জাপানি শিল্পীদের আঁকা ছবি মিউজিয়ামে প্রদর্শন। নিজস্ব চিত্র।
ভারত ও জাপানের চিত্রকলার সাংস্কৃতিক ইতিহাসের নিদর্শনকে সামনে রেখে নবরূপে সেজে উঠল জোড়াসাঁকো রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় জাপানি মিউজিয়াম। জাপানি চিত্রকলার অন্যতম কৌশল হল নিহঙ্গা। ঠাকুর বাড়ির হাত ধরে এই নিহঙ্গা বা জাপানি ‘ওয়াশ টেকনিক’ বাংলা চিত্রশিল্পীদের মনে আলাদা ভাবে দাগ কেটেছিল। তেমনই বাংলার সংস্কৃতিও জাপানি চিত্র শিল্পীদের উদ্ভূত করেছিল। উদাহরণ হিসেবে, জাপানি বধূদের শাড়ি পড়ার চিত্র এই মিউজিয়ামে স্থান পেয়েছে।
জাপানি মিউজিয়ামের মূল আকর্ষণ হল ‘ইন্ডিয়ান ইনফ্লুয়েন্স অফ জাপানিজ পেইন্টিং।’ চিত্রকলার এই বিশেষ কৌশলে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলেন গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মুকুল দেব, বিনোদ বিহারী ও নন্দলাল বসুরা। একই ভাবে জাপানিজ চিত্র শিল্পীরাও বাংলার সংস্কৃতিকে রঙ তুলির মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছিলেন, মা সরস্বতী, মা কালীর ছবি। জাপানিজ চিত্রশিল্পীদের আঁকা ছবিতে দেখা গিয়েছে জাপানিজ বধুদের পড়নে পড়া শাড়ির চিত্র প্রদর্শনও। যা স্থান পেয়েছে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির মিউজিয়ামে।
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের মিউজিয়াম কিউরেটর বৈশাখী মিত্র বলেন, “ইন্দ ও জাপানিজ সংস্কৃতির আদান প্রদানের নানান নিদর্শন নিয়ে নবরূপে সেজে উঠেছে এই মিউজিয়াম। যার ঐতিহাসিক মূল্য অপরিসীম। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও এই মিউজিয়াম বার্তা বহন করে।”
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গড়া বিচিত্রা ক্লাবে বহু জাপানি চিত্রশিল্পীরা এসে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন তাঁদের এই নিহঙ্গা চিত্র কৌশলের। এবং তারাও বাংলার শিল্পকলা ও চিত্রের প্রশিক্ষণও গ্রহণ করেছেন। অঙ্কন চিত্রের নানা সামগ্রীয় এই মিউজিয়ামে সংগ্রহ করা হয়েছে যা জাপান থেকে পাঠান হয়েছে।
২০০৬ সালে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে প্রথম বিদেশী মিউজিয়াম হিসাবে জাপান প্রদর্শনশালা স্থাপন করা হয়। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চার বারের জাপান যাত্রার সম্পর্কিত নানান ঐতিহাসিক নিদর্শন এই প্রদর্শশালাতে তুলে ধরা হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৬, ১৯২৪, ১৯২৬ ও ১৯২৯ সালে জাপানে গিয়েছিলেন। পুরনো যে মিউজিয়াম ছিল তার অনেক ছবি ও নিদর্শন নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ২০১৯ সালে জাপান সরকার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে মউ স্বাক্ষর করেন তৎকালীন জাপানি রাষ্ট্রদূত মাসায়ুকি তাগা ও তৎকালীন উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরীর সঙ্গে। নবরূপে সাজানোর জন্য জাপানের তরফ থেকে ২০ লক্ষ টাকারও বেশি অনুদান দেওয়া হয় রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়কে। মূলত আগের যে মিউজিয়াম ছিল তাতে মূল্যবান জিনিস বা নিদর্শন অনেক কম ছিল। বেশির ভাগ শান্তিনিকেতন থেকে আনা হয়েছিল। আর নব রূপে যে মিউজিয়াম তৈরি হয়েছে তাতে জাপান থেকে আনা হয়েছে বহু ঐতিহাসিক নিদর্শন। যা ভারতে আনতে সাহায্য করেছিল জাপানের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত।
প্রসঙ্গত, মউ স্বাক্ষরের পরই নবরূপে সাজানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু তাতে বাধ সাধে মহামারী। তারপর আবার কাজ শুরু হয় গত বছরের মাঝপথে এবং চলতি মাসের ১৯ তারিখ নব রূপে উদ্বোধন করা হয় মিউজিয়ামের।
জাপানের একটি বিশেষ অনুষ্ঠান হল চা পান অনুষ্ঠান। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বিশেষ ভাবে আকর্ষণ করেছিল ‘টি সেরিমানি’। প্রদর্শনশালার একটি রুমে এই চা পান অনুষ্ঠানের নানান বিরল ছবি ও সরঞ্জাম স্থান পেয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর লেখা জাপান যাত্রীতে এই বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নানা লেখা জাপানি ভাষায় অনুকরণ করা হয়েছিল। তা-ও এখানে স্থান পেয়েছে। কাজু-আজুমার লেখা বই রয়েছে এই মিউজিয়ামে।
১৯২৪ সালে কবিগুরুর জাপান যাত্রার আগে জাপানে ভয়াবহ ভূমিকম্প ও সুনামি হইছিল। এবং জাপান যাত্রার সময় বিশ্বভারতীর তরফ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে জাপান সরকারকে দেওয়া হয়েছিল সেই সময়। বর্তমানে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে ছয়টি বিদেশিগ্যালারিরয়েছে। জাপান,চিন,ইটালি,তাইল্যান্ড,হাঙ্গেরি ও আমেরিকার। আরও তিনটিগ্যালারিহতে চলেছে রাশিয়া, ফ্রান্স ও বাংলাদেশ। তার মধ্যে বাংলাদেশগ্যালারিসব কিছ সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। শুধু হেরিটেজ কমিশনের অনুমতির অপেক্ষা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy