Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

সংকটের পূর্বাভাস

তাপের প্রাবল্য এবং বৃষ্টির অনিশ্চয়তার জন্য কৃষিতে ক্ষতি হইবার সমূহ সম্ভাবনা। এই দুইটি বিষয়েই আগাম ব্যবস্থা না লইলে ক্ষতি বাড়িবে।

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৮ ০০:২৬
Share: Save:

চৈত্রের শুরুতেই বঙ্গভূমি পুড়িতেছে। কলিকাতায় পারদ ছাড়াইয়াছে পঁয়ত্রিশ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পাঁচ বৎসরের হিসাবে এই বৎসরে অন্তিম-ফাল্গুনের গড় তাপমাত্রা ছিল সর্বাধিক। মার্চ মাসের গোড়া হইতেই তাপের এই প্রাবল্যে বিস্মিত আবহাওয়া বিজ্ঞানীরাও। তবে এই বার গ্রীষ্ম যে প্রবল হইবে, সে বিষয়ে দিল্লির আবহাওয়া দফতর সময় থাকিতেই সাবধান করিয়াছে রাজ্যগুলিকে। সতর্ক হইতে হইবে প্রধানত দুইটি কারণে। এক, তাপপ্রবাহ জনস্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলিবে। দুই, তাপের প্রাবল্য এবং বৃষ্টির অনিশ্চয়তার জন্য কৃষিতে ক্ষতি হইবার সমূহ সম্ভাবনা। এই দুইটি বিষয়েই আগাম ব্যবস্থা না লইলে ক্ষতি বাড়িবে। বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং তজ্জনিত আবহাওয়া পরিবর্তন সত্য না কল্পনা, তাহা লইয়া বিশেষজ্ঞরা তর্কযুদ্ধ চালাইতে পারেন। ভারতে এই বিষয়গুলি প্রত্যক্ষ সংকট রূপে দেখা দিয়াছে। এই বৎসরের পূর্বাভাসও আশঙ্কাজনক। মার্চ হইতে মে, এই মাসগুলিতে উত্তর ও মধ্য ভারতের প্রায় সব রাজ্যে তাপাঙ্ক থাকিবে স্বাভাবিকের তুলনায় দুই হইতে পাঁচ ডিগ্রি অধিক। দেশের নানা রাজ্যে তাপপ্রবাহের সম্ভাবনা প্রবল। পশ্চিমবঙ্গ সর্বাধিক উত্তাপবৃদ্ধির তালিকায় নাই, কিন্তু আলিপুর আবহাওয়া দফতর মে মাস অবধি গড় তাপমাত্রার তুলনায় অর্ধ ডিগ্রি অধিক থাকিবার বার্তা আগাম শুনাইয়াছে।

সরকারি তথ্য বলিতেছে, ভারতে সতেরো লক্ষ মানুষ গৃহহীন, তাহাদের মধ্যে চার লক্ষ শিশু। এ রাজ্যে দশ শতাংশ পরিবারের গৃহ নাই। কিন্তু যাঁহারা গৃহে বাস করেন, তাঁহাদের গৃহই বা কেমন? বস্তিবাসী ক্রমশ বাড়িতেছে। বর্তমানে অন্তত দশ কোটি মানুষ বাস করেন বস্তিগুলিতে। তাপপ্রবাহে সেই ঘরগুলির কতটা বাসযোগ্য থাকিতে পারে? বিশেষত বৃদ্ধ, অশক্ত, শিশুরা নিজেদের রক্ষা করিতে অসমর্থ হইবার ফলে অধিক ক্ষতিগ্রস্ত হইবেন। সকল বয়সের মানুষেরই অতিরিক্ত তাপের জন্য কর্মক্ষমতার হ্রাস হয়। নানা অসুস্থতা ও দুর্বলতায় তাঁহারা আক্রান্ত হইয়া পড়েন। সরকার হইতে প্রবল গরমে পালনীয় স্বাস্থ্য-নির্দেশিকা যথেষ্ট সময় থাকিতে প্রচার করিতে হইবে। প্রয়োজনে স্কুল ও দফতরের সময়সূচির পরিবর্তনে তৎপর হইতে হইবে। পানীয় জলের সংকট এড়াইতে আগাম ব্যবস্থাও জরুরি। গ্রীষ্ম আসিলেই গ্রাম ও শহরে অগণিত মানুষ তীব্র জলকষ্টে ভুগিতে থাকেন। পাইপবাহিত জল ঘরে ঘরে পৌঁছাইবার প্রকল্প আজও এই রাজ্যে বিস্তার লাভ করে নাই। বহু অঞ্চলে বালি খুঁড়িয়া তৃষ্ণার জল বাহির করিতে হয়।

অপর সংকট কৃষি। বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা গত কয়েক বৎসরের তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের গতিবিধি বিশ্লেষণ করিয়া দেখাইয়াছে, আবহাওয়া উত্তরোত্তর অনিশ্চিত হইয়া উঠিতেছে। কোনও পরিচিত নকশাই মানিতেছে না। রবি ও খরিফ, উভয় চাষই ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছে। যে দেশে সেচ এখনও অর্ধেক চাষির নিকট পৌঁছায় নাই, সেখানে কৃষির বৃহৎ অংশ বৃষ্টি-নির্ভর থাকিতে বাধ্য। অতএব ফসল উৎপাদনে কত ঘাটতি হইতে পারে, তাহা আগাম বুঝিবার প্রযুক্তি প্রয়োগ প্রয়োজন। সেই অনুসারে চাষির নিকট দ্রুত ক্ষতিপূরণ এবং বিমার অর্থ পৌঁছাইবার ব্যবস্থা করিতে হইবে। দূষণ কমাইয়া উষ্ণতা কমাইবার দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যও পালন করা চাই, কিন্তু তাহা ফলপ্রসব করিতে সময় লাগিবে। তত দিনে মানুষের প্রাণ ও সম্পদ রক্ষা করিবার কাজ সরকারের।

অন্য বিষয়গুলি:

Weather Summer Alarming issue
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy