যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তিকালীন উপাচার্য ভাস্কর গুপ্তের অধ্যাপনা বা ‘প্রফেসরশিপ’-এর মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৩১ মার্চ। তার আগে স্থায়ী উপাচার্য পদে নিয়োগ না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনি অচলাবস্থা (স্ট্যাটিউটারি ডেডলক) তৈরি হতে পারে। তাই জুটা (যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক সংগঠন)-এর তরফ থেকে আচার্য তথা রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে এই সমস্যার কথা জানিয়ে চিঠি দেওয়া হল।
জুটার সভাপতি পার্থপ্রতিম বিশ্বাস বলেছেন, “৩১ মার্চের মধ্যে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ না হলে বিশ্ববিদ্যালয় একটা বিধিগত সঙ্কটে পড়বে। তাই আমরা আচার্যকে চিঠি দিয়েছি যাতে এই বিষয়ে তিনি দ্রুত পদক্ষেপ করেন।”
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে মান্যতা দিয়ে আচার্য তথা রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ইতিপূর্বেই রাজ্যের ৩৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করেছেন। বাকি আরও ১৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ এখনও থমকে রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়।
বর্তমানে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাস্কর গুপ্তের মেয়াদ শেষ হলে উপাচার্যহীন হয়ে পড়বে রাজ্যের প্রথম সারির এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি, রেজিস্ট্রার, ফিন্যান্স অফিসার, চিফ লাইব্রেরিয়ান, আর্টস ফ্যাকাল্টি ও সায়েন্স ফ্যাকাল্টির ডিন-সহ একাধিক পদে স্থায়ী কর্মী বা আধিকারিক নেই। শুধুমাত্র স্থায়ী পদে রয়েছেন সহ-উপাচার্য অমিতাভ দত্ত।
এই অবস্থা নিয়েই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকেরা। তাঁরা জানিয়েছেন, এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠন থেকে প্রশাসনিক কাজকর্ম সমস্ত কিছুই থমকে যাবে। কোনও বিষয়ে কোনও গুরুত্বপুর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হবে না। এমনকি, এগজ়িকিউটিভ কাউন্সিল (ইসি)-এর বৈঠক ডাকা যাচ্ছে না। পাশাপাশি, শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী নিয়োগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ডক্টরাল প্রোগ্রামের কাজকর্মও সুষ্ঠু ভাবে করা সম্ভব হচ্ছে না। তার উপর উপাচার্যপদে কেউ না থাকলে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে।
গত বছর এপ্রিল মাসে রাজভবন থেকে ইলেক্ট্রনিক্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ভাস্কর গুপ্তকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ী উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ করেন সিভি আনন্দ বোস। তাঁর নিয়োগের সময় একজন অধ্যাপক হিসাবেই উপাচার্যপদের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, যার ফলে অধ্যাপনা বা ‘প্রফেসরশিপ’-এর মেয়াদ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উপাচার্যপদে মেয়াদ ফুরোবে তাঁর।
এ প্রসঙ্গে ভাস্কর বলেন, “সরকার বা আচার্য— উভয় পক্ষকেই আইনি এবং নৈতিকতার দিক মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। আমাকে প্রাথমিক ভাবে যে শর্তে নিয়োগ করা হয়েছিল, সেই মেয়াদ ফুরোলে আমার পক্ষে আর এই পদে আসীন থাকা সম্ভব নয়।”
বর্তমানে এই পরিস্থিতিতে জটিলতা কী করে কাটবে তা নিয়ে ধন্দে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকেরা। এক দিকে, রাজ্যপালের হাতে রয়েছে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের চাবিকাঠি। অন্য দিকে, পুরো নিয়োগপ্রক্রিয়াটিই সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। আগামী কয়েক দিনে সরকার এবং রাজভবন বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয়, সে দিকেই তাকিয়ে শিক্ষকমহল।