Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Mischievous Activities

মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিকের খাতায় ‘পাশের আর্জি’! বিরক্ত শিক্ষকরা

খাতায় পাশ করানোর আর্জি থেকে কোনও প্রশ্নের উত্তর না লিখেই সাদা খাতা জমা দিয়েছে কোনও কোনও পরীক্ষার্থী। এমনকি, নম্বর পাওয়ার জন্য খাতার ভিতরে টাকাও রাখা রয়েছে। এই সমস্ত কারণেই ক্ষিপ্ত পরীক্ষক থেকে প্রধান পরীক্ষক।

সংগৃহীত চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৪ ১৭:২১
Share: Save:

চলতি বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার খাতা দেখা ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। চলছে উচ্চমাধ্যমিকের মূল্যায়ন। এই খাতা মূল্যায়নের সময়ই বিচিত্র অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছেন পরীক্ষকরা। খাতায় পাশ করানোর আর্জি থেকে কোনও প্রশ্নের উত্তর না লিখেই সাদা খাতা জমা দিয়েছে কোনও কোনও পরীক্ষার্থী। এমনকি, নম্বর পাওয়ার জন্য খাতার ভিতরে টাকাও রাখা রয়েছে। এই সমস্ত কারণেই ক্ষিপ্ত পরীক্ষক থেকে প্রধান পরীক্ষক।

শিক্ষক মহলের একাংশের মতে, অতিমারি পরবর্তী সময় দেখা যাচ্ছে বহু ছাত্র ছাত্রীর পড়াশোনার প্রতি চূড়ান্ত অনীহা। এই প্রসঙ্গে কলেজিয়াম অফ অ্যাসিস্ট্যান্ট হেড মাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেড মিস্ট্রেস সৌদীপ্ত দাস বলেন, ‘‘অতিমারির প্রভাব পড়েছে ছাত্র ছাত্রীদের পরীক্ষার খাতায়। এ ছাড়াও দেখা গিয়েছে, তাঁরা যেটা পড়ে আসছে বা নকলপত্র সঙ্গে নিয়ে আসছে সেটা পরীক্ষায় না মিললে অবান্তর লেখা লিখে চলে আসছে বহু সময়। এতে যে কোনও নম্বর পাওয়া যায় না তা পড়ুয়ারা বুঝতে পারছে না’’।

উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘৭০ থেকে ৮০ শতাংশ খাতা দেখা প্রায় শেষ। ‘গার্বেজ লেখা’-সহ খাতার সঙ্গে টাকা দেওয়ার মতো বহু অভিযোগ এসেছে প্রধান পরীক্ষকদের কাছ থেকে। এগুলো কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। বলা হয়েছে, এই ধরনের খাতাগুলিকে আরএ বা বাতিল করে দিতে হবে।’’

গণিতের শিক্ষক জানান, খাতা দেখার সময় তিনি হতবাক। যে উপপাদ্য প্রশ্নে এসেছিল তার উত্তর না লিখে অন্য একটি উপপাদ্য লিখে এসেছে এক পরীক্ষার্থী। অন্য দিকে, উত্তর না জানায় সাদা খাতা জমা দিতে হবে দেখে এক পড়ুয়া উত্তরপত্র জুড়ে সমস্ত প্রশ্ন লিখে এসেছে। একই প্রসঙ্গে যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্য বলেন, ‘‘ছাত্র ছাত্রীরা পড়াশোনা থেকে নিজের গুরুত্ব হারিয়ে ফেলছে। পড়াশোনার চাইতে অন্য কিছুকে গুরুত্ব বেশি দিয়ে ফেলছে। আর এর ফলেই পরীক্ষার সময় এমন কাজ করছে।’’

এক প্রধান পরীক্ষক জানান, খাতার মধ্যে এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী লিখেছে, তাঁর বিয়ে হয়ে যাবে যদি না পাশ করে। এই শেষ সুযোগ, লিখে পাশের আর্জি। অন্য দিকে আবার, এক বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন পরীক্ষার্থী তাঁর খাতায়, যাতে মানবিকতার খাতিরে নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া হয় সে জন্য নিজের ‘ডিসেবিলিটি’-র সার্টিফিকেট খাতার সঙ্গে জমা দিয়ে এসেছে।

গ্রিন পার্ক শিক্ষা সদনের প্রধান শিক্ষক অনিমেষ মান্না বলেন, ‘‘এই ধরনের ‘ম্যাল প্র্যাকটিস’-কে প্রশ্রয় না দেওয়া হয়, তার কড়া নির্দেশ রয়েছে সংসদ ও পর্ষদের তরফে। আমরা পরীক্ষকরা মানবিকতার খাতিরে সব সময় সংসদকে সমস্ত বিষয় জানাই না। এই সব কারণেও খাতা আরএ হয়ে যেতে পারে।’’

নারকেল ডাঙা হাই স্কুলের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘এর আগেও খাতার মধ্যে টাকা দেওয়া-সহ অন্যান্য ঘটনা আগেও হত। তবে, দিনে দিনে এগুলো বৃদ্ধি পাচ্ছে আরও। ইংরেজির ক্ষেত্রে যা উত্তর লিখতে বলা হয়েছে তা না লিখে অন্য রকম উত্তর দিয়ে চলে আসছে।’’

শিক্ষা সংসদের উচ্চপদস্থ আধিকারিক ও পরীক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত এক অংশের বক্তব্য, শিক্ষার্থীরা পরিবেশ বিজ্ঞানের খাতাতেও একই কাজ করে আসছে। মূলত, অতিমারির পরবর্তী সময় থেকেই পড়াশোনার প্রতি তীব্র অনীহা দেখা দিয়েছে শিক্ষার্থীদের একাংশের মধ্যে। গত বছরেও এই কারণে ‘গ্রেস পিরিয়ড’ দিতে হয়েছিল। হয়তো এই বছরও তার প্রয়োজন হতে পারে। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আবার পড়াশোনার আগ্রহ, পরীক্ষার গুরুত্ব ফিরিয়ে আনতে প্রায় তিন থেকে চার বছর সময় লাগবে বলে মনে করছে শিক্ষক মহলের একাংশ।

অন্য বিষয়গুলি:

H.S
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy