কপি-পেস্টের জনক ল্যারি টেসলার। —ফাইল চিত্র
রোজকার জীবন সহজ করিয়া দেন যাঁহারা, তাঁহাদের অনেকেই সাধারণ্যে পরিচিত নহেন। কম্পিউটারের ব্যবহার আমাদের জীবন জুড়িয়া আছে, কিন্তু লরেন্স গর্ডন টেসলারকে কয় জন চিনেন? সম্প্রতি তাঁহার মৃত্যুর পর সংবাদমাধ্যমে খবরের সূত্রে সকলে জানিলেন, কম্পিউটারে নিত্য-ব্যবহৃত ‘কাট’, ‘কপি’, ‘পেস্ট’, ‘ফাইন্ড’, ‘রিপ্লেস’ ইত্যাদি ‘কম্যান্ড’-এর আবিষ্কর্তা তিনিই। অতিপরিচিতি অনেক সময় অজ্ঞানতার কারণ হইয়া দাঁড়ায়; যে প্রজন্ম জন্মাবধি কম্পিউটারের অনায়াস ও সর্বত্রগামী ব্যবহার দেখিতেছে, তাহার বহুবিধ খুঁটিনাটির পশ্চাতে যে ব্যক্তিবিশেষের অনলস পরিশ্রম থাকিতে পারে, ইহাই তাহার কাছে অবিশ্বাস্য। টেসলার-এর আবিষ্কার এই জন্যই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তাহা বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি কম্পিউটার বা যে কোনও ডিজিটাল যন্ত্র ব্যবহারকারীর জীবন সহজ করিয়াছে। অনেকে বলিবেন, ইহাতে পরিশ্রম এতই কমিয়া গিয়াছে যে আধুনিক মানুষ ফাঁকিবাজ হইয়া পড়িয়াছেন। কম্পিউটারের প্রথমাবস্থায় কোনও লেখা সম্পাদনা করিতে গেলে আলাদা করিয়া টাইপ করিতে হইত, এখন কি-বোর্ডে কয়েকটি বোতাম চাপিলেই মুহূর্তে নির্দিষ্ট শব্দসকল স্থান হইতে স্থানান্তরে লইয়া যাওয়া, বা বিপুল শব্দসমুদ্র হইতে বিশেষ একটি শব্দ খুঁজিয়া বাহির করা ও প্রয়োজনে পাল্টাইয়া দেওয়া যায়। দুঃসাধ্যকে অনায়াসসাধ্য করাই টেসলারের অবদান।
শুধুই সহজতা নহে। সকল গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবনের ন্যায় টেসলার-এর কৃতিও যুগান্ত ঘটাইয়াছে, এই কারণেও তিনি স্মরণীয়। কম্পিউটার একদা সিংহভাগ মানুষের নাগালের বাহিরে ছিল। টেসলার মনে করিতেন, এই যন্ত্র প্রতিটি মানুষের ব্যবহারের জন্য। বৃহদ্বপু যন্ত্রবিশেষ হইতে ‘পার্সোনাল কম্পিউটার’-এর দিকে যাত্রা একটি পর্বান্তর, তাহাকে ‘ইউজ়ার-ফ্রেন্ডলি’ বা ব্যবহারবান্ধব করিয়া তুলিবার কাজটিও বৈপ্লবিক। সেই বিপ্লবসাধনই টেসলার-এর কীর্তি। আগে কম্পিউটারে লিখিতে গেলে একটি প্রক্রিয়া বা ‘মোড’, সম্পাদনা করিতে গেলে অন্য একটি ‘মোড’ ব্যবহার করিতে হইত, এই জটিলতা মুছিয়া তিনি কম্পিউটারকে সর্বসাধারণযোগ্য করিয়াছেন। সাক্ষাৎকারে বলিয়াছিলেন, এই কাজে তিনি কম্পিউটার-বিশেষজ্ঞদের মতামত যত না লইতেন, তাহারও অধিক নির্ভর করিতেন সাধারণ কম্পিউটার-ব্যবহারকারীর মতের উপরে। নিজের কম্পিউটারে কী রূপ ব্যবস্থাদি থাকিলে ব্যবহার করিয়া সুখ হইবে, ইহাই ছিল তাঁহার প্রধান ভাবনা। ‘কাট’ ও ‘পেস্ট’-এর ভাবনাও তাঁহার মনে আসিয়াছিল স্কুলপড়ুয়াদের দেখিয়া, ছবি বা লেখাংশ অন্য জায়গা হইতে কাটিয়া স্কুলের স্ক্র্যাপবুকে জুড়িতে যাহারা অভ্যস্ত। ‘কাট’ ‘কপি’ ‘পেস্ট’ এখন কম্পিউটার বা স্মার্টফোন ব্যবহারকারী মাত্রেরই জীবনের অঙ্গ, তদ্ব্যতীত অনেক কিছুই টেসলার করিয়া গিয়াছেন, যেগুলির ভাবনা আমরা কদাপি মনে আনি না। কম্পিউটার ব্যবহারকালে মাউসের সহিত তার যুক্ত থাকিলেও যাহাতে কোনও অসুবিধা না হয়, বা মাউসে ক্লিক করিতে আঙুল দিয়া যত পরিমাণ চাপ দিতে হয়, এই সকল কিছুই বিজ্ঞানসম্মত ভাবে নির্ধারণ ও প্রতিষ্ঠা টেসলার-এর কীর্তি। বিজ্ঞানের বৃহৎ বিপুল দিকগুলির কীর্তিমানদের লইয়া কত চর্চা হয়, কিন্তু দৈনন্দিনের সহিত আশ্লিষ্ট বিজ্ঞানকে যিনি ঋদ্ধ করিয়াছেন, তিনিও নমস্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy