Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Sundarbans

বাঘের খাদ্য

আমপানের পর হইতে এ যাবৎ বাঘের আক্রমণে যত মৃত্যু ঘটিয়াছে, তাহা গত বৎসরে বাঘের আক্রমণে মোট মৃত্যুর সংখ্যাকে ছাড়াইয়াছে।

শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০০:০০
Share: Save:

সুন্দরবনে চার দিনে তিন ব্যক্তিকে বাঘে লইয়াছে। আমপানের পর হইতে এ যাবৎ বাঘের আক্রমণে যত মৃত্যু ঘটিয়াছে, তাহা গত বৎসরে বাঘের আক্রমণে মোট মৃত্যুর সংখ্যাকে ছাড়াইয়াছে। বাঘেরা হিংস্রতর হইয়া উঠে নাই, মানুষই জীবিকার খোঁজে বাঘের মুখে পড়িতেছেন। বন দফতরের সতর্কবার্তা অগ্রাহ্য করিয়া অনেকে কাঁকড়ার খোঁজে গভীর জঙ্গলে ঢুকিতেছেন। সুন্দরবনের মৎস্যজীবীরা জানাইয়াছেন, আমপানের পর নদীর জল অত্যন্ত লবণাক্ত হইয়াছে, মাছ মিলিতেছে না— কাঁকড়াই ভরসা। জীবিকার এমন সঙ্কট যে দেখা দিবে, তাহা অজানা ছিল না। আমপানের পূর্বাভাস মিলিবার সময় হইতেই বার বার আলোচিত হইয়াছে। কিন্তু ঝড়ের তিন মাস পরেও সরকারের ঝুলিতে দিবার মতো আছে কেবল একশত দিনের কাজ এবং রেশনের চাল। চাষের জমিতে বিকল্প ফসল, পুকুরগুলিকে লবণমুক্ত করিয়া ফের মৎস্যচাষ, প্রাণিপালন, মহিলাদের বৃত্তিমুখী প্রশিক্ষণ ও নিযুক্তি, এ সকলই গালভরা পরিকল্পনা হইয়া রহিয়া গিয়াছে। অগত্যা দলে দলে মানুষ সুন্দরবন হইতে পাড়ি দিতেছেন ভিন্‌রাজ্যে। সংবাদে প্রকাশ, অন্তত দশ হাজার মৎস্যজীবী সুন্দরবন হইতে ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ুতে চলিয়া গিয়াছেন। অন্যান্য জীবিকায় নিযুক্ত আরও কত ব্যক্তি অন্য রাজ্যে গিয়াছেন, কত জন কলিকাতার উড়ালপুলের নীচে সংসার পাতিয়াছেন, গ্রামবাসী হইতে পথবাসী বা বস্তিবাসীতে পরিণত হইয়াছেন, তাহার হিসাব নাই। পরিযায়ী শ্রমিকদের নথিভুক্তির কথা পঞ্চায়েতের। কিন্তু পঞ্চায়েত যদি গ্রামবাসীর খোঁজ রাখিত, তবে তাঁহাদের গ্রাম ছাড়িতে হইত কি?

আক্ষেপ, আয়লা-পরবর্তী পরিস্থিতি হইতে রাজ্য কিছুই শিখিল না। এক দশক পূর্বের সেই ঝড়ের তাণ্ডব শেষেও আর্তদের জন্য ত্রাণ ও তাহার বিতরণে দুর্নীতি লইয়া যত আলোচনা হইয়াছিল, গ্রামবাসীর জীবিকার সুরক্ষা লইয়া তত হয় নাই। সেই বার স্পষ্ট হইয়াছিল যে, দুর্যোগের সর্বাপেক্ষা দীর্ঘস্থায়ী প্রকোপ জীবিকায়। আয়লার পরে বহু পুরুষ পরিচিত জীবিকা হারাইয়া ভিন্‌রাজ্যে চলিয়া গিয়াছেন, শিশু ও বৃদ্ধদের লইয়া গ্রামে রহিয়া গিয়াছেন মেয়েরা। দৈনন্দিন অন্নের সংস্থান তাঁহাদের পক্ষে সর্বাপেক্ষা কঠিন। নদীর ধারে গর্ত হইতে কাঁকড়া তুলিয়া, ভোর রাতে নদীতে মীন ধরিয়া তাঁহারা সংসার প্রতিপালন করেন। অবশিষ্ট পুরুষরা কাঠ বা মধু আহরণে গিয়া কী রূপ বিপন্ন হইয়া পড়েন, তাহার বিবরণ একবিংশ শতাব্দীর ভারতকে নতমস্তক করিতে বাধ্য।

সুন্দরবন অঞ্চলের জন্য পৃথক উন্নয়ন পর্ষদ, বিশেষ তহবিল, বিবিধ প্রকল্প এবং আলাদা বরাদ্দের ব্যবস্থা করিয়াছে রাজ্য সরকার। সেই সঙ্গে বিভিন্ন অসরকারি সংস্থাও তাহাদের ‘মানব উন্নয়ন’-মূলক কাজের বিস্তার বাড়াইয়াছে সুন্দরবনে। কিন্তু বাস্তবে জীবিকার সুরক্ষা ও রোজগারে উন্নতি সামান্যই মিলিয়াছে। মাছের ভেড়ি এবং ইটভাটা, এই অঞ্চলের দুইটি প্রধান জীবিকাই বহুলাংশে অবৈধ এবং অপরাধপ্রবণ। ফসল ফলাইয়াও চাষির ন্যায্য দাম মিলিবার আশা কম। একশত দিনের কাজ যথেষ্ট নাই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও সরকারি প্রকল্পের রূপায়ণ, এই দুইটি মৌলিক কর্তব্য সরকার করিতে পারিলে উন্নয়ন হয়তো সম্ভব হইত। হয় নাই বলিয়াই আজ হয় জঙ্গলে, নাহয় প্রবাসে জীবিকার সন্ধান করিতে হইতেছে সুন্দরবনবাসীকে।

অন্য বিষয়গুলি:

Sundarbans Tigers Cyclone Amphan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy