয়েছেন, পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হয়েছে, পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে তা দলের সংসদীয় বৈঠকের পর ঠিক হবে। পরই। এ দিন সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে জানান, রাজ্যে স্থায়ী সরকার গঠনে যে কোনও ধরনের প্রস্তাব মেনে নিতে রাজি তাঁর দল। সে ক্ষেত্রে বিজেপি যদি এনসিপি-র সমর্থন নেয় তাতেও আপত্তি নেই। তবে তিনি এ কথা স্পষ্ট করেন যে, বিজেপির তরফ থেকে তাঁর কাছে সমর্থনের জন্য কোনও প্রস্তাব আসেনি।
দুই রাজ্যে বিজেপির চমকপ্রদ ফলের পর সাংবাদিক বৈঠকে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি তথা এই জয়ের কারিগর অমিত শাহ বলেন, “মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানাবাসীর প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। তাঁরা বিজেপির উপর আস্থা রেখেছেন।” তিনি আরও বলেন, “দেশকে কংগ্রেসমুক্ত করাই বিজেপির একমাত্র লক্ষ্য। এই জয়ের মধ্য দিয়ে সেই পথে আরও দু’ধাপ এগোল দল। উপ-নির্বাচনের ফল দেখে যাঁরা ভেবেছিলেন মোদী ম্যাজিক উধাও হয়ে গিয়েছে, দুই রাজ্যের নির্বাচনী ফল ফের প্রমাণ করল তাঁদের ধারণা ভুল।”
শিবসেনার হাত ধরা নিয়ে বিজেপিকে ঘিরে এই জল্পনা যখন তুঙ্গে ঠিক তখনই সরকার গঠনে বাইরে থেকে বিজেপিকে সমর্থনের প্রস্তাব দিল এনসিপি। এ দিন দলের তরফে প্রফুল্ল পটেল এই কথা ঘোষণা করেন। তবে শিবসেনা না এনসিপি, আগামী চিত্র কী হবে তা ঠিক হবে বিজেপির সংসদীয় বৈঠকের পরই।
অন্য দিকে, ‘মোদী সুনামি’-তে উড়ে গেল হরিয়ানার হুডা সরকার। ওই রাজ্যের মোট ৯০টি আসনে নির্বাচন হয় গত ১৫ অক্টোবর। রাজ্যের নির্বাচনী ফল নিয়ে প্রথম থেকেই আশাবাদী ছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। মহারাষ্ট্রের মতোই এখানে আত্মবিশ্বাস, পরিশ্রম এবং রাজ্যবাসীর আস্থার উপর ভর করে ভোট ময়দানে নেমেছিল বিজেপি। সেই পরিশ্রম ও আস্থায় গতি এনেছিলেন নরেন্দ্র মোদী স্বয়ং। পরিববর্তে বিজেপির হাতে এল রাজ্য চালানোর ক্ষমতা। হবে না-ই বা কেন! লোকসভা নির্বাচনের সময় যে ‘মোদী ম্যাজিক’ দেশবাসী দেখেছিল, এ বার হরিয়ানার ক্ষেত্রেও সেই একই ছোঁয়া। বলা যায়, হরিয়ানায় পদ্ম ফোটাতে এ বারও মূল কাণ্ডারি ‘মোদী ম্যাজিক’।
এ দিন বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হরিয়ানায় এক দিকে যেমন পাল্লা ভারী হয়েছে বিজেপি, অন্য দিকে ক্রমশ কোণঠাসা হয়েছে আইএনএলডি। নির্বাচনের আগে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী ছিল হুডা সরকার। পূর্ববর্তী নির্বাচনগুলিতে জাঠ সম্প্রদায়ের কাঁধে ভর করে ক্ষমতায় আসে আইএনএলডি। কিন্তু যত দিন গড়িয়েছে ততই দুর্নীতির জালে জড়িয়েছে হুডা সরকার। সেই সুযোগকে এ বার কাজে লাগিয়ে সাফল্য পেল বিজেপি। সেই সঙ্গে জাঠ সম্প্রদায় ও ডেরা সাচ্চা সওদার মতো প্রভাবশালী সংগঠনের সমর্থন মেলায় রাজ্যে আইএনএলডি-কে ‘ফুত্কারে’ উড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে বিজেপি। আইএনএলডি-র শোচনীয় পরাজয়ের পর বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী ভূপিন্দর সিংহ হুডা দলের হয়ে পরাজয়ের দায় স্বীকার করে নেন। তিনি বলেন, “রাজ্যের নতুন সরকারকে স্বাগত জানাই। আশা করি তারা হরিয়ানার উন্নতিতে যথেষ্ট তত্পরতা দেখাবেন। এটা গণতন্ত্র। গত বার আমাদের পালা ছিল, এ বার বিজেপির।” তবে বিজেপির এই জয় যে ‘মোদী সুনামি’র কারণেই সে কথা স্বীকার করেননি তিনি।
জয়ের উল্লাসে...
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy