অন্যান্য গবেষণাপত্র পড়ার অভ্যাস থাকা দরকার। ছবি: সংগৃহীত।
কোন বিষয় নিয়ে পড়ব? কিংবা কোন পেশা বেছে নেব? এই সমস্ত কিছুর সিদ্ধান্ত এখন স্কুল স্তরে সেরে নেয় পড়ুয়ারা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মা-বাবা বা অভিভাবকদের সিদ্ধান্তও মেনে নিয়ে এগিয়ে চলে তারা। তেমন কিছু হলে পরবর্তীকালে পেশাগত ক্ষেত্রের ওই সিদ্ধান্তই খানিকটা সমস্যার কারণ হয়ে উঠতে পারে। কারণ, জোর করে পড়াশোনা করে ডিগ্রি অর্জন এবং পছন্দের বিষয় নিয়ে চর্চার মধ্যে অনেকটাই ফারাক। গবেষণার ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা খানিকটা একই রকম।
ছোট থেকেই পড়ুয়াদের মধ্যে কোন বিষয় নিয়ে আগ্রহ রয়েছে, অবসরে সেই বিষয় নিয়ে সে কতটা চর্চা করছে কিংবা ইন্টারনেটে ওই বিষয়টি সম্পর্কিত কোনও ভিডিয়ো দেখছে কি না— এই সমস্ত বিষয় কিছুটা প্রাথমিক ধারণা তৈরি করে। আর এই ধারণাই পরবর্তীতে উচ্চশিক্ষার বিষয় নির্বাচনের উপরও বিশেষ ভাবে প্রভাব ফেলে।
উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে এই বিষয় নির্বাচন সঠিক ভাবে হওয়া খুব জরুরি। বিশেষত, বিজ্ঞান শাখার বিষয় নিয়ে পড়াশোনার ক্ষেত্রে যে ধরনের প্রতিবন্ধকতা আগে ছিল, এখন সে ক্ষেত্রে অনেকটাই বেশি স্বাধীনতা রয়েছে। তাই ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনা শেষ করার পরে যে বিষয় নিয়ে গবেষণা করতে ইচ্ছুক, সেই বিষয়টি রাষ্ট্রসঙ্ঘের রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘সুস্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্য’ পূরণ করছে কি না, তা দেখে নিতে হবে। যদি তা হয়, সে ক্ষেত্রে গবেষণার মানোন্নয়নের সম্ভাবনা রয়েছে।
এ ক্ষেত্রে বলে রাখা প্রয়োজন, ‘সুস্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্য’ শুধুমাত্র বিজ্ঞান শাখার বিষয়ের উপর জোর দেয় না। আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির উপরেও নজর রাখে। রাষ্ট্রপুঞ্জের তিনটি লক্ষ্য— পুষ্টি, ক্ষুধানিবৃত্তি, লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণের মতো মাপকাঠিতে কোন দেশ কতটা এগিয়ে বা পিছিয়ে, সেই সমস্ত বিষয়গুলির ছবি গবেষণাপত্র থেকেই পরিস্কার হয়।
তাই, গবেষণার জন্য কাল্পনিক এবং অবাস্তব বিষয়বস্তু নির্বাচন করা যাবে না। তবে, প্রথম গবেষণা থেকেই কেউ নোবেল পুরস্কার পায় না-- এটাও মাথায় রাখতে হবে। এমন পুরস্কার সারা জীবনের গবেষণার পরেও না মিলতেই পারে। কাজেই নিজের গবেষণাগারে থাকা যন্ত্র ও অন্যান্য পরিকাঠামো, এবং সর্বোপরি অর্থ সহায়তা(বিভিন্ন প্রজেক্ট বা ইনস্টিটিউটের তরফে গাইড কতটা দিতে পারছেন এবং কতটা গবেষক নিজে ফেলোশিপ থেকে পারবেন)— এই সমস্ত বিষয়গুলি বুঝে তবেই বিষয় নির্বাচন করা উচিত। তবে, যথাযথ আর্থিক অনুদানের উপর নির্ভর করে একটি বা দু’টি বিষয়ের জন্য অন্য গবেষণাগারের সাহায্য নেওয়া যেতেই পারে।
গবেষকদের কাজের উন্নতির বিষয়টি অনেকটাই তাঁর গবেষণাপত্রের মান কিংবা পেটেন্ট-এর অনুমোদনের উপর নির্ভর করে। তাই, যে বিষয় নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে, তার সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে গাইডের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করা প্রয়োজন। কারণ গবেষণাপত্র প্রকাশ এবং তার পেটেন্ট পাওয়া— দুটোই অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ বিষয়। কাজেই গবেষণার কাজ করতে করতে কিছু কিছু বিষয়ে আশাতীত ফল পেতে শুরু করলেই গবেষণাপত্র লেখা শুরু করে দিতে হবে। এতে থিসিস জমা দেওয়ার সময়ে ভাল জার্নালের গবেষণাপত্র তৈরি থাকবে। তবে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-র নিয়মানুসারে ওই থিসিস প্রস্তুত করতে হবে।
ইউজিসি-র নিয়ম সম্পর্কে জানতে হলে, ‘ইউজিসি কেয়ার’ শীর্ষক একটি তালিকা দেখে নিতে হবে, যে তালিকায় অনুমোদিত জার্নালগুলি নথিভুক্ত থাকে। সেই জার্নালগুলি কী ভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে, কী কী নির্দেশিকা মানা হয়েছে, সেই বিষয়গুলি নিজের জার্নাল তৈরির ক্ষেত্রে মানা হয়েছে কি না— তা যাচাই করে নিতে হবে। তাই, গাইডের পাশাপাশি, জার্নাল প্রকাশের আগে এই বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে নেওয়া বিশেষ ভাবে প্রয়োজন।
তবে, আন্তর্জাতিক মানের গবেষণার বিষয়ের ক্ষেত্রে ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর বিষয়টিও খতিয়ে দেখতে হবে। কারণ এর ভিত্তিতে জার্নালের মান নির্ধারিত হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে গবেষকদের জার্নাল সাইটেশন রিপোর্ট লিস্ট দেখে বুঝতে হবে, তার গবেষণার বিষয়টি একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কত বার অন্যান্য জার্নালের মাধ্যমে সাইট করা হয়েছে। প্রতি বছর এই তালিকার প্রকৃতি পরিবর্তিত হয়ে থাকে। তাই কোন ক্ষেত্রে কী কী পরিবর্তন হচ্ছে, সেই বিষয়গুলি নিয়েও নিয়মিত চর্চায় থাকতে হবে। ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ এগ্রিকালচারাল সায়েন্সেস-এর তরফেও সায়েন্টিফিক জার্নালের মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে, যার নাম ‘নাস রেটিং’। কৃষি বা সমতুল বিষয়ে গবেষণারত ব্যক্তিরা এই তালিকা থেকে নিজের জার্নালের বিষয় যাচাই করে নিতে পারবেন।
পাশাপাশি, গবেষণার বিষয় কী হতে পারে, সেই বিষয়টিও এক ধরনের গবেষণা। তাই পছন্দের বিষয় নিয়ে কাজের জন্য সেই সম্পর্কিত যাবতীয় গবেষণাপত্র ও রিভিউ পড়ার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। এই অভ্যাসকে ‘লিটারেচার সার্চ’-ও বলা হয়। পড়াশোনার সঙ্গে নিয়মিত ভাবে এই চর্চা করতে পারলে রিভিউ বা সিস্টেম্যাটিক রিভিউ কী ভাবে লেখা যেতে পারে, সেই সম্পর্কেও স্বচ্ছ ধারণা তৈরি করা সম্ভব।
লেখক পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy