প্রতীকী চিত্র।
সরকারি চাকরি পেতে গেলে পরীক্ষায় পাশ করতে হবে। সেই পরীক্ষায় অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি থাকে অঙ্কও। আর সেই অঙ্ক কষতে গিয়ে গোলমাল হয়ে যায় সব। কখনও হিসাব মেলে না, কখনও ঘড়ির কাঁটা ডাক দেয়, আবার কখনও চোখের সামনে উত্তর থাকলেও সেটাতে টিক মেরে আসা হয় না।
পরীক্ষায় পাশ করার জন্য তো বটেই, শেখার জন্যও অঙ্কের প্রতি ভালবাসা থাকা দরকার বলে মনে করেন পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের উপ-সচিব এবং সরকারি কলেজের গণিত বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর পার্থ কর্মকার। তাঁর কাছে একগুচ্ছ প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, কী ভাবে অঙ্কের প্রতি যাবতীয় ভয় নিমেষের মধ্যে কাটিয়ে ফেলা সম্ভব। বিশেষত, যাঁরা প্রথম সরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে চলেছেন, তাঁরা কী ভাবে এই ভয় কাটিয়ে উঠবেন?
পার্থ জানিয়েছেন, রোজকার জীবনে প্রতি পদে মানুষ অঙ্কের হিসাব কষেই চলাফেরা করে। ঘড়ি মেপে ট্রেনে চাপা হোক, বা রাস্তায় কতটা লাফ দিলে গর্তে পা পড়বে না— এমন অজস্র ঘটনার সাক্ষী সকলেই। তাই ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। পাশাপাশি, এটাও ঠিক করতে হবে, কোন সরকারি ক্ষেত্রে চাকরির পরীক্ষা দিতে চান? সেই পরীক্ষার ভিত্তিতে পাঠ্যক্রম মিলিয়ে দেখা, কী কী ধরনের অঙ্ক শিখতে হবে, কোন কোন বই পড়তে হবে। এই সব বিষয়গুলি আগে সাজিয়ে নিতে হবে। এই মানসিক প্রস্তুতির শেষে পড়াশোনা শুরু করলেই বাজিমাত করা সম্ভব।
পড়াশোনার ক্ষেত্রে ছোটবেলা থেকেই প্রতিটি বিষয়ের নিরিখে আলাদা বইয়ের পাশাপাশি আলাদা ভাবে নির্দিষ্ট খাতাও ব্যবহার করেন বহু পড়ুয়া। এই ক্ষেত্রেও কি এই অভ্যাস থাকা প্রয়োজন? পার্থ কর্মকার জানিয়েছেন, বিষয়ভিত্তিক নোটসের খাতা যেমন আলাদা আলাদা রাখতে হয়, তেমনই অঙ্কের ক্ষেত্রেও এই একই ফর্মূলা প্রযোজ্য। কারণ প্রতিটি অধ্যায়ের অঙ্কের আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সেই অনুযায়ী, সময় মেপে, নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে অঙ্ক করতে হবে। আলাদা খাতা রাখলে বিভিন্ন অধ্যায়ের অঙ্ক অভ্যাস করাও যেমন সহজ, তেমনই সেই সব অঙ্কের সূত্রও মনে রাখা সম্ভব।
সময়ের মধ্যে অঙ্ক শেষ করাটাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে গেলে অঙ্ক চিনতে শিখতে হবে। অর্থাৎ, কোন অঙ্কটা মুখে মুখে হওয়া সম্ভব আর কোন অঙ্কটা ৫০ সেকেন্ডের মধ্যে সমাধান করতে হবে— এই বিষয়টি বুঝতে হবে। কারণ কিছু অঙ্কের ক্ষেত্রে অ্যাবাকাস পদ্ধতিতে সহজ সমাধান সম্ভব। আবার কিছু অঙ্কের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য মান ‘এক্স’-এর বদলে ১০ ধরে নিয়ে এগোলে অনেক কম সময়ে সমাধান করা যায়।
সহজে কঠিন অঙ্ক কষে ফেলাটা স্কুল স্তর থেকেই শেখানো হয়ে থাকে। কিন্তু স্কুলের গণ্ডি পেরোতে না পেরোতেই সেই সব শেখার কথা আর মনে থাকে না। অথচ ওই একই জিনিস সরকারি চাকরির পরীক্ষার জন্য নতুন করে শিখতে হয়। এ ক্ষেত্রে কী করণীয়? পার্থ বলেন, “স্কুলের পুরনো অঙ্কের বই-খাতা ফেলে না দেওয়াই ভাল। পরবর্তীতে ওই বই-খাতাই অনেকটা কাজে লাগে। কারণ সরকারি চাকরির পরীক্ষার ক্ষেত্রে স্কুলস্তরের অঙ্কের প্রশ্নই থাকে। সেই সব অঙ্কের চর্চা যদি ক্রমাগত করা যায়, তা হলে আলাদা করে অঙ্ক নিয়ে ভাবনার মেঘ তৈরিই হবে না।”
বই পড়ার ক্ষেত্রে স্কুলের পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি বাজারচলতি বিভিন্ন ধরনের বই পড়ার পরামর্শও দিয়েছেন গণিত বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর। তাঁর মতে, পড়াশোনার জন্য সব ধরনের বই পড়ার অভ্যাস থাকাই প্রয়োজন। কারণ একই অঙ্ক তিন-চারটি আলাদা আলাদা পদ্ধতিতে করা সম্ভব। সেই সমস্ত পদ্ধতি শেখার জন্য আলাদা আলাদা বই দেখে নিলে কোনও ক্ষতি নেই। এতে কোন পদ্ধতিতে কম সময়ের মধ্যে বেশি অঙ্ক কষা সম্ভব, সেটা বোঝা সহজ হয়ে যায়।
এ ক্ষেত্রে কেউ যদি অনলাইনে পড়াশোনা করতে চায়, তা কতটা কার্যকারী হতে পারে? পার্থ কর্মকার অনলাইনে পড়াশোনার বিষয়টিকে সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, বই থেকে পড়াশোনার বিকল্প নেই। তবে, এখন সমাজমাধ্যম এবং বিভিন্ন ভিডিয়ো স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে বিষয়ভিত্তিক নোটস, স্টাডি মেটিরিয়ালস পাওয়া যায়, যা যে কোনও সময়ে পড়ুয়ারা ব্যবহার করতে পারেন। সেগুলি নিয়ে আরও পাঁচ জনের সঙ্গে চর্চাও করা সম্ভব। তাই এ ক্ষেত্রে চাকরিজীবিরা কাজের পাশাপাশি পড়াশোনা করে নিতে পারেন। প্রয়োজনে জরুরি বিষয়গুলিও মার্ক করে রাখার সুযোগ পান।
মাধ্যমিক বা কলেজ স্তরের পরীক্ষায় এক পাতা জুড়ে অঙ্কের সমাধান করার সুযোগ থাকে, যেহেতু অনেকটা বেশি সময় পাওয়া যায়। কিন্তু সরকারি চাকরির পরীক্ষার ক্ষেত্রে সময় সীমিত। সে ক্ষেত্রে একাধিক জটিল অঙ্ক কী ভাবে সমাধান সম্ভব? বিশেষজ্ঞ বলছেন, সব ক্ষেত্রে সূত্র মনে না-ও থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে অঙ্কের ‘কনসেপ্ট’ বুঝে নিতে হবে ভাল ভাবে। তা হলে অধ্যায় অনুযায়ী, প্রশ্ন অনুযায়ী, সূত্র ছাড়াও অঙ্কের উত্তর লেখা যেতে পারে।
এই বিষয়টি বোঝাতে একটি অঙ্কের উদাহরণ দিয়েছেন শিক্ষাবিদ পার্থ কর্মকার। ধরা যাক, প্রশ্নটি এমন- একটি বর্গক্ষেত্রের বাহুর দৈর্ঘ্য ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হল। তা হলে ওই বর্গক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল বৃদ্ধি পেয়ে কত হবে? এই অঙ্কের ক্ষেত্রে একটি সহজ সূত্রেই সমাধান করে ফেলা সম্ভব। কিন্তু যদি সূত্র মনে না থাকে, সে ক্ষেত্রে বাহুর সম্ভাব্য দৈর্ঘ্য ১০ একক ধরা যায়, তা হলে ক্ষেত্রফল হবে ১০০ বর্গ একক। তা হলে ১০ শতাংশ বৃদ্ধির ভিত্তিতে বাহুর দৈর্ঘ্যের মান ১০-এর সঙ্গে ১ যোগ করে বাহুর নতুন দৈর্ঘ্য হবে ১১ একক, ক্ষেত্রফল ১২১ বর্গএকক। ক্ষেত্রফল বৃদ্ধি পেল ২১ শতাংশ। অঙ্কটি কী ধরনের বা কী ভাবে এই ধরনের অঙ্কের সমাধান করা যেতে পারে— এই বিষয়গুলি সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকলে, অঙ্কের ভীতি দূর হওয়া সম্ভব।
(সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখিত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy