Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Omar Abdullah

উদ্বেগ কাটিল না

অসুস্থ নেতা ফারুক আবদুল্লার মুক্তির দামই কি তাঁহার নীরবতা?

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২০ ০০:০৩
Share: Save:

আট মাসের নির্বাসন যতটা দুশ্চিন্তা তৈরি করিয়াছিল, নির্বাসনের অবসানও যেন ততখানিই নূতন দুশ্চিন্তার জন্ম দিয়া গেল। প্রবীণ কাশ্মীরি নেতা ফারুক আবদুল্লাকে মুক্তি দিয়া বিজেপি ঠিক কী বার্তা দিতে চাহিল, আলোচ্য কেবল ইহাই নহে। আরও অনেক বড় দুশ্চিন্তা ইহার মধ্যে প্রচ্ছন্ন রহিয়াছে। সদ্য-মুক্তিপ্রাপ্ত কাশ্মীরি নেতা কেন মুক্তি পাইবার পর সম্পূর্ণ নীরব থাকিতে মনস্থ করিলেন, সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলিলেন না, কেন কাশ্মীরের পরিস্থিতি লইয়া কোনও কথা বলিলেন না? তিনি ও তাঁহার পরিবার দেওয়াললিখন ভালই পড়িতে পারেন, এমন একটি কথা ইতিহাস জানাইয়াছে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠে, তিনি কি বুঝিয়াছেন যে কোনও কথা বলা এখন বিধেয় নহে, দেওয়ালের লিখনটি এমনই কঠোর? আরও একটি স্পষ্টতর অনুমান সম্ভব। অশক্ত, অসুস্থ নেতা ফারুক আবদুল্লার মুক্তির দামই কি তাঁহার নীরবতা? কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের কার্যবিধির সহিত পরিচয় থাকিলে এই অনুমানটিই সঠিক বলিয়া মনে করা যাইতে পারে। এবং পরবর্তী অনুমান হইতে পারে যে, আসন্ন ভবিষ্যতে হয়তো একই শর্তে অন্যান্য নেতারাও মুক্তি পাইবেন। এই ভাবে হয়তো কাশ্মীরের নেতাদের প্রথমে কয়েক মাস বন্দি করিয়া, তাহার পর ‘শর্তসাপেক্ষ’ মুক্তি দিয়া তাঁহাদের কার্যত অসক্রিয় করিয়া ফেলা হইতেছে। এই অনুমান সত্য হইলে বলিতে হইবে, কাশ্মীরের উপর এই বার একটি নূতন ধরনের চাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা দিতেছে। এমনিতেই ৩৭০ ধারা বিলোপের পর হইতে কাশ্মীরের সমাজ নানা দিক দিয়া চাপের মধ্যে নিমজ্জিত, পুরামাত্রায় ভিন্ন এক বাস্তবের সহিত মানাইয়া লইতে বাধ্য। উপত্যকার সব রকমের রাজনৈতিক মতের উপর এখন প্রতি দিন প্রতি প্রহর কঠিন শাসনশৃঙ্খল কড়া নজর রাখিতেছে। এমন পরিস্থিতিতে যদি প্রধান নেতাদের এই ভাবে অসক্রিয় করিয়া দেওয়া হয়, সমাজমানস হইতে নেতাদের দূরত্ব যদি এতখানি বাড়াইয়া দেওয়া হয়, তবে কী পরিণতি ঘটিতে পারে— বিষম আশঙ্কার বিষয়।

ঠিক এই কারণেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যাহাই বলুন না কেন, ৩৭০-পরবর্তী কাশ্মীরের ‘নূতন স্বাভাবিক’ বা ‘নিউ নরমাল’কে শেষ পর্যন্ত ‘স্বাভাবিক’ বলিয়া অভিহিত করা অসম্ভব। ইহা একটি বিকৃত স্বাভাবিকতা। উপত্যকার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত মতকে নানা ধরনের ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে চাপিয়া রাখা হইয়াছে। কাশ্মীরি স্কুলগুলি খুলিয়াছে, ছেলেমেয়েরা নাকি স্বাভাবিকতায় ফিরিয়াছে। কিন্তু এই সরকারি দাবির অন্দরে তদন্ত চালাইলে দেখা যাইবে যে চতুর্দিকের পলকহীন নজরদারি এবং দমচাপা ভয়ের পরিবেশে ছেলেমেয়েরা অনেকেই স্কুলে যাইতে অনিচ্ছুক, ত্রস্ত, এবং যাইলেও আতঙ্কের মধ্যে ঘণ্টা গণিয়া কোনওক্রমে বাড়ির নিরাপত্তায় ফিরিতে ব্যস্ত। এই মুহূর্তে কাশ্মীর উপত্যকা সর্বতো ভাবেই ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রের শৃঙ্খলে আটক। ফারুক আবদুল্লার মুক্তিতেও সেই শৃঙ্খলিত পরিস্থিতিরই চিহ্ন।

কখনও উষ্ণ কখনও শীতল— এহেন ‘হট অ্যান্ড কোল্ড’ পদ্ধতিতে কাশ্মীরের রাজনৈতিক নেতাদের চালাইতে দিল্লি অনেক দিনই অভ্যস্ত। কিন্তু বর্তমানে সেই পদ্ধতির ব্যবহার একটি ভিন্ন মাত্রায় পৌঁছাইয়াছে বলিয়া অনুমান। আবদুল্লা পরিবারের দল ন্যাশনাল কনফারেন্স এবং মুফতি পরিবার পরিচালিত দল পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, এই দুইটিকেই যদি দিল্লি সরকার বহুলাংশে বাগে আনিতে সফল হয়, তাহা হইলে বাকিদের ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ বলিয়া দাগাইয়া দেওয়া এবং অত্যন্ত কঠোর হাতে তাহাদের দমন করিবার কাজটি ভারী সহজ হইয়া যাইবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তাঁহাদের ‘মিশন কাশ্মীর’-এর চিত্রনাট্যটি সম্ভবত এই ভাবেই লিখিতেছেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Omar Abdullah Farooq Abdullah Kashmir
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy