ছবি: সংগৃহীত।
আপৎকালীন অবস্থা ছাড়া উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন কোনও শিক্ষক, শিক্ষিকা বা শিক্ষাকর্মী মাতৃত্বকালীন ছুটি, ‘চাইল্ড কেয়ার লিভ’ বা এই সংক্রান্ত কোনও ছুটি নিতে পারবেন না। উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের তরফ থেকে দেওয়া এই বিজ্ঞপ্তিকে ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক।
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হতে আর দু’সপ্তাহ বাকি নেই, তার আগে শনিবার শিক্ষা সংসদের তরফ থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়েছে, কোনও আপৎকালীন পরিস্থিতি না থাকলে এই ধরনের ছুটির অনুমোদন দেওয়া হবে না পরীক্ষা চলাকালীন। পাশাপাশি, সংসদের তরফ থেকে শিক্ষকদের সহযোগিতার বার্তাও দেওয়া হয়েছে।
সংসদ সূত্রের খবর, বিগত বছরে দেখা গেছে ‘চাইল্ড কেয়ার লিভ’-এর নামে বহু স্কুলের শিক্ষিকারা ছুটি নিয়েছেন। এমনকি, অনেকেই সেই ছুটি নিয়ে বেড়াতেও চলে গিয়েছেন। উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের অধীনস্থ স্কুলের সংখ্যা প্রায় ৭০০০। বহু স্কুল রয়েছে, যেখানে পরীক্ষা চালানোর জন্য শিক্ষক সংখ্যা যথেষ্ট নয়। সে ক্ষেত্রে এই ধরনের ছুটির ফলে সমস্যা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে স্কুলগুলিতে। বহু স্কুলে প্রধান শিক্ষকদের তরফ থেকে সংসদের কাছে এই ধরনের অবাঞ্ছিত ছুটি পরীক্ষা চলাকালীন যাতে না দেওয়া হয়, তার জন্য আবেদন করা হয়েছিল। তার পরই সংসদের তরফ থেকে এই বিজ্ঞপ্তি।
রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা এই ছুটি নিয়ে যথেষ্ট পরিমাণে ক্ষুব্ধ। তাঁদের অনেকেরই দাবি, পরীক্ষা ব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে চালাতে গেলে পরীক্ষার সময় শিক্ষকদের উপস্থিত থাকাটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। প্রয়োজন থাকলে অবশ্যই ছুটির আবেদন গ্রাহ্য করা হবে কিন্তু অপ্রয়োজনীয় ভাবে ছুটি নিয়ে পরীক্ষা ব্যবস্থার ক্ষতি করার কোনও মানে হয় না।
যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্য বলেন, “ছুটি কারওর অধিকার নয়। ছুটি সব সময় অনুমোদন সাপেক্ষ। শিক্ষিকারা ‘চাইল্ড কেয়ার লিভ’ নিন। কিন্তু, সেটা প্রয়োজনের নিরিখে। তাই আমি সংসদের নির্দেশকে স্বাগত জানাচ্ছি।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রধান শিক্ষক বলেন, “এই ধরনের সিদ্ধান্ত খুব জরুরি ছিল। আমরা যারা পরীক্ষা চালাই, তাদের ক্ষেত্রে যথেষ্ট পরিমাণে সমস্যা তৈরি হয়। যে সমস্ত স্কুলে শিক্ষকের সংখ্যা বেশি, তাঁদের পক্ষে কোনও অসুবিধা হয় না একজন দু’জন ছুটিতে গেলে। কিন্তু অনেক স্কুল আছে, যেখানে শিক্ষক সংখ্যা অপ্রতুল, তাদের ক্ষেত্রে সমস্যা যথেষ্ট।”
সংসদের এই নির্দেশের বিরোধিতা করে বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, “সরকার বা সংসদ যত দমন পীড়নের রাস্তা নেবে, ততই তারা অপদস্থ হবে। যেটা মধ্যশিক্ষা পর্ষদের ক্ষেত্রে প্রমাণিত হচ্ছে। তা ছাড়া যারা আগে থেকে এই ধরনের ছুটি নিয়ে রেখেছেন, তাঁদের কি হবে। সেটা স্পষ্ট করা দরকার।”
বেশ কিছু শিক্ষক সংগঠনের বক্তব্য, যাঁদের সন্তানরা বোর্ডের পরীক্ষা দিচ্ছে এবং সে কারণে যাঁরা ছুটি নিচ্ছেন, তাঁদের কি ছুটি দেওয়া হবে না? সেই বিষয়টি কেন স্পষ্ট করা হল না।
মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা সম্পাদক অনিমেষ হালদার বলেন, “যাঁদের ছেলে-মেয়ে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা, সিবিএসই বা আইএসসি বোর্ডের পরীক্ষা দেবে, তাঁদেরকে এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখা উচিত। এই সময় সিবিএসই বা আইএসসি বোর্ডের বাৎসরিক পরীক্ষা হয়। ফলে যে স্কুলে উচ্চমাধ্যমিকের সিট পড়ছে না, সন্তানদের পরীক্ষার কথা বিবেচনা করে সেই স্কুলের শিক্ষকদের এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখা দরকার।”
উল্লেখ্য,নয়া নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষকরা চাইল্ড কেয়ার লিভ নিতে পারেন ৩০ দিন। আর শিক্ষিকারা চাইল্ড কেয়ার লিভ ও মাতৃত্বকালীন ছুটি মিলিয়ে মোট ৭২০ দিন ছুটি নিতে পারেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy