কলকাতার সঙ্গে জড়িয়ে কয়েক শতাব্দীর ইতিহাস। শহরের রূপ বদলে গেলেও শিল্প, ঐতিহ্য সংরক্ষণের তাগিদ রয়ে গিয়েছে। সেই তাগিদ থেকেই প্রতি বছর হাজার বছরের ইতিহাসের পাতায় জায়গা পাওয়া দুষ্প্রাপ্য সামগ্রী নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করে সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার পরিষদ। চলতি বছরে কলকাতা আন্তর্জাতিক ইতিহাস উৎসব নামের এই প্রদর্শনীতে গাইড হিসাবে পথপ্রদর্শকের ভূমিকায় দেখা গেল নিউ আলিপুর কলেজ এবং বেহালা কলেজের বিভিন্ন বিভাগের পড়ুয়াদের।
এই উৎসবের ১৯তম বর্ষে থিম ছিল জার্মানি। উৎসবে শামিল হতে দেশ-বিদেশ থেকে বহু বিশেষজ্ঞরাই ভিড় জমিয়েছিলেন প্রদর্শনীতে। তাঁদের সঙ্গে বাংলার ইতিহাস নিয়ে চর্চার সুযোগ যেমন পেয়েছেন পড়ুয়ারা, তেমনই প্রতিদিনের আলোচনা সভা থেকে নতুন আঙ্গিকে ইতিহাস চর্চা করে নেন তাঁরা।

উপস্থিত ছিলেন জার্মান প্রতিনিধি। নিজস্ব চিত্র।
কলেজের পড়ুয়াদের এই অনুষ্ঠানে কেন শামিল করা হল? সাবর্ণ সংগ্রহশালার তরফে দেবর্ষি রায় চৌধুরী জানিয়েছেন, ছাত্র-ছাত্রীদের শহর, সমাজ, পরিবারের ইতিহাস সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হওয়া এবং তার নিয়মিত চর্চা করার পাশাপাশি, তথ্য সংরক্ষণের প্রাসঙ্গিকতা জানার জন্য হাতে কলমে বিষয়গুলি উপলব্ধি করার প্রয়োজন। সেই ভাবনা থেকেই প্রথমে নিউ আলিপুর কলেজ এবং পরে বেহালা কলেজের পড়ুয়াদের এই প্রদর্শনীতে শামিল করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের প্রদর্শনীতে মোট ৩০ জন পড়ুয়া পথনির্দেশকের ভূমিকা পালন করেছেন। কয়েক হাজার বছর পুরোনো সামগ্রী সাজানো, উপস্থিত দর্শকদের সেই সামগ্রীর ইতিহাস ব্যাখা করা— সবটাই পড়ুয়াদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এই প্রদর্শনীতে যে সমস্ত পড়ুয়ারা উৎকর্ষের পরিচয় দিয়েছেন, তাঁদের আলাদা করে পুরস্কৃতও করেছে সাবর্ণ সংগ্রহশালা।

উপস্থিত দর্শকদের সেই সামগ্রীর ইতিহাস ব্যাখা করেছেন পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র।
নিউ আলিপুর কলেজের অধ্যক্ষ জয়দীপ ষড়ঙ্গী মনে করেন, ইতিহাস, ঐতিহ্য চর্চা নিয়ে সাবর্ণ সংগ্রহশালার এই উদ্যোগ পড়ুয়াদের মধ্যে আগ্রহ বৃদ্ধি করেছে। তিনি বলেন, “জব চার্নকের চাপিয়ে দেওয়া কলকাতার ইতিহাস প্রকৃত নগর প্রতিষ্ঠার ইতিহাস যে নয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের সংগ্রহশালা কলকাতার সেই অতীতকে মনে করিয়ে দেয়। কলকাতার ইতিহাস উৎসবে আমাদের কলেজের ছাত্রছাত্রীরা গাইড হিসেবে কাজ করে এবং বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষিত হয়ে নিজেদের সঙ্গে আগত দর্শকদেরও সমৃদ্ধ করেছে।”
এ ছাড়াও সংগ্রহশালার তরফে জানানো হয়েছে, চলতি বছরের অগস্ট মাসে নিউ আলিপুর কলেজের সঙ্গে মউয়ের মেয়াদ শেষ হলেও তার মেয়াদ আরও তিন বছরের জন্য বৃদ্ধি করা হবে। একই সঙ্গে চলতি বছরের অনুষ্ঠানে নলেজ পার্টনার হিসাবে শামিল হয়েছিল বেহালা কলেজ। এই কলেজের সঙ্গেও দ্রুতই মউ স্বাক্ষর করতে চলেছে সাবর্ণ সংগ্রহশালা।