Advertisement
E-Paper

হিন্দু স্কুলের প্রাচীন ভবন নিয়ে জটিলতা, প্রশ্নের মুখে সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত

হিন্দু স্কুলের ওয়েস্ট ব্লকের ভবনে বঙ্গীয় সংস্কৃত শিক্ষা পরিষদের কাজ চলত। সেই ভবনটিকে টোল হস্তান্তরের সময় সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেওয়া হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্তে জেরে শুরু হয়েছে বিতর্ক।

Sanskrit University.

সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২৫ ১৪:৪২
Share
Save

কলকাতা পুরসভার তরফে হিন্দু স্কুলের এলাকা চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে। সেই স্কুলের ওয়েস্ট ব্লকের ভবনটিতে বঙ্গীয় সংস্কৃত শিক্ষা পরিষদের কাজ চলত। ওই ভবনটি পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ কমিশনের তরফে ২০১৬-তে ‘প্রাচীনতম ভবন’ হিসাবে চিহ্নিতও করা হয়েছে। অথচ মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে বঙ্গীয় সংস্কৃত শিক্ষা পরিষদের অধীনে ৪০০-র বেশি টোল সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে স্থানান্তরের প্রক্রিয়ায় হিন্দু স্কুলের ওই ভবনটিকেও রাখা হয়েছে। অথচ এই হস্তান্তরের বিষয়ে কোনও সরকারি নির্দেশিকা পায়নি হিন্দু স্কুল কর্তৃপক্ষ।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভ্রজিৎ দত্তের আরও অভিযোগ, একটি প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়ের তকমা পাওয়ায় খানিকটা জোর করেই ওই ভবন হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছে। অথচ ওই ভবনে নিয়মিত ভাবে স্কুলের পঠনপাঠন এবং প্রশাসনিক বৈঠক করা হয়। ১৯৬৪ সালে হিংসার সময় হিন্দু স্কুলের ভিতর অফিস করার জন্য অস্থায়ীভাবে ওই ভবনে জায়গা দেওয়া হয়েছিল বঙ্গীয় সংস্কৃত শিক্ষা পরিষদকে। সেই সময় থেকেই পরিষদের কাজ ওই ভবন থেকে পরিচালিত হয়। ওই ভবন যে স্কুলের অধীনে, তার যথাযথ নথিও কর্তৃপক্ষের কাছে রয়েছে। এ ছাড়াও রাজ্যের হেরিটেজ কমিশনের তকমা পাওয়া ওই ভবন হস্তান্তর করার কোনও যুক্তিযুক্ত কারণ কিংবা প্রশাসনিক নির্দেশিকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে নেই। তাই সরকারি নির্দেশিকা পেলে বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা হবে।

The Heritage Commission's plaque on the ancient building of the Hindu School.

হিন্দু স্কুলের প্রাচীন ভবনের ফলকে হেরিটেজ কমিশনের তকমা। নিজস্ব চিত্র।

ওই ভবনে স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষকের মূর্তি রয়েছে। ওই ভবনটিই হিন্দু স্কুলে প্রাচীনতম ভবন। অথচ এই বিষয়টি জানা নেই সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রাজকুমার কোঠারির। তিনি বলেন, ‘‘এই বিষয়ে কোনও বিতর্ক চাই না আমরা। যতদূর জানি, ওটা আগে সংস্কৃত কলেজ বর্তমানে সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি। যদিও তা প্রমাণ করার মতো যথাযথ নথি নেই। এই বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা দফতর, হেরিটেজ কমিশন, সরকার যা সিদ্ধান্ত নেবে, তাই মেনে নেওয়া হবে।’’

উল্লেখ্য, চলতি বছরে সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রাজ্যে ৪০০-র বেশি টোল হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর আগে ১৯৪৯ থেকে বঙ্গীয় সংস্কৃত শিক্ষা পরিষদের অধীনে থাকা রাজ্য সরকার, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত এবং বেসরকারি টোলগুলি থেকে পাঠদান এবং পরীক্ষা সম্পর্কিত বিষয়গুলি পরিচালনা করা হত। যদিও ২০০৭ সালের পর থেকে শতাব্দী-প্রাচীন টোলগুলিতে পরীক্ষা হয়নি। ‘আদ্য’, ‘মধ্য’-র মতো পরীক্ষা (মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক সমতুল্য পরীক্ষা) বন্ধ থাকায় দীর্ঘদিন উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন টোলের পড়ুয়ারা।

উল্লেখ্য, সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে তরফে ৪০০-র বেশি টোলের পাঠ্যসূচির মানোন্নয়ন, পরীক্ষা ব্যবস্থা চালু করার জন্য সরকারি সহযোগিতা আর্জি জানানো হয়। এই মর্মে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতি নেওয়ার কাজও শুরু হয়। এর পরই আনুষ্ঠানিক ভাবে চলতি বছরের ২১ মার্চ বঙ্গীয় সংস্কৃত শিক্ষা পরিষদের থেকে সমস্ত টোলকে সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে হস্তান্তর করা হল।

২০১৫-তে বিশেষ আইনের অধীনে রাজ্য সরকারের তরফে সংস্কৃত কলেজ থেকে সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী, এই সমস্ত টোল গুলির দায়িত্বভার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হাতেই থাকার কথা। এর জন্য ২০১৯ সালে রাজ্যের কাছে বিশ্ববিদ্যালয় ‘স্ট্যাটুট’ও তৈরি করে পাঠায়। বঙ্গীয় সংস্কৃত শিক্ষা পরিষদ স্কুল শিক্ষা বিভাগের অধীনে কর্মরত হওয়ায় টোলগুলি হস্তান্তর আইনি জটিলতায় সম্পূর্ণ হয় না। তবে শেষ পর্যন্ত এই জটিলতা শেষ হওয়ায় টোলগুলিকে পরীক্ষা ব্যবস্থার অধীনে আনতে বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে না, এমনটাই আশা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।

এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার মনিশঙ্কর মণ্ডল জানিয়েছেন, সরকারের সহযোগিতায় সমস্ত আইনি এবং প্রশাসনিক জটিলতা কাটিয়ে এই হস্তান্তরের ফলে সংস্কৃত শিক্ষার প্রসার এবং প্রচারের পথ প্রশস্ত হল। দ্রুতই বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে সমস্ত টোলকে পুনরুজ্জীবিত করে পরীক্ষা ব্যবস্থার আওতায় আনা হবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}