প্রতীকী চিত্র।
মিড ডে মিলের জন্য পিএম পোষণ অ্যাকাউন্টই নেই। অথচ স্কুলগুলিতে টাকা পৌঁছে যাচ্ছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার একাধিক স্কুলে ঘটেছে এই ঘটনা। আর এর জেরেই ফের বিতর্কের মুখে মিড ডে মিল প্রকল্প। বরাদ্দ টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে ওই জেলার বিরুদ্ধে। সমগ্র শিক্ষা মিশনের তরফ থেকে সংশ্লিষ্ট জেলাকে নতুন করে পিএম পোষণ অ্যাকাউন্ট চালু করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
জানা গিয়েছে, ভিলেজ এডুকেশন কমিটি (ভিইসি), ওয়ার্ড এডুকেশন কমিটি (ডব্লিউইসি), বিভিন্ন স্বর্নিভর গোষ্ঠীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কেন্দ্রের পাঠানো টাকা পৌঁছে যেত। সেখান থেকে টাকা স্কুলগুলিতে পৌঁছে যেত এবং সেখানে মিড ডে মিলের ব্যবস্থা করা হত। আর এখানেই বিতর্কের সূত্রপাত।
এই বিষয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা পরিদর্শকের (ডিআই) বক্তব্য, অন্য জেলার বিষয়ে জানা নেই, তবে এই জেলায় এই ধরনের কোনও ঘটনা ঘটেনি। তবে তিনি এ-ও স্বীকার করেছেন, ভিইসি, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কিছু স্কুলের কাজ করতে হয়েছে মামলা-মোকদ্দমার জটিলতার কারণে।
তবে, শিক্ষকমহলের একাংশ আলাদা অ্যাকাউন্টের অস্তিত্ব নিয়েই একাধিক প্রশ্ন তুলেছেন। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডলের দাবি, বহু স্কুলেরই আলাদা অ্যাকাউন্ট নেই, অথচ টাকা পৌঁছে যাচ্ছে! প্রশাসনের মদত না থাকলে ডিআই-দের পক্ষে এই কাজ সম্ভবই নয়। কেন্দ্রের তরফে মিড ডে মিলের কাজ সক্রিয় রাখার চাপ বাড়ছে বলে শিক্ষা দফতরের গাফিলতির ছবি আরও স্পষ্ট হচ্ছে।
এই দুর্নীতি প্রসঙ্গে জেলা পরিদর্শক বলেন, “সমস্ত স্কুলের পিএম পোষণ অ্যাকাউন্টগুলিকে সক্রিয় রাখা এবং আলাদা করে অ্যাকাউন্ট তৈরি করার নির্দেশ মিলেছে, তাই সেই ভাবে পরবর্তী কালে কাজ করা হবে, যাতে কাজের স্বচ্ছতা বজায় থাকে। নির্দেশের বাইরে কোনও কিছুই যাতে না হয়, বা যদি হয়ে থাকে, তা নিয়ে আলোচনা করতে হবে।”
প্রসঙ্গত, নভেম্বর মাসেই প্রাথমিক এবং উচ্চ প্রাথমিকের খাতে মাথাপিছু ৭০-৭৫ পয়সা করে বরাদ্দ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেই বরাদ্দ টাকার পরিমাণ নিয়েই আগেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল শিক্ষামহল। বাড়তে থাকা বাজারদর এবং কেন্দ্রের বরাদ্দের পরিমাণ যৎসামান্য বৃদ্ধি পাওয়ায় আখেরে ক্ষতি হচ্ছে স্কুলপড়ুয়াদের। খাদ্যের পরিমাণ, পুষ্টিগুণ নিয়েও প্রচুর অভিযোগ উঠেছে। এরই মাঝে সরকারি নির্দেশ না মেনে দিনের পর দিন টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যাওয়ার খবর প্রকাশ্যে আসতেই তদন্তের দাবিতে সরব শিক্ষামহলের একাংশ।
কলেজিয়াম অফ অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বলেন, “বরাদ্দ টাকা পাওয়ার জন্য আলাদা অ্যাকাউন্ট কেন খোলা হল না? এর নেপথ্যে থাকা আসল উদ্দেশ্য জানতে হবে। অবিলম্বে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।”
যদিও এর জন্য স্কুলগুলিকেই কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সংগঠন অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস-এর রাজ্য সম্পাদক চন্দন মাইতি। তিনি বলেন, “নিয়মের বাইরে গিয়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠী, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি যে ভাবে কাজ করেছে, তার দায় স্কুলগুলির উপর চাপানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ফলস্বরূপ ছেলেমেয়েরা ভাল খাবার খেতে পায়নি। তাই স্কুলগুলিকে এই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক।”
তবে, সরকারি নির্দেশিকা থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট, নিয়ম-বহির্ভূত ভাবে বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকা পৌঁছে যেত এবং সেই টাকা দিয়েই স্কুলগুলিকে কোনও ক্রমে মিড ডে মিলের আয়োজন করতে হত। সঠিক ভাবে টাকা বণ্টন এবং হিসাবের গরমিলের দুর্নীতি স্পষ্ট, দাবি বিজেপি শিক্ষক সেলের রাজ্য সম্পাদক পিন্টু পাড়ুইয়ের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy