ছবি: সংগৃহীত।
অগ্নিযুগে এই বাড়িতেই নাকি ধরে আনা হত বিপ্লবীদের। তার পর তাঁদের উপর অকথ্য নির্যাতন চালাতেন ব্রিটিশ পুলিশ কমিশনার চার্লস টেগার্ট। এ বাড়ির ইতিহাস অবশ্য আরও প্রাচীন। ১৮৪৩ সালে স্কটিশ মিশনারি আলেকজান্ডার ডাফ এখানেই প্রতিষ্ঠা করেন ‘ফ্রি চার্চ ইনস্টিটিউশন’। আজ সেই বাড়ি সম্পূর্ণ ভিন্ন রূপে পরিচিত হতে চলেছে।
উত্তর কলকাতার জোড়াবাগান এলাকায় স্কটিশ চার্চ কলেজের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস তৈরি করতে উদ্যোগী কলেজ কর্তৃপক্ষ। এই এলাকার প্রায় দুশো বছরের পুরনো ভবন ডাফ কলেজ বর্তমানে ভগ্নপ্রায়, তা সংস্কার করে এই ক্যাম্পাস তৈরির জন্য হেরিটেজ কমিশনের কাছে সাহায্য চাইলেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।
স্কটিশ চার্চ কলেজের অধ্যক্ষ মধুমঞ্জরি মণ্ডল বলেন, “স্কটিশ চার্চ কলেজের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস হিসেবে আমরা কলকাতার বুকে এই ঐতিহ্যবাহী ডাফ কলেজকে পুনরুদ্ধার করার প্রস্তাব দিয়েছি কমিশনের কাছে। সব ঠিক থাকলে ওখানে দ্বিতীয় ক্যাম্পাস তৈরির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।”
রাধারমণ মিত্র রচিত ‘কলিকাতা দর্পণ’ গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে, ৭৪, নিমতলা ঘাট স্ট্রিটের এই ঐতিহ্যবাহী ভবনে ২৮টি ঘর রয়েছে। সেখানে ১০০০ থেকে ১২০০ পড়ুয়া একসঙ্গে পঠনপাঠন করতে পারেন। এ ছাড়াও এই ভবনে তিনটি বড় হল ও দু’টি প্রদর্শনীকক্ষ রয়েছে। যেখানে ৫০০ থেকে ৭০০ পড়ুয়া একত্র হতে পারবেন। গ্রন্থাগার ও গবেষণাগারও এই ছিল ভবনটিতে। ব্রিটিশ আমলের স্থাপত্য ও শিল্পের নানা নিদর্শন রয়েছে এই ভবনের সর্বত্র।
২০৩০ সালে স্কটিশ চার্চ কলেজের দ্বিশতবর্ষ পূর্ণ হচ্ছে। তার আগে এই দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের সংস্কারের কাজ শেষ করতে চান কলেজ কর্তৃপক্ষ। হেরিটেজ কমিশনের চেয়ারম্যান আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে স্কটিশ চার্চ কলেজ কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে চিঠি দিয়েছেন। সেখানে ডাফ কলেজের তথ্য ও ইতিহাস উল্লেখ করা হয়েছে। ১৮৪৩ সালে এই ‘ফ্রি চার্চ ইনস্টিটিউশন’ ভবনটি স্থাপিত হয় জোড়াবাগান এলাকায়। পরবর্তী কালে স্কটিশ মিশনারি আলেকজান্ডার ডাফের স্মৃতিতে যার নামকরণ হয় ‘ডাফ কলেজ’। ১৮৫৭ সালে নিমতলা ঘাট স্ট্রিটের কাছে ডাফ কলেজের সঙ্গে ‘ফ্রি চার্চ ইনস্টিটিউশন’-এর সংযুক্তিকরণ ঘটে। পরবর্তী কালে ‘চার্চ অফ স্কটল্যান্ড’ ও ‘ফ্রি চার্চ ইনস্টিটিউশন’ এই ভবনটিতে সম্মিলিত ভাবে পঠনপাঠন শুরু করে।
এই প্রসঙ্গে কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ বললেন, “১৯২৯ সালে এই ভবনেরই নামকরণ করা হয় স্কটিশ চার্চ কলেজ। তার পরেই এই ভবনটি হস্তান্তর করা হয় ব্রিটিশ সরকারের কাছে। এবং সেখানে প্রতিষ্ঠিত হয় জোড়াবাগান থানা।” উল্লেখ্য, এই থানার মধ্যে ব্রিটিশ পুলিশ কমিশনার চার্লস টেগার্ট অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের শাস্তির জন্য একটি অংশ ব্যবহার করতেন।
পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ কমিশনের সদস্য পার্থরঞ্জন দাস বলেন, “ঐতিহ্যবাহী এই ভবনটি সংস্কার করে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। তবে তার জন্য স্কটিশ চার্চ কলেজকে জানাতে হবে, তারা এখানে কত পড়ুয়ার জন্য কী পরিকল্পনা করতে চাইছেন। এই ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে কলকাতার ইতিহাসে নয়া নিদর্শন স্থাপিত হবে।”
১৯৭১-’৭২ সালে নকশাল আন্দোলনের সময় এই ভবনটিতে বারুদ ও অস্ত্র মজুত করা হত। সেই সময় ভবনের একতলায় বিস্ফোরণের ফলে এই ভবনটির কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যদিও পরবর্তী কালে জোড়াবাগান থানা এই ভবনের একটি অংশ থেকে নিজেদের কাজ চালাত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy