Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Newsletter

এ বার অন্তত সতর্ক হয়ে যাওয়া উচিত

আর কত বড় ধাক্কা খেলে আমাদের প্রশাসন বুঝবে যে, এ ভাবে প্রশাসন চলে না। প্রশাসনে বা শাসনক্ষমতায় থাকতে গেলে সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধ থাকতেই হয়।

প্রিয়ঙ্কা শর্মা। ফাইল চিত্র।

প্রিয়ঙ্কা শর্মা। ফাইল চিত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৯ ০০:৫৬
Share: Save:

ভারতের সংবিধানে বা ভারতীয় আইনে ফাঁকফোকর একেবারেই নেই, তা নয়। ফাঁকফোকর অল্পবিস্তর রয়েছে এবং ক্ষমতাশালী বা প্রভাবশালীরা চিরকালই সে সবের সুযোগ নিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু এই ফাঁকফোকরের পরিমাণ নগণ্যই। ভারতীয় সংবিধানের বুনট এতটাও আলগা নয় যে, দিনের পর দিন বা বছরের পর বছর স্বেচ্ছাচারিতা চালানো যেতে পারে। তার প্রমাণ আরও এক বার মিলল।

স্বেচ্ছাচারিতা— এই শব্দটা সুপ্রিম কোর্ট ব্যবহার করেছে। মুখ্যমন্ত্রীর ছবি বিকৃত করার অভিযোগ তুলে হাওড়ায় বিজেপির যে যুবনেত্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, সেই প্রিয়ঙ্কা শর্মাকে জামিনে মুক্তি দেওয়া নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ পাওয়ার পরেও রাজ্য সরকার যে টালবাহানা চালিয়েছিল, সে প্রসঙ্গেই ‘স্বেচ্ছাচারিতা’ শব্দটা ব্যবহার করেছিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত। প্রিয়ঙ্কা শর্মাকে যে ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছিল, তা স্বেচ্ছাচারিতা ছাড়া আর কিছু নয়— সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতিদের এই মন্তব্যই রাজ্যপ্রশাসনকে লজ্জায় ফেলার জন্য যথেষ্ট ছিল। কিন্তু প্রশাসনের নিয়ন্ত্রকরা সম্ভবত যথেষ্ট লজ্জিত হননি। তাই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ পাওয়ার পরেও এক দিন অতিরিক্ত আটকে রাখা হয়েছিল বিজেপির যুবনেত্রীকে। সে বিষয়টাও সর্বোচ্চ আদালতের সামনে তুলে ধরা হয়। সর্বোচ্চ আদালত ফের রাজ্যপ্রশাসনের কৈফিয়ত তলব করে। তাতেও সম্ভবত যথেষ্ট লজ্জা অনুভূত হয়নি। অতএব এমনই এক কৈফিয়ত দেওয়া হয়েছে, যা সর্বোচ্চ আদালতকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। তাই এ বার আদালত অবমাননার নোটিস পেল পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসন।

আর কত বড় ধাক্কা খেলে আমাদের প্রশাসন বুঝবে যে, এ ভাবে প্রশাসন চলে না? প্রশাসনে বা শাসনক্ষমতায় থাকতে গেলে সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধ থাকতেই হয়। প্রশাসন কখনও শুধুমাত্র শাসকদলের স্বার্থরক্ষার হাতিয়ার হতে পারে না। আইন ও প্রশাসনকে পরস্পরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করতে হয়। আইনকে বুড়ো আঙুল দেখানোর জন্য শাসকদল ও প্রশাসন পরস্পরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে, এই অনাচার কখনও নিয়ম হয়ে উঠতে পারে না। শাসনক্ষমতা হাতে নেওয়ার আগে যে কোনও রাজনৈতিক নেতা বা নেত্রীর উচিত এই সীমাবদ্ধতাগুলোর কথা জেনে নেওয়া। প্রশাসনকে সারাক্ষণ একটা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক রঙে রাঙিয়ে রাখা যাবে, এমনটা আশা করে কেউ যদি শাসনক্ষমতা হাতে নেন, তা হলে সমস্যা তৈরি হবেই। সেটাই হল। এ রাজ্যের প্রশাসন স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়েছে, দেশের সর্বোচ্চ আদালত এই পর্যবেক্ষণে পৌঁছল, কৈফিয়ত তলব করল, অবশেষে আদালত অবমাননার নোটিসও ধরিয়ে দিল।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

আরও পড়ুন: প্রিয়ঙ্কা শর্মা-কাণ্ডে ফের ধাক্কা রাজ্য সরকারের, আদালত অবমাননার নোটিস ধরাল সুপ্রিম কোর্ট

আদালতের এই পর্যবেক্ষণ বা রায়টা আসার আগে কিন্তু জনতার পর্যবেক্ষণ বা রায় প্রকাশিত হয়েছে। এ বারের লোকসভা নির্বাচনে বাংলার জনতার রায় কিন্তু বাংলার শাসকবর্গকে হুঁশিয়ারি দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু সে হুঁশিয়ারিও কি শুভবুদ্ধির সঞ্চার ঘটাতে পারল না? যদি না পেরে থাকে, তা হলে ভবিষ্যৎ কিন্তু আরও কঠিন হতে পারে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy