দেশের গবেষক এবং শিক্ষকদের উন্নত মানের গবেষণাপত্রের খোঁজ দিতে গড়ে তোলা হয়েছিল ইউজিসি-কেয়ার (ইউনিভার্সিটি গ্রান্টস কমিশন-কনসর্টিয়াম ফর অ্যাকাডেমিক অ্যান্ড রিসার্চ এথিক্স) জার্নাল লিস্ট বা তালিকা। এ বার এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ভাবে আর হস্তক্ষেপ করবে না বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। গবেষণাপত্রের উৎকর্ষতা যাচাই করে তার তালিকা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হল বিভিন্ন আঞ্চলিক কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়কে।
দেশে বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণার কাজ আন্তর্জাতিক মানের করে তুলতে ২০১৮ সালে ইউজিসি-কেয়ার নামক জার্নাল তালিকা গড়ে তোলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক থেকে শিক্ষকদের কথা ভেবেই গড়ে তোলা হয় এই তালিকা। যা তাঁদের কর্মক্ষেত্রেও নানা ভাবে সাহায্য করত। কিন্তু এ বার নিজেদের বেশ কিছু গাফিলতির কথা স্বীকার করে এই তালিকা তুলে দেওয়ার কথা ঘোষণা ইউজিসির। এখন থেকে দেশের আঞ্চলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলিই তাদের তরফে উন্নত মানের গবেষণাপত্র নিয়ে জার্নাল তালিকা তৈরি করবে। জার্নালে গবেষণাপত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে কোন কোন মানদণ্ডের ভিত্তিতে গবেষণার কাজ যাচাই করা হবে, তা-ও জানিয়ে দিয়েছে কমিশন।
আরও পড়ুন:
কমিশন জানিয়েছে, গত কয়েক বছরে ইউজিসি কেয়ার জার্নাল লিস্টে গবেষণাপত্র বাছাইয়ের ক্ষেত্রে তাদের বেশ কিছু গাফিলতি হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, এ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যবস্থাটাই ভীষণ ভাবে কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়েছে। উন্নত মানের গবেষণাপত্র প্রকাশের পাশাপাশি নিম্ন মানের কাজও এই তালিকায় স্থান পেয়েছে। অর্থাৎ খারাপ-ভালর তুল্যমূল্য যাচাইয়ে ভুল থেকে গিয়েছে। তালিকা থেকে বাদ পড়েছে আঞ্চলিক ভাষায় প্রকাশিত আন্তর্জাতিক মানের একাধিক গবেষণাপত্র। রয়েছে অস্বচ্ছতার অভিযোগও। তাই এই ব্যবস্থায় বদল আনতেই বিকেন্দ্রীভূত করা হচ্ছে সম্পূর্ণ বিষয়টি। আঞ্চলিক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকেই জার্নালের তালিকা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া সেই সূত্রেই।
এ প্রসঙ্গে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক শুভজিৎ নস্কর বলেছেন, “ইউজিসি যে উদ্দেশ্যে এই ইউজিসি কেয়ার জার্নাল লিস্ট তৈরি করেছিল, তা গত কয়েক বছরে যথাযথ ভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। সে ক্ষেত্রে ইউজিসি তাদের ব্যর্থতার দায় স্বীকার করায় আমি সাধুবাদ জানাচ্ছি। কিন্তু এই বিকেন্দ্রীভূত ব্যবস্থায় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে এই দায়িত্ব তুলে দিয়ে কমিশন নিজেদের দায় এড়াতে চাইছে বলেই আমার ধারণা।” তিনি জানিয়েছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে এমনি নিত্যনৈমিত্তিক বহু কাজের জন্যই ইউজিসি কোনও ফান্ডিং দিচ্ছে না। তার মধ্যে এই জার্নাল তালিকা তৈরি এবং প্রকাশ করতে যা খরচ হবে, তা-ও যদি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়কেই বহন করতে হয়, সে ক্ষেত্রে খুব সমস্যা হবে। ইউজিসি ইচ্ছে করেই দায় এড়াতে চাইছে বলে ধারণা ওই অধ্যাপকের।
উল্লেখ্য, কমিশন জানিয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে জার্নাল লিস্ট তৈরির জন্য ওয়েবসাইট খুলতে হবে, যার জন্য ‘ডোমেন' কেনা প্রয়োজন। এর পরে ‘এডিটোরিয়াল বোর্ড’ গঠন করা হবে, যারা বেছে নেবে উৎকৃষ্ট মানের গবেষণাপত্র। সে ক্ষেত্রে গবেষণাপত্রের মান কেমন, সমস্ত নৈতিক নিয়মবিধি মানা হয়েছে কি না, কী উদ্দেশ্যে ও কোন বিষয়ে গবেষণার কাজ হয়েছে, তা যাচাই করে দেখতে হবে। এর জন্য বোর্ড গঠন করা, প্রুফরিডার, এডিটর, রিভিউয়ার নিয়োগ এবং অন্যান্য কাজে বেশ খানিকটা অর্থব্যয় হবে। সে ক্ষেত্রে ইউজিসি কোনও অর্থ সাহায্য করবে কি না, তা তাদের তরফে এখনও স্পষ্ট ভাবে জানানো হয়নি।
এই নিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওমপ্রকাশ মিশ্র বলেন, “ইউজিসি-র সাম্প্রতিক কাজকর্মে নানা অসামঞ্জস্য এবং স্ববিরোধ দেখা যাচ্ছে। উচ্চশিক্ষায় প্রগতি ও বিকাশের নামে নানা স্বেচ্ছাচারী আচরণ করছে তাঁরা। এক দিকে, ইউজিসি কোনও ফান্ডিং দিচ্ছে না। অন্য দিকে, নানাবিধ নির্দেশিকা জারি করে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে বিড়ম্বনায় ফেলছে।”