প্রতীকী চিত্র।
শুক্রবার শুরু হচ্ছে চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। স্কুলজীবনের শেষ বড় পরীক্ষা হলেও, ভবিষ্যতে কেরিয়ার গড়ার জন্য এর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। তাই পরীক্ষা নিয়ে পরীক্ষার্থী এবং তাঁদের বাবা-মায়ের উদ্বেগও রয়েছে। সেই কথা মাথায় রেখেই একেবারে শেষ মুহূর্তে কী কী করণীয় এবং পরীক্ষাকেন্দ্রে কী কী মাথায় রাখা জরুরি সেই বিষয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষাবিদ পার্থ কর্মকার। পাশাপাশি, ভাগ করে নিয়েছেন প্রথম দিনের বাংলা পরীক্ষা সংক্রান্ত জরুরি টিপসও।
এত দিনের প্রস্তুতি পর্বের পর পরীক্ষার আগের দিন পরীক্ষার্থীদের বেশ কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে, সেগুলি হল—
১) প্রতি দিন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতে হবে পরীক্ষার্থীদের। তাই যাতে তাড়াহুড়োর ফলে অযথা টেনশন করে মনের উপর চাপ সৃষ্টি না হয় তার জন্য বেশ খানিকটা সময় হাতে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরোতে হবে তাঁদের। সেই অনুযায়ী পরীক্ষার আগের দিনই বেরোনোর সময় ঠিক করে নিতে হবে পরীক্ষার্থীদের।
২) পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশের জন্য যে দু’টি জিনিস প্রতি দিন সঙ্গে রাখা জরুরি, সেগুলি হল— অ্যাডমিট কার্ড এবং রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট। তাই পরীক্ষার আগের দিনই এই দু’টি নথি ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখতে হবে পরীক্ষার্থীদের।
৩) একই সঙ্গে পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পেন, পেনসিল নিতে যাতে কোনও ভুল না হয় সেই জন্য আগের দিনই সব গুছিয়ে নিতে হবে।
৪) উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের নির্দেশিকা অনুযায়ী, মোবাইল ফোন, ক্যালকুলেটর বা কোন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ করা যাবে না। তাই এই জিনিসগুলি ভুলেও নেওয়া যাবে না।
৫) এ ছাড়াও ছাতা, জলের বোতল, ট্রান্সপারেন্ট রাইটিং বোর্ড ব্যাগে রাখতে হবে।
পরীক্ষার দিন কী কী করণীয়?
১) যথাসময়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছনোর পর পর অ্যাডমিট কার্ডের সঙ্গে মিলিয়ে নিজেদের সিট নম্বর দেখে নিতে হবে। ‘ভেনু’-তে নোটিস বোর্ডেই লেখা থাকবে সিট নম্বর এবং রুম নম্বর। সেই অনুযায়ী পরীক্ষাকক্ষে বসতে হবে পরীক্ষার্থীদের।
২) পরীক্ষাকেন্দ্রে যে কোনও রকম সাহায্যের জন্য স্যর এবং ম্যাডামরা থাকবেন। তাই কোনও অসুবিধার সম্মুখীন হলে ভয় না পেয়ে তাঁদেরকে জানাতে হবে।
৩) পরীক্ষাকক্ষে ঢুকে প্রথমে খানিকক্ষণ চোখ বুজে বসে নিজেকে আত্মবিশ্বাস জোগানোর জন্য নিজের মনেই বলতে হবে—‘‘আমি পারবই, আজকে আমি সেরা।’’ সব সময় ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে হবে।
৪) উত্তরপত্রের প্রথম পৃষ্ঠার উপরে নাম, রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন এবং বিষয়ের নাম লেখার নির্দিষ্ট জায়গাটি অ্যাডমিট কার্ড দেখে পূরণ করতে হবে। উত্তরপত্রের প্রথম পৃষ্ঠার পিছনের পৃষ্ঠা থেকে উত্তর লেখা শুরু করা যাবে না।
৫) প্রশ্নপত্রে পার্ট এ এবং পার্ট বি— দুটি অংশ থাকবে। পার্ট বি-তে থাকবে এমসিকিউ এবং এসএকিউ। পার্ট এ-তে থাকবে বড় প্রশ্ন। পার্ট বি-র উত্তরগুলি মাথা ঠান্ডা রেখে করতে হবে। এগুলোতে পুরো নম্বর তোলার সুযোগ আছে। এর পর পার্ট এ-এর উত্তর করতে হবে। এই ক্ষেত্রে প্রত্যেকটা প্রশ্ন ভালো করে পড়ে নিয়ে যেগুলিতে পার্ট প্রশ্ন আছে সেইগুলি উত্তর করার চেষ্টা করলে নম্বর বেশি হবে।
৬) উচ্চ মাধ্যমিকের জন্য ছোট উত্তরপত্র দেওয়া হবে। তাই আলাদা ভাবে ‘লুজ শিট’ লাগবে। সেই ‘লুজ শিট’-এ রোল নং এবং নাম লিখতে হবে। এ ছাড়া, পৃষ্ঠা নম্বর দিলে খাতা গোছানোর সময় সুবিধা হবে।
৭) উত্তরপত্রের মার্জিনে কালি ব্যবহার না করে ভাঁজ করে মার্জিন করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
৮) সুন্দর হাতের লেখা, সঠিক উত্তর, নির্ভুল বানান পরীক্ষায় বেশি নম্বর পেতে সাহায্য করবে।
৯) পরীক্ষায় কালো এবং নীল কালি ব্যবহার করা ভাল। কখনওই সবুজ অথবা লাল কালি ব্যবহার করা যাবে না।
১০) পার্ট প্রশ্নের ভিতর তিনটি প্রশ্ন থাকলে উত্তর লেখার সময় তিনটি প্যারাগ্রাফ করে তার উত্তর লিখতে হবে।
১১) প্রশ্ন নির্বাচন করার পরে উত্তরপত্রে যখন উত্তর লিখতে যাবে তখন প্রশ্নের নম্বর লিখতে হবে।
১২) পরীক্ষা শেষের পর রিভিশন দেওয়ার মতো সময় রাখতে হবে।
১৩) যে পরীক্ষা হয়ে যাবে তা ভাল হল না খারাপ, সেই ভেবে অযথা সময় নষ্ট করা যাবে না। এতে মানসিক চাপের সৃষ্টি হতে পারে। পরের পরীক্ষার জন্য ভাবতে হবে এবং মন দিয়ে পড়তে হবে। বাড়িতে গিয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে পরের দিনের পরীক্ষার জন্য পড়াশোনা করতে হবে।
বাংলা পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ টিপস:
১) যে কোনও কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ নাটক থেকে উত্তর করবার সময়, অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী ‘কবি শরৎচন্দ্র বলেছেন’ কিংবা গদ্যরচনার ক্ষেত্রে, ‘সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্রের রাধারানী গল্পে’—এই ভাবে উত্তর শুরু করে, যা না লেখাই শ্রেয়। এ ক্ষেত্রে গল্প হলে বলতে হবে গল্পকার। নাটক হলে বলতে হবে নাট্যকার। কবিতা থেকে উত্তর করলে লিখতে হবে কবি।
২) এমসিকিউ উত্তর লেখার সময় কেবল মাত্র সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করতে হবে। সম্পূর্ণ বাক্য লেখার দরকার নেই।
৩) যে প্রশ্নে একটি বাক্যে উত্তর লিখতে হবে, সে ক্ষেত্রে সেই অংশটি কোথা থেকে নেওয়া হয়েছে, লেখক এর নাম কী, তা লেখা আবশ্যিক নয়। সরাসরি এক কথায় উত্তর লিখতে হবে।
৪) ব্যাখ্যাধর্মী প্রশ্নের উত্তরের ক্ষেত্রে উত্তরের একটা অংশ শেষ হলে, বাকি অংশ লেখার সময় অনুচ্ছেদ পরিবর্তন করতে হবে।
৫) আলোচনামূলক প্রশ্নের উত্তরের ক্ষেত্রে বিষয়টির এক একটি দিক ধরে অনুচ্ছেদ পরিবর্তন করে উত্তর লিখতে হবে।
৬) বানান ভুলের দিকে নজর দিতে হবে। সংসদের নতুন বানানবিধি মেনেই শব্দের বানান শুদ্ধ করতেই হবে।
৭) ছোট ছোট সরল বাক্যে, উত্তর লেখা অভ্যাস করতে হবে। জটিল দীর্ঘ বাক্য উত্তর না লেখাই ভাল।
৮) তৎসম শব্দ ব্যবহার করলে দোষ নেই। তবে দৈনন্দিন ব্যবহার্য শব্দগুলির প্রয়োগ ঘটাতে পারলে উত্তর অনেক বেশি ভাল হবে।
৯) ভাষা সাহিত্যের ক্ষেত্রে বর্ণগুলি পরিচ্ছন্ন ভাবে লিখতে হবে, যাতে পরীক্ষক এক ঝলকে প্রতিটি শব্দ চিনতে পারেন।
১০) বক্তব্যকে সুস্পষ্ট ও প্রাঞ্জল করবার জন্য যথাযথ ভাবে যতিচিহ্ন দেওয়া দরকার অর্থাৎ দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন এগুলো ঠিক ঠিক জায়গায় সঠিক ভাবে, উপস্থাপন করতে হবে।
১১) মূল উত্তরের তুলনায় প্রাসঙ্গিক কথা বেশি হলে উত্তরের মান নষ্ট হবে।
১২) সর্বোপরি প্রশ্ন অনুযায়ী সরাসরি উত্তর লিখতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy