সাইকোলজিস্ট না সাইকিয়াট্রিস্টদের মধ্যে পার্থক্য। গ্রাফিক্স ছবি
‘মনের হদিশ কেউ জানে না, সেও জানে না যে ধারণ করে’ । এর চেয়ে বড় সত্যি আর কী বা হতে পারে! বর্তমানের চূড়ান্ত কর্মব্যস্ত সময়ে ক্রমাগত ছোটাছুটির মধ্যে মনকে সুস্থ রাখাটাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যক্তিগত পরিসর এবং কর্মক্ষেত্রের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে গিয়ে বিপর্যস্ত হচ্ছে মন। দেখা যাচ্ছে স্ট্রেস, অ্যাংজাইটি, ডিপ্রেশন-এর মতো বিভিন্ন মানসিক অসুস্থতার প্রকোপ। আর তাই সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়েবাড়ছে মনোবিদ এবং মনোচিকিৎসকের চাহিদাও। তবে প্রায়ই দেখা যায়, অনেকেই মনোবিদ (সাইকোলজিস্ট) এবং মনোচিকিৎসক (সাইকিয়াট্রিস্ট)-এর পেশা দু’টিকে গুলিয়ে ফেলেন। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করলেও দু’টি পেশার মধ্যে যে গুরুত্বপূর্ণ ফারাক রয়েছে, তা অনেকেরই জানা নেই। স্কুলের পড়াশুনো শেষ করে যাঁরা এই পেশা দু’টি বেছে নিতে চান, তাঁদের জন্য এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
মনোবিদ এবং মনোচিকিৎসকদের মধ্যে পার্থক্য:
প্রথমে বুঝতে হবে, দু’টি বিষয় এবং বিশেষজ্ঞের মধ্যে পার্থক্য। সাইকোলজি বা মনস্তত্ত্ব বিষয়টি মানুষের মন, অনুভূতি এবং ব্যবহারিক দিক নিয়ে আলোচনা করে। প্রাথমিক ভাবে দর্শনের একটি শাখা হলেও ১৮০০ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে সাইকোলজি বিষয়টি আলাদা একটি বিষয় হিসাবে জায়গা করে নেয়। সাইকোলজিস্টরা বিভিন্ন সামাজিক পরিস্থিতি কী ভাবে মানুষের প্রতিক্রিয়া এবং ব্যবহারিক দিককে প্রভাবিত করে, তা খতিয়ে দেখে। একই সঙ্গে মানুষকে বিভিন্ন আচরণগত সমস্যা এবং মানসিক অসুস্থতা কাটিয়ে ওঠার জন্য সাইকোথেরাপির মাধ্যমে নানারকম পন্থা বাতলে দিয়ে সাহায্য করেন।
অন্য দিকে, সাইকিয়াট্রি বা মনোরোগবিদ্যা হল চিকিৎসাবিজ্ঞানের একটি শাখা যা, বিভিন্ন মানসিক স্বাস্থ্যব্যাধি চিহ্নিতকরণ এবং চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করে। সাইকিয়াট্রিস্টদের তাই মানুষের আত্মা বা হৃদয়ের চিকিৎসক বলা হয়। সাইকোলজিস্টদের মতোই সাইকিয়াট্রিস্টরাও সাইকোথেরাপির সাহায্য নেয়। তবে মানসিক অসুস্থতার জন্য যে জৈবিক কারণগুলি দায়ী, তা বুঝে নিয়ে ওষুধের সাহায্যে সেগুলি সরিয়ে তোলে সাইকিয়াট্রিস্টরাই।
শিক্ষাগত চাহিদা এবং প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে পার্থক্য:
মনোবিদ হওয়ার জন্য পড়ুয়াদের সাইকোলজিতে ব্যাচেলর্স, মাস্টার্স এবং ডক্টরেট ডিগ্রির প্রয়োজন। এ ছাড়াও, বেশ কিছু বছরের পেশাদারি অভিজ্ঞতারও প্রয়োজন রয়েছে। অন্য দিকে, মনোচিকিৎসক হওয়ার জন্য এমবিবিএস-এর পর ১ বছরের ইন্টার্নশিপ এবং তার পর সাইকিয়াট্রিতে এমডি ডিগ্রি থাকতে হবে। এর পর সাইকিয়াট্রিস্ট হিসাবে লাইসেন্স পাওয়ার পর কোনও সরকারি হাসপাতালে ন্যূনতম ৪ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এই সময়ে তাঁদের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকবেন সিনিয়র ফিজিশিয়ানরা। এর পর তাঁরা নিজেরা আলাদা ভাবেও রোগী দেখতে পারেন।
চিকিৎসার ক্ষেত্রে পার্থক্য:
মনোবিদেরা সাধারণত সাইকোথেরাপির মাধ্যমে রোগীদের চিকিৎসা করেন। সাইকোথেরাপির যে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে মনোবিদেরা চিকিৎসা করেন, সেগুলি হল: সাইকোঅ্যানালিসিস এবং সাইকোডাইনামিক থেরাপি, কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি, হিউম্যানিস্টিক থেরাপি, হোলিস্টিক থেরাপি ইত্যাদি। কোনওরকম ওষুধ ছাড়া রোগীদের সুস্থ করার জন্যই কাজ করেন এঁরা। সাধারণত আলাদা ভাবে রোগীদের দেখলেও, অনেক সময় গ্রুপ থেরাপির মাধ্যমেও চিকিৎসা করা হয়।
অন্য দিকে, সাইকিয়াট্রিস্টরা সাধারণত ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসার উপরেই বেশি ভরসা রাখেন। জীবনবিজ্ঞান, নিউরোকেমিস্ট্রি-র ব্যাপারে সম্যক জ্ঞান থাকায় মস্তিষ্কে নানারকম নিউরোকেমিক্যাল ভারসাম্যহীনতা, পারিবারিক ইতিহাস, চিকিৎসাসংক্রান্ত ইতিহাসও যে মানসিক অসুস্থতার জন্য দায়ী , তা এঁরা বুঝতে পারেন। তবে, শুধু ওষুধ নয়, প্রয়োজনে চিকিৎসার জন্য থেরাপিরও সাহায্য নেন এঁরা।
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটিয়ে সুস্থ এবং কর্মমুখী জীবন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এই দুই পেশার মানুষের অবদানই অনস্বীকার্য। এমনকি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই দুই পেশার মানুষকে হাতে হাত মিলিয়ে চলতে হয়। তাই দু’টি পেশা এবং বিষয়ের পার্থক্য ভালভাবে বুঝে নিয়ে পড়ুয়ারা তাঁদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতে পারেন। সেই মতো কোনও পড়ুয়া চিকিৎসাবিজ্ঞান না হিউম্যানিটিজ-এর দু’টি পৃথক শাখা নিয়ে কলেজ স্তরে পড়াশুনো করবেন, সেই বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy