লিফলেটের মাধ্যমে তথ্যের আদান প্রদান করছেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের গণজ্ঞাপন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত
পাঠ্য বই আর পরীক্ষাই শিক্ষার্থীদের জীবনের সবটুকু ঘিরে থাকে না। পাঠ্য বইয়ের বাইরে যে অভ্যাসগুলি তাঁরা গড়ে তোলেন, তা ভবিষ্যতে পেশাদার জীবনেও অনেক সাহায্য করে থাকে। গণজ্ঞাপন বিষয়টি যে শুধুমাত্র পাঠক্রমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, তা নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ক্ষেত্রে আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু স্নাতকোত্তর স্তরে এই বিষয়টির ব্যবহারিক প্রয়োগ কী ভাবে করা সম্ভব, বা পাঠক্রমের মধ্যে থেকেই সোশাল কিংবা কমিনিউটি আউটরিচ-এর মতো কো-কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিকে বাস্তবায়িত কী ভাবে করা যেতে পারে, এই সমস্ত বিষয় নিয়ে স্নাতকোত্তর স্তরে পাঠরত শিক্ষার্থীদের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে।
তাঁদের আরও মনে হতে পারে, বই এবং তার বাইরের জগতের সঙ্গে কী ভাবে সামঞ্জস্য বজায় রাখা যেতে পারে? আর কেনই বা তাঁদের এই বিশেষ অভ্যাস গড়ে তোলার বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে? এই সব বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন রয়েছে। সেই সমস্ত বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন রাজ্যের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণজ্ঞাপন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান তথা অধ্যাপক।
কমিউনিটি কিংবা সোশাল আউটরিচের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বাড়ানোটাই আসল উদ্দেশ্য। পুথিগত জ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগের কথা ভেবেই এই কো কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিগুলিকে সাজানো হয়ে থাকে। সামাজিক সমস্যার সমাধান, এবং সেই বিষয়টি নিয়ে লাগাতার সচেতনতা মূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা, প্রয়োজনে সরকারি সহযোগিতার মাধ্যমে প্রত্যন্ত এলাকায় পৌঁছে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া জেনে নেওয়া— এই সমস্তটাই শিক্ষার্থীদের পরবর্তী পর্যায়ের জন্য দক্ষ করে তোলে।
এই প্রসঙ্গে বিভাগীয় প্রধান জানিয়েছেন, ‘‘সম্প্রতি ৬ অগস্ট বর্ধমান জেলা পুলিশ এবং সাইবার সেল বিভাগের যৌথ সহযোগিতায় ‘নিজের দায়িত্বে সাইবার সুরক্ষা’ শীর্ষক কর্মসূচির মাধ্যমে বর্ধমান শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে সাইবার আইন নিয়ে সচেতনতামূলক পথনাটিকার আয়োজন করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণজ্ঞাপন বিভাগের চতুর্থ সেমেস্টারের পড়ুয়ারা। এই কর্মসূচির পরিকল্পনাটি কমিউনিটি আউটরিট প্রোগ্রামের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় কোন বিষয়ে কী ভাবে কাজ হবে, এবং সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের অনুমতি নিয়ে কাজ করে নেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলেছেন শিক্ষার্থীরাই। এই ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে যেমন বিভিন্ন পেশাদার মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে উঠছে, তেমনই সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে তাঁরা ওয়াকিবহাল হয়েছেন।’’
গণজ্ঞাপন বিভাগের এই ধরনের কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীরা আর কোন কোন বিষয়ে অবগত হওয়ার সুযোগ পাবেন? প্রশ্নের উত্তরে বিভাগীয় প্রধান জানিয়েছেন, ‘‘সাইবার সুরক্ষা এবং আইন সম্পর্কে সচেতনতা মূলক প্রচারের হাত ধরে শিক্ষার্থীরা পাঠক্রমের ব্যবহারিক প্রয়োগের প্রথম ধাপে পা দিয়েছেন। সেই হিসাবে প্রাথমিক স্তরে সাইবার অপরাধের শিকার হয়েছেন, এমন মানুষজনের সঙ্গে তাঁদের কথা বলার সুযোগ হয়েছে। গণজ্ঞাপনের পাঠক্রম জনসাধারণের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের শিক্ষা দেয়, কিন্তু সেই শিক্ষার ব্যবহারিক ক্ষেত্রে প্রয়োগ কোন কোন পদ্ধতিতে করা যেতে পারে, সেই সমস্ত অভিজ্ঞতা তাঁরা পথনাটিকা সংগঠিত করতে গিয়ে অর্জন করেছেন। শিক্ষার্থীরা পথনাটিকার সংলাপের মাধ্যমে অতি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেশ করার মাধ্যমে জনসাধারণকে সচেতন করতে যেমন পেরেছেন, তেমনই তাঁদের প্রতিক্রিয়াও পুলিশ এবং প্রশাসনের কাছে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছেন।’’
১৩ অগস্ট বর্ধমান শহর ছাড়িয়ে শেয়ারাবাজার এবং রায়না অঞ্চলে দ্বিতীয় দফায় বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের গণজ্ঞাপন বিভাগের শিক্ষার্থীরা পথনাটিকার আয়োজন করেছিলেন। এই কর্মসূচিতে বর্ধমান জেলা পুলিশের সদর দক্ষিণের এসডিপিও সুপ্রভাত চক্রবর্তী, আইপিএস অফিসার শ্রীনিবাসন এমপি, সার্কেল ইন্সপেক্টর অফ পুলিশ সুব্রত ঘোষ এবং রায়নার অফিসার ইন চার্জ সৈকত মণ্ডল উপস্থিত ছিলেন।
বিভাগীয় প্রধান এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ‘‘সাইবার সুরক্ষা এবং আইন সংক্রান্ত বিষয়ে পথনাটিকা সংগঠনের ক্ষেত্রে পুলিশি সহযোগিতা পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা পেশাদার এবং অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। তাঁরা জানতে পেরেছেন, গ্রামবধূ থেকে শুরু করে মাঠে কর্মরত কৃষক— সকলেই নানান ভাবে অনলাইনে প্ররোচনার প্রলোভনে পা দিয়ে সাইবার অপরাধের শিকার হয়েছেন। আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন সাধারণ মানুষদের কাছে এই পথনাটিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, এমন বার্তা দেওয়া হয়েছে পুলিশ প্রশাসনের তরফেও। শিক্ষার্থীরা আইপিএস অফিসার শ্রীনিবাসন এম.পি-এর তরফে এই ‘বিয়ন্ড দ্য ক্লাসরুম’ কর্মসূচিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব পেয়েছেন। গণজ্ঞাপনের রুরাল ডেভেলপমেন্ট মডিউলের মাধ্যমে তাঁদের পকসো আইন এবং গার্হস্থ্য হিংসা নিয়ে সচেতনতামূলক পথনাটিকা আয়োজন করার উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।’’
খুব স্বাভাবিক ভাবে, গণজ্ঞাপন বিষয়টি বর্তমানে যে পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, তা দাবি করা যেতেই পারে। এই ধরনের ব্যবহারিক প্রয়োগের অভ্যাসের কারণে শিক্ষার্থীদের পরবর্তী জীবনে পেশায় প্রবেশের ক্ষেত্রে কোনও রকম জড়তা তাঁদের মধ্যে কাজ করবে না। এই অভ্যাসের কারণে শিক্ষার্থীদের মনোবলও বাড়বে যথেষ্ট, মত অধ্যাপকের।
(উল্লিখিত বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের গণজ্ঞাপন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান তথা অধ্যাপক রাজেশ দাস।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy