Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Waterbody

জলাভূমি রক্ষায় দরকার সচেতন প্রয়াস

হাওড়া জেলার জলাভূমিগুলি অর্থকরী দিক থেকে খুবই সম্ভবনাময়। কিন্তু মাছ চাষ ও পাট পচানো ছাড়া অন্যান্য অর্থকরী কাজে জলাভূমির ব্যবহার নেই বললেই চলে। জানালেন শিক্ষক সৌরভ চট্টোপাধ্যায়।বেশ কয়েক বছর ধরে হাওড়া জেলার জলাভূমি বিষয়ক এক ব্যক্তিগত গবেষণার কাজ থেকে যা তথ্য তুলে আনতে পেরেছি, তাতে দেখা গিয়েছে এই জলাভূমিগুলি অর্থকরী দিক থেকে খুবই সম্ভবনাময়। 

জলাভূমি থেকে পাট সংগ্রহ করা হচ্ছে।

জলাভূমি থেকে পাট সংগ্রহ করা হচ্ছে।

শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:৪১
Share: Save:

হাওড়া জেলা মূলত গঙ্গা নদী ব্যবস্থার অন্তর্গত পলিগঠিত সমভূমির একটি অংশ। পূর্ববঙ্গে এক সময়ের বহুল প্রচলিত শব্দ ‘হাওর’ থেকেই হাওড়া শব্দের উৎপত্তি। এর অর্থ জলাভূমি। বেশ কয়েক বছর ধরে হাওড়া জেলার জলাভূমি বিষয়ক এক ব্যক্তিগত গবেষণার কাজ থেকে যা তথ্য তুলে আনতে পেরেছি, তাতে দেখা গিয়েছে এই জলাভূমিগুলি অর্থকরী দিক থেকে খুবই সম্ভবনাময়।

কেন্দ্রীয় জল কমিশন স্বীকৃত বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদানগুলি পর্যালোচনা করে একথা বলা যায়, জলাভূমিগুলির জলের গুণমান অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভাল (৩৪%) বা অতীব ভাল (১৮%)। জলের পিএইচ-এর মান ৬ থেকে ৯ এর মধ্যে। সাধারণ ভাবে পিএইচ-এর মান ৭.৫-৮ এর মধ্যে হলে সেগুলি উচ্চ উৎপাদনশীল বলে ধরা হয়। ৭.০ থেকে ৭.৫ হলে সেগুলি মধ্যম উৎপাদনশীল। দেখা গিয়েছে সমগ্র জেলার শ্যামপুর ১ এবং শ্যামপুর ২ ব্লক, আমতা ১ এবং ডোমজুড় ব্লকের সামান্য অংশ ছাড়া জলাভূমির জল মধ্যম থেকে উচ্চ উৎপাদনশীল। বৈশিষ্ট্যগত ভাবে রুই, কাতলা, সিলভার কার্প , মৃগেল জাতীয় মাছ চাষের আদর্শ। এই মাছ চাষ ছাড়াও জেলার কোনও কোনও ব্লকে হোগলা (পাঁচলা, উলুবেড়িয়া ২, শ্যামপুর ১ এবং ২), শোলা ( জগৎবল্লভপুর, আমতা ১), মাদুরকাঠি (উদয়নারায়ণপুর, আমতা ১), পদ্ম (সাঁকরাইল, জগৎবল্লভপুর) চাষ খুবই জনপ্রিয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পানিফল, শুষনি ও অন্যান্য শাক চাষ হয়ে থাকে। জেলার প্রায় ৪০ শতাংশ ও ৫৭ শতাংশ জলাভূমি যথাক্রমে পাট পচানো ও মৎস্য চাষে ব্যবহৃত হয়।

কিন্তু দুঃখের বিষয়, মাছ চাষ ও পাট পচানো ছাড়া অন্যান্য অর্থকরী কাজে জেলার ১০ শতাংশ জলাভূমিকেও ব্যবহার করা হয় না। প্রায় ৮৪ শতাংশ মানুষই জলাভূমির বহুমুখী কার্যকারিতা সম্পর্কে জানেন। কিন্তু যাঁরা জলাভূমি থেকে আয় করেন, তাঁদের মাত্র ২৮ শতাংশ মানুষ ভবিষ্যতে জলাভূমিকে আয়ের উৎস করতে চান।

সুতরাং সচেতনতার একটা সমস্যা আছেই। এক্ষেত্রে দরকার ‘পোলিও দূরীকরণ’-এর মতো সারা বছর ধরে বহমান কোনও কর্মসূচি, যা মানুষকে জলাভূমির সুষ্ঠু ব্যবহার সম্পর্কে উৎসাহিত করবে। সরকারি তথ্য অনুসারে ২০০৪ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে উদয়নারায়ণপুর এবং বালি জাগাছা ছাড়া বাকি সব ব্লকেই জলাভূমি হ্রাস পেয়েছে। উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে সাঁকরাইল (২২%), পাঁচলা (১৯%) ও বাগনান ২ (১৫%) ব্লকে।

জনগণকে জলাভূমির সুষ্ঠু ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন করার জন্য সেমিনার ও গবেষণামূলক কার্যাবলী, স্কুল ও পঞ্চায়েত স্তরে কর্মসূচির অভাব রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রয়োজন সরকার ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মধ্যে সমন্বয়। এতে ভবিষ্যতে পরিবেশ রক্ষা-সহ আয়ের উৎস হিসাবে জলাভূমিগুলি জেলাকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Waterbody Environment Conservation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE