Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus Lockdown

কেন্দ্রের দয়া

আমপান নামক বিপর্যয় যে মাত্রার, তাহাতে এই বরাদ্দ যে অগ্রিম হিসাবেও অকিঞ্চিৎকর, তাহা বলিবার অপেক্ষা রাখে না। 

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০২০ ০০:৪৫
Share: Save:

ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত পশ্চিমবঙ্গকে এক হাজার কোটি টাকা ‘অগ্রিম’ দিবার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে হেলিকপ্টার হইতে স্বচক্ষে বিপর্যয়ের দৃশ্যাবলি অবলোকন করিতে হইল কেন, সেই প্রশ্ন তুলিলে হয়তো তাঁহার প্রতি অবিচার হইবে। এই দেশে ইহাই রীতি। সরকারি কর্তারা ঝড়তুফানে লন্ডভন্ড বা বন্যায় প্লাবিত অঞ্চল আকাশ হইতে পরিদর্শন করিয়াই থাকেন, সেই ঝাঁকিদর্শনে তাঁহারা হয়তো-বা উপলব্ধি করিতে পারেন মানুষের কত কষ্ট হইতেছে। তাহাতে বিপন্ন মানুষের অবশ্য লাভ নাই, তাঁহাদের মাথা তুলিয়া হেলিকপ্টার দর্শনই সার। তাঁহারা বরং বলিবেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁহার অমূল্য সময় খরচ করিয়া আসিলেন এবং দেখিলেনই যদি, অগ্রিম বরাদ্দ মাত্র হাজার কোটিতে সীমিত থাকিল কেন? ভারত সরকারের আঙুল দিয়া ইহার বেশি গলিল না? বিশেষত, কেন্দ্রের নিকট যখন জিএসটি বাবদ বকেয়া ক্ষতিপূরণ ইত্যাদি নানা খাতে রাজ্য সরকারের প্রাপ্য অন্তত ৫০০০০ কোটি টাকা? প্রধানমন্ত্রীর সফরের পরে মুখ্যমন্ত্রী এই বকেয়া প্রাপ্যের উল্লেখ করিয়াছেন। এক হাজার কোটি টাকার স্বল্পতা লইয়া তিনি সরাসরি মন্তব্য করেন নাই, করিবার প্রয়োজনও নাই। আমপান নামক বিপর্যয় যে মাত্রার, তাহাতে এই বরাদ্দ যে অগ্রিম হিসাবেও অকিঞ্চিৎকর, তাহা বলিবার অপেক্ষা রাখে না।

কিন্তু মূল প্রশ্নটি অগ্রিমের অঙ্ক লইয়া নহে, মূল প্রশ্ন এই ধরনের বিপর্যয়ের মোকাবিলায় সরকারি ব্যয় নির্ধারণের প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে। বিধিবদ্ধ ব্যবস্থা অনুসারে, অতঃপর কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দল আসিবেন, ক্ষয়ক্ষতি পর্যবেক্ষণ করিবেন, কেন্দ্রের নিকট রিপোর্ট দাখিল করিবেন, সেই অনুসারে পশ্চিমবঙ্গের (এবং ওড়িশার) ত্রাণ-বরাদ্দ নির্ধারিত হইবে। সেই অবধি, ওই প্রাথমিক হাজার কোটি টাকা বাদে, ত্রাণ ও পুনর্বাসনের সরকারি দায়ের ষোলো আনাই রাজ্য প্রশাসনের। পর্যবেক্ষক দলের হিসাবনিকাশ যথাযথ হইবে, তাহার কিছুমাত্র নিশ্চয়তা নাই। সেই হিসাবে রাজনীতির জল কতটা মিশিয়া থাকিবে, কাহারও জানা নাই। সাম্প্রতিক অতীতে বিভিন্ন রাজ্যে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকারের কোষাগার হইতে যে অর্থ বরাদ্দ হইয়াছে, তাহার তালিকায় দলীয় রাজনীতি তথা আনুগত্যের দীর্ঘ ছায়া পড়িবার অভিযোগ উঠিতেই পারে। কেন্দ্রীয় শাসকরা হয়তো বলিবেন, এই অভিযোগ মিথ্যা, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এই তর্কের মীমাংসা নাই, কারণ বিপর্যয়ের সর্বজনস্বীকৃত হিসাব আক্ষরিক অর্থেই দুর্লভ। স্বীকার করিতে হইবে, এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এই জমানাতেই প্রথম উঠে নাই, ইহা পুরানো এবং বহুলপরিচিত ঐতিহ্য।

সেই কারণেই মৌলিক প্রশ্ন অর্থ বরাদ্দের ব্যবস্থাটি লইয়া, সেই ব্যবস্থার অন্তর্নিহিত বিধি লইয়া। এই বিধিব্যবস্থা, এক কথায়, যুক্তরাষ্ট্রীয় আদর্শের বিপরীত। অন্য নানা বিষয়ের মতোই বিপর্যয়ের মোকাবিলাতেও এ দেশে অর্থের জন্য রাজ্য সরকারকে কেন্দ্রের মুখাপেক্ষী থাকিতে হয়, ইহা যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মে সহে না, সহিবার কথা নহে। সঙ্কটের মুহূর্তেও সেই অধর্মই প্রকট হইয়া উঠিতেছে। স্পষ্ট করিয়া বলা জরুরি যে, ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নির্ণয়ের একটি যথাযথ ব্যবস্থা নিশ্চয়ই থাকা দরকার। দক্ষতার স্বার্থেও দরকার, বিশ্বাসযোগ্যতার স্বার্থেও। কিন্তু সেই ব্যবস্থা ‘কেন্দ্রীয়’ হইবে কেন? কোন যুক্তিতে? রাজ্য এবং কেন্দ্র, দুই তরফের সম্ভাব্য প্রভাব হইতে মুক্ত সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ একটি তদারকির আয়োজন এ ক্ষেত্রে আবশ্যক। কিন্তু এ দেশে তেমন নিরপেক্ষ আয়োজন বিরল। কেবল বিপর্যয়ের মোকাবিলায় নহে, সাধারণ ভাবেই বিরল। এখানেই আধিপত্যবাদী মানসিকতার খেলা। যে মানসিকতায় প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টার হইতে নামিবার পরে এক হাজার কোটি টাকা দানের ঘোষণা হয়, তাহাই ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের ফলিত রূপ।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown Cyclone Amphan Cyclone
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy