প্রতীকী ছবি।
আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে ভীষণ ভালো লাগে অনুষ্টুপের। ছোটবেলায় মায়ের বকুনি খেতে হয়েছে কত বার! শুধুমাত্র রাতের ছাদে একা বসে তাঁরা গুনেছিল বলে। কিন্তু সেসবের পরোয়া না করেই কালো নিকশ অন্ধকারে সুদূর আলোকবর্ষের গ্রহদের খুঁজে নিতে শিখেছেন তিনি। শখ করে টিউশনি করে টাকা জমিয়ে একটা টেলিস্কোপও কিনে ফেলেছেন অনুষ্টুপ। এবার শুধু মহাকাশে পাড়ি দেওয়ার অপেক্ষা।
শুধু অনুষ্টুপই নয়, ওঁর মতো আরও বহু ছেলেমেয়ে মহাকাশে পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন দেখেন। তাঁদের মনে নীল গ্রহের বাইরে থাকা জগতটাকে নিয়ে অনেক প্রশ্ন জমতে শুরু করেছে। তার মধ্যে একটা প্রশ্ন খুবই সাধারণ। কোন বিষয় নিয়ে পড়লে পাড়ি দেওয়া যাবে বহির্বিশ্বে? সেই সাধারণ প্রশ্নের সূত্র ধরেই রইল কিছু তথ্য, যা অনুষ্টুপের মতো আরও হাজার হাজার ছেলে মেয়ের অনুসন্ধিৎসা মেটাতে পারবে।
অ্যাস্ট্রোফিজিক্স আসলে কী?
অ্যাস্ট্রোফিজিক্স বিষয়টি পদার্থবিদ্যার একটি শাখা। এই শাখায় মহাজাগতিক বস্তু, তাদের বৈশিষ্ট্য এবং মহাবিশ্বে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলির ভৌত প্রক্রিয়াগুলিকে ব্যাখা করে থাকে। পদার্থবিদ্যার যাবতীয় ভাবনার সঙ্গে মহাজাগতিক বস্তু অর্থাৎ গ্রহ-নক্ষত্র, ছায়াপথ, ব্ল্যাক হোল সহ আরও বহু বস্তুর উৎস, প্রকৃতি, বিবর্তনের পাশাপাশি মহাবিশ্বের পরিকাঠামোর রদবদলগুলিকে পর্যবেক্ষণ করে কিছু সিদ্ধান্তে আসার প্রক্রিয়াকরণ চলে এই বিষয়টিতে।
কী ভাবে শুরু করা যেতে পারে?
উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে অঙ্ক এবং পদার্থবিদ্যা, এই দুটি বিষয়ে পড়াশোনা করতে হবে পড়ুয়াদের। ন্যূনতম ৫০ শতাংশ নম্বর রাখার প্রয়োজন রয়েছে বোর্ডের পরীক্ষার ফলাফলে। এর পর জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় বসতে হবে শিক্ষার্থীদের। কারণ অ্যাস্ট্রোফিজিক্স বিষয়টি ভারতবর্ষের যে সমস্ত কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়ে থাকে, সেই সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার জন্য বিজ্ঞান এবং কারিগরি বিদ্যার সর্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষাগুলিতে উত্তীর্ণ হওয়া প্রয়োজন।
আরও কী কী প্রবেশিকা পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে?
‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোফিজিক্স এন্ট্রান্স এগজ়াম’, ‘জয়েন্ট অ্যাসেসমেন্ট টেস্ট ফর স্কিলস’ (জেস্ট), ‘জয়েন্ট অ্যাস্ট্রোনমি প্রোগ্রাম’ (জ্যাপ)-এর মত প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসতে পারবেন শিক্ষার্থীরা।
স্নাতকস্তরে কী এই বিষয় নিয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে?
ভারতবর্ষের বেশ কিছু বাছাই বিশ্ববিদ্যালয় এবং তাদের অধীনে থাকা কলেজগুলি থেকে অ্যাস্ট্রোফিজিক্স বিষয়টি স্নাতকস্তরে পড়ার সুযোগ রয়েছে। পড়ুয়ারা মহাকাশবিজ্ঞান বা অ্যাস্ট্রোনমি পড়েও পরবর্তীকালে স্নাতকোত্তর পর্বে অ্যাস্ট্রোফিজিক্স নিয়ে পড়তে পারবেন।
ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষার সুযোগ?
স্নাতকস্তরের পড়াশোনার পর যদি স্নাতকোত্তর বা উচ্চশিক্ষার আরও ধাপ পেরোতে চান, সেক্ষেত্রে পিএইচডি করার সুযোগ পেতে পারেন শিক্ষার্থীরা।
কোন কোন প্রতিষ্ঠানে মিলবে পড়াশোনার সুযোগ?
‘দ্য ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোফিজিক্স’, ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ স্পেস সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’, ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স’, ‘ওসমানিয়া ইউনিভার্সিটি’, ‘টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ’ — এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানে অ্যাস্ট্রোফিজিক্স বিষয়টি পড়ানো হয়ে থাকে।
কাজের সুযোগ কেমন?
শেষ ১০ বছরে মহাকাশ বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে পেশায় প্রবেশের সুযোগ ক্রমশ বেড়েছে। বিজ্ঞানী পদের পাশাপাশি গবেষক হিসেবেও নিয়োগ করা হচ্ছে ডিগ্রিপ্রাপ্তদের। কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাঁদের আরও উন্নত প্রযুক্তির সঙ্গে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। ছয় থেকে সাত অঙ্কের আকর্ষণীয় বেতনে ‘অবজারভেশনাল রিসার্চ অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্ট’, ‘থিয়োরেটিক্যাল রিসার্চ অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্ট’, মহাকাশ বিজ্ঞানী, মহাকাশচারীর পদে কাজের সুযোগ পাবেন শিক্ষার্থীরা।
তাই মহাকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে তারা গুনে থেমে থাকার দিন শেষ। এবার প্রস্তুতি নিতে হবে, মহাকাশে পাড়ি দেওয়ার, বহির্বিশ্বের আরও রহস্য জেনে নেওয়ার। তবেই তো ভারতবর্ষ ফের বিক্রম সারাভাই, হোমি জাহাঙ্গীর ভাবার মতো বিজ্ঞানীদের সঙ্গে নবীন স্নাতকদের নাম বিশ্ব মানচিত্রে পেশ করতে পারবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy