Advertisement
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
NIRF Ranking 2024

এনআইআরএফ র‍্যাঙ্কিংয়ে তাক লাগানো ফল এনএসওইউ-র, সাফল্যের নেপথ্যকারণ কী?

তালিকার শীর্ষে রয়েছে নয়া দিল্লির ইন্দিরা গান্ধি জাতীয় মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (ইগনু) এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে আমদাবাদের ড. বাবাসাহেব অম্বেডকর ওপেন ইউনিভার্সিটি।

NSOU

নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (এনএসওইউ)। সংগৃহীত ছবি।

সুচেতনা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২৪ ১৬:৪৬
Share: Save:

গত সোমবার প্রকাশিত হয়েছে চলতি বছরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউশনাল র‍্যাঙ্কিং ফ্রেমওয়ার্ক (এনআইআরএফ)। নয়া দিল্লিতে আনুষ্ঠানিক ভাবে এ বছরের এনআইআরএফ-এর তালিকা ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান। এ বছর নির্ধারিত বিভাগগুলি ছাড়াও যোগ হয়েছে আরও তিনটি বিভাগ। এর মধ্যে রয়েছে ‘ওপেন ইউনিভার্সিটিজ়’ বিভাগ। সংশ্লিষ্ট বিভাগে দেশের মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে দ্বিতীয় স্থান দখল করে নিয়েছে এ রাজ্যের সরকারি মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।

‘ওপেন ইউনিভার্সিটিজ়’ বা মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগে দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে রাজ্যের নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (এনএসওইউ)। তালিকার শীর্ষে রয়েছে নয়া দিল্লির ইন্দিরা গান্ধি জাতীয় মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (ইগনু) এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে আমদাবাদের বাবাসাহেব অম্বেডকর ওপেন ইউনিভার্সিটি।

রাজ্যের এই সরকারি মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাফল্যের জন্য শিক্ষকদের কঠোর পরিশ্রমকেই কৃতিত্ব দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ হিউম্যানিটিজ়ের প্রাক্তন অধিকর্তা এবং বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মননকুমার মণ্ডল। সর্বভারতীয় স্তরের এই র‍্যাঙ্কিং ফ্রেমওয়ার্কের মাধ্যমে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে নানারকম সূচকের ভিত্তিতে সেরার তালিকা প্রস্তুত করে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক। মোট যে পাঁচটি সূচকের ভিত্তিতে এই তালিকা তৈরি করা হয়, সেগুলি হল—শিক্ষাদান, শেখার পদ্ধতি ও শিক্ষা সম্পদ (টিএলআর), গবেষণা এবং পেশাদারি কর্মপদ্ধতি, স্নাতকের ফলাফল, প্রসার ও অন্তর্ভুক্তি এবং বোঝার ক্ষমতা বা উপলব্ধি। কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি ছাড়াও এই র‍্যাঙ্কিং ফ্রেমওয়ার্কে অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন রাজ্য সরকারি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।

এনআইআরএফ তালিকায় মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগটি যোগ করায় এর ফল হবে সুদূরপ্রসারী এবং দেশের উচ্চশিক্ষায় মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ভূমিকাতেও এর প্রতিফলন দেখা যাবে বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ হিউম্যানিটিজ়ের প্রাক্তন অধিকর্তা। তিনি জানিয়েছেন, ২০১৬ সালের পর থেকে ইউজিসি (বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন)-এর নিয়ম অনুযায়ী, দেশের সরকারি মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রথাগত শিক্ষার ডিগ্রিকে সমতুল গণ্য করা হয়। ফলে এখন মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারাও নেট-এর মতো জাতীয় স্তরের যোগ্যতা নির্ণায়ক পরীক্ষা দিতে পারেন এবং পরবর্তীকালে বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতে পারেন। কিন্তু তাও মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে ছুতমার্গ রয়েছে অনেকেরই। সে ক্ষেত্রে এনআইআরএফ র‍্যাঙ্কিং তালিকায় এনএসওইউ জায়গা করে নেওয়ায়, সেই চিন্তাভাবনায় খানিকটা বদল আসতে পারে।

এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও দেশের মধ্যে রাজ্য সরকারি মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে প্রথম এনএসওইউ। বিভিন্ন রাজ্যের মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে পেছনে ফেলে এই স্থান দখল করে নিয়েছে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়।

১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয় এখন রাজ্যে তিনটি ক্যাম্পাস গড়ে তুলেছে। মননকুমার জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামোগত উন্নয়ন এবং এনআইআরএফ-এ স্থানাধিকারের জন্য তাই অনেকটা কৃতিত্ব সরকারের। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় চার লক্ষের কাছাকাছি। স্নাতকোত্তরেও নাম নথিভুক্ত করছে বহু পড়ুয়া।

একই সঙ্গে শেষ কিছু বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু পদক্ষেপও এই সাফল্যের নেপথ্য কারণ বলা যেতে পারে। অধ্যাপক মণ্ডল বলেছেন, “ইগনু বাদে দেশের মাত্র তিনটি মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে জ়ার্নালিজ়ম এবং মাস কমিউনিকেশন বিষয়ে এমএ কোর্স পড়ানো হয়। যার মধ্যে অন্যতম নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। পাশাপাশি পিএইচডিও করানো হচ্ছে রেগুলার এবং অনলাইন— উভয় মাধ্যমে।” এ ছাড়া, আরও একটি বড় কারণকেও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাফল্যের জন্য চিহ্নিত করেছেন তিনি। তাঁর মতে, দেশের মহিলা এবং প্রান্তিক মানুষদের মধ্যে উচ্চ শিক্ষার প্রসারেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে এনএসওইউ। তবে এখনও সার্বিক ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মানোয়ন্নের জন্য রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে যৌথ ভাবে কাজ করার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন অধ্যাপক মণ্ডল।

২০১৬ সালে এই ফ্রেমওয়ার্কে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৩,৫৬৫টি, তা এ বছর বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০,৮৪৫টিতে। যে সমস্ত বিভাগে সেরা প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশ করা হয় এই ফ্রেমওয়ার্কে, তাও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬টিতে। এর মধ্যে মূল যে চারটি বিভাগ রয়েছে, সেগুলি হল— সামগ্রিক, কলেজভিত্তিক, বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক র‍্যাঙ্কিং। এ ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ের ভিত্তিতে আরও আটটি বিভাগে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে র‍্যাঙ্কিং দেওয়া হয়। এই আটটি বিষয় হল— ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যানেজমেন্ট, ফার্মাসি, আইন, মেডিক্যাল, আর্কিটেকচার এবং প্ল্যানিং, ডেন্টাল এবং কৃষি এবং সম্পর্কিত বিষয়। ১৩টি বিভাগের বাইরে এ বছরে এনআইআরএফ-এ যে তিনটি বিভাগ যোগ করা হয়েছে, সেগুলি হল— ‘ওপেন ইউনিভার্সিটিজ়’, ‘স্কিল ইউনিভার্সিটিজ়’ এবং ‘স্টেট ফান্ডেড গভর্নমেন্ট ইউনিভার্সিটিজ়’। এগুলির সঙ্গে পরের বছর থেকে যোগ হবে ‘সাস্টেনিবিলিটি র‍্যাঙ্কিংস’ শীর্ষক আরও একটি বিভাগ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE