Advertisement
২৪ অক্টোবর ২০২৪
Career Advice for Cancer biology Students

ক্যানসার বায়োলজি নিয়ে পড়তে গেলে কি বিদেশ যেতেই হবে? রইল বিশেষজ্ঞের মতামত

ক্যানসার বায়োলজি এমন একটি বিষয়, যেখানে শুধুমাত্র মেধা নয়, একই সঙ্গে বিদেশের অত্যাধুনিক যান্ত্রিক সহযোগিতা এবং দ্রুত গবেষণা করার মতো পরিকাঠামো থাকাও প্রয়োজন।

Students are researching.

প্রতীকী ছবি।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২৩ ১৩:২১
Share: Save:

আন্তর্জাতিক স্তরে ক্যানসার সংক্রান্ত গবেষণা একটি বহমান বিষয়। বিশ্বের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি দেশের অগ্রণী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি, খড়্গপুরেও ক্যানসার বায়োলজি নিয়ে নিরন্তর গবেষণা চলছে। এই বিষয়ের পড়ুয়া থেকে শুরু করে অধ্যাপক কিংবা গবেষক— সকলেই ক্যানসার সংক্রমিত কোষ চিহ্নিতকরণ, রোগ নিরাময়ের উপায় অনুসন্ধান এবং স্বাভাবিক অনুঘটকের সাহায্যে কেমোথেরাপি-সহ বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার প্রভাব কমানোর মতো বিষয়গুলি নিয়ে চর্চা করে থাকেন।

এই বিষয়টি নিয়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গবেষকরা বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা সেখানকার স্বীকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে পড়াশোনা করতে আগ্রহী। কেন বিদ্যাচর্চার ক্ষেত্রে বিদেশে পড়াশোনা প্রাসঙ্গিক এবং সেই ক্ষেত্রে পড়ুয়া তথা গবেষকরা কী ধরনের সুযোগ সুবিধা পেতে পারেন? দেশে পড়াশোনার ক্ষেত্রেই বা কী ধরনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে? সেই বিষয়ে রইল বিশেষজ্ঞের মতামত।

আইআইটি খড়্গপুরের স্কুল অফ মেডিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক মহীতোষ মণ্ডলের মতে, বিদেশে পড়াশোনা করলে উন্নত পরিকাঠামো এবং আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে কাজের ক্ষেত্রে কিছু সুবিধা পাওয়া যায়। ক্যানসার বায়োলজি এমন একটি বিষয়, যেখানে শুধুমাত্র মেধা নয়, একই সঙ্গে বিদেশের অত্যাধুনিক যান্ত্রিক সহযোগিতা এবং দ্রুত গবেষণা করার মতো পরিকাঠামো থাকাও প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার নিরিখে বলা যেতেই পারে, এই বিষয়টি নিয়ে বিদেশে পড়াশোনার কিছুটা হলেও প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে।

অধ্যাপক মণ্ডল বলেন, ‘‘যদিও বর্তমানে ভারত ক্যানসার নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়েছে, তাই এখন দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং গবেষণাগারে যুগান্তকারী আবিষ্কার হয়েই চলেছে। সে ক্ষেত্রে এই দেশে থেকেই পড়াশোনা কিংবা গবেষণা করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সামান্য হলেও কমেছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা রয়ে গিয়েছে। বিদেশে এই বিষয়টির বিভিন্ন শাখায় যে ভাবে ক্রমাগত নতুন বিষয় আবিষ্কার হয়ে চলেছে, সে ক্ষেত্রে পড়ুয়া কিংবা গবেষকদের অভিজ্ঞতা এবং মেধার পরিধির বাড়ানোর স্বার্থে যাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। আর যদি এই দেশে গবেষণা বা পড়াশোনার সীমাবদ্ধতার বিষয়ে বলতে হয়, সে ক্ষেত্রে এটা অস্বীকার করার জায়গা নেই, গবেষণার জন্য যে পরিমাণ আর্থিক অনুদানের প্রয়োজন হয়, এখনও কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা প্রায় অনিশ্চিত। আগে এই ক্ষেত্রে আরও বেশি প্রতিবন্ধকতা ছিল। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক স্তরে বিভিন্ন ক্ষেত্রের গবেষকদের সঙ্গে কাজ করা, তাঁদের কাছ থেকে শেখার বিপুল সুযোগ থাকে। সে হিসেবে এ দেশে ক্যানসার বায়োলজি নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে এই ধরনের সুযোগ সব সময় পাওয়া যায় না।’’

তাঁর মতে, ক্যানসার এমন একটি রোগ, যা সম্পূর্ণ ভাবে নিরাময় হতে পারে, এমন নিশ্চয়তা কোথাও দেওয়া হয় না। কিন্তু রোগের প্রবণতা কমানোর ক্ষেত্রে গবেষণার কোনও ঘাটতি নেই। বিদেশে গবেষণার ক্ষেত্রে ক্লিনিশিয়ানদের সঙ্গে কাজের সুযোগ পাওয়া যায়। আরও সহজে বলতে হলে, যে সমস্ত চিকিৎসকরা একই সঙ্গে ক্লিনিক এবং গবেষণাগার— উভয় ক্ষেত্রেই কাজ করছেন, তাঁদের ক্লিনিশিয়ান বলা হয়ে থাকে। গবেষণার জন্য এই ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের সাহায্যের বিশেষ প্রয়োজন। বিদেশে রোগীদের অনুমতি নিয়েই তাঁদের নমুনা পরীক্ষা, অন্যান্য প্রাণর উপর নমুনা প্রয়োগ কিংবা গবেষণালব্ধ নমুনা পরীক্ষা করার ক্ষেত্রেও ব্যবস্থাপনা অনেকটাই সহজলভ্য।

প্রশ্ন উঠতেই পারে, তা হলে কি কখনই এই দেশে থেকে পুরোপুরি এই বিষয়টি নিয়ে পড়াশোনার সুযোগ থাকছে না? এই প্রসঙ্গে অধ্যাপক মণ্ডল বলেন, ‘‘একটা সময় ছিল, যখন এই মারণ রোগের চিকিৎসা করানোর জন্য বিদেশ ছাড়া গতি ছিল না। কিন্তু সেই ছবিটাও বর্তমানে বদলেছে। এখন বিদেশ থেকেও মানুষ এই দেশে চিকিৎসা করাতে আসেন। তাই গবেষণা কিংবা পড়াশোনার ক্ষেত্রেও পরিবর্তন হবে, সেটাই স্বাভাবিক। বর্তমানে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ক্রমশ পরিবর্তনের দিকে এগোচ্ছে, যা খুব শুভ ইঙ্গিত। তাই আগামী দিনে বিদেশে গিয়ে পড়াশোনার পরিস্থিতি না-ও থাকতে পারে, এমনটাই আশা করা যেতে পারে।’’

অধ্যাপক মণ্ডল নিজের পড়াশোনার অভিজ্ঞতা কথা স্মরণ করে আরও জানিয়েছেন, তাঁর ক্ষেত্রে বাংলা মাধ্যমের ছাত্র হয়েও '৯৪ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ কেমিক্যাল বায়োলজি থেকে পিএইচডি করার সুযোগ মিলেছিল। বিদেশে গিয়ে ক্যানসার বায়োলজি নিয়ে পড়াশোনার বিষয়টি খুব প্রচলিত ছিল না। সংক্ষেপে বলতে হলে, অনেক রকমের সমস্যা থাকলেও পড়াশোনা এবং গবেষণার যথেষ্ট সুযোগ ছিল। কারণ এই মারণ রোগের চিকিৎসা খুঁজে পাওয়ার থেকেও কেমোথেরাপি বা ওষুধ প্রয়োগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার প্রভাব কমানোটাই আসল লক্ষ্য ছিল। সেই বিষয়ে টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয় অধীনস্থ এমডি অ্যান্ডারসন ক্যানসার সেন্টারের বিশিষ্ট অধ্যাপক, গবেষক, সহপাঠীদের যথেষ্ট সাহায্য পেয়েছিলেন তিনি।

তাঁর মতে, এই বিষয়টি নিয়ে চর্চার জন্য নিজের লক্ষ্যে স্থির থাকাটা ভীষণ প্রয়োজন। সাফল্য পেতে অনেকটা সময় লাগতে পারে, কিন্তু তা পাওয়ার পর কাজের ক্ষেত্রে গতি বাড়বে। তাই এই বিষয়টি নিয়ে পেশাদার হিসাবে পৃথিবীর অন্যতম সেরা ক্যানসার নিরাময় কেন্দ্রে কাজের সুযোগ পেতে সমস্যা হয়নি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE