Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

লক্ষণগুলো কিন্তু নৈরাজ্যের

তোলাবাজরা কোনও দলের হোক বা না হোক, তোলাবাজদের এই তাণ্ডবের ঘটনা দ্বিধাহীন ভাবে নিন্দনীয় এবং বিপজ্জনক। নিজেদের দাবি মতো তোলা না পেয়ে একটি বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা সব কটি বাস ভেঙেচুরে তছনছ করে দেবে তোলাবাজরা?

এ ভাবেই ভাঙচুর চালানো হয় বাসে। —নিজস্ব চিত্র।

এ ভাবেই ভাঙচুর চালানো হয় বাসে। —নিজস্ব চিত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৯ ০০:০২
Share: Save:

এখনও পর্যন্ত লক্ষণগুলো বিচ্ছিন্নই। কিন্তু লক্ষণগুলো প্রত্যেকটাই অরাজকতার। রাজ্যের নানা প্রান্তে হিংসাত্মক ঘটনা তো রয়েছেই, জুনিয়র চিকিৎসকদের লাগাতার কর্মবিরতিতে স্বাস্থ্য পরিষেবা ভেঙে পড়ার মুখে। তার মাঝেই গড়িয়া থেকে এল আর এক অদ্ভুত অভিযোগ। তোলাবাজদের দাবি বাস মালিকরা মেটাতে রাজি না হওয়ায় রাতের অন্ধকারে ভাঙচুর চালানো হল একের পর এক বাসে। আইনশৃঙ্খলার রাশ ধীরে ধীরে আলগা হয়ে যাওয়ার আভাস মিলতে শুরু করেছে যেন।

শনিবার রাতে গড়িয়া রেলস্টেশন সংলগ্ন একটি বাসস্ট্যান্ডে তাণ্ডব চালিয়েছে ১০-১২ জন দুষ্কৃতী। ৩২টি বাসে ভাঙচুর চালানো হয়েছে, বাসগুলির কর্মীদেরও মারধর করা হয়েছে। আক্রান্তদের এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, দুষ্কৃতীদের মুখে কালো কাপড় বাঁধা ছিল। তাঁদের আরও দাবি, রাজ্যের শাসক দলের একটি অংশের কথা মতো তোলা না দেওয়ায় ভাঙচুর চালানো হয়েছে। পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

তোলাবাজরা কোনও দলের হোক বা না হোক, তোলাবাজদের এই তাণ্ডবের ঘটনা দ্বিধাহীন ভাবে নিন্দনীয় এবং বিপজ্জনক। নিজেদের দাবি মতো তোলা না পেয়ে একটি বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা সব কটি বাস ভেঙেচুরে তছনছ করে দেবে তোলাবাজরা? এ কোন ধরনের রাজত্ব! আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপরে পুলিশ প্রশাসনের কর্তৃত্বকে কতটা অবজ্ঞা করলে দুষ্কৃতীরা এতটা দুঃসাহসী হয়ে উঠতে পারে, তা ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না। গোটা রাজ্যে রাজনৈতিক হিংসা, একের পর এক খুন-জখম, শাসক এবং বিরোধী দলের কর্মীদের মধ্যে চলতে থাকা অনর্গল হানাহানি— এ সব থামাতে প্রশাসন এখনও পর্যন্ত সফল নয়। তার মাঝেই খাস কলকাতার বুকে বিচ্ছিন্ন ভাবে হলেও উঁকি দিল দুষ্কৃতীরাজের ত্রাস। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিক্ষিপ্ত রূপে মাথা তুলতে থাকা এই সব অরাজক ঘটনা যদি প্রবণতায় পরিণত হয়, তা হলে নাগরিক জীবন কতটা দুর্বিসহ হয়ে উঠতে পারে, তা অনেকেই কল্পনা করতে পারছেন। অনেকের কাছে আবার কল্পনারও অতীত।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

প্রশাসনকে কিন্তু অবিলম্বে টেনে ধরতে হবে রাশটা। নৈরাজ্য মাথা চাড়া দেওয়ার আভাস শনিবার রাতেই প্রথম বার পাওয়া গেল, এমন নয়। প্রশাসনের রাশ আলগা হয়ে যাওয়ার আভাস লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই বার বার মিলছে। নির্বাচন আসবে, নির্বাচন যাবে। কিন্তু প্রশাসনিক প্রক্রিয়া তার জন্য কখনওই থমকে যাবে না। নিরপেক্ষ ভাবে নিরন্তর যদি কর্তব্য পালন করেত থাকে প্রশাসন, তাহলে রাশ আলগা হওয়ার প্রশ্নই উঠবে না। গণতন্ত্রে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন অত্যন্ত স্বাভাবিক ঘটনা। হাওয়া-পাল্টা হাওয়ার সঙ্ঘাত এ রাজ্যের রাজনীতিতেও সম্প্রতি টের পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু প্রশাসনকে সে সবের ঊর্ধ্বে থাকতে হবে। নৈরাজ্যর যে লক্ষণগুলো বিক্ষিপ্ত ভাবে ফুটে উঠছে, সেগুলোকে অঙ্কুরে বিনাশ করতে হবে। মাথায় রাখতে হবে যে, নাগরিকের জীবনকে মসৃন রাখাই প্রশাসনের কাজ। প্রশাসনিক কর্তৃত্ব অক্ষুণ্ণ রাখার দায়িত্ব কিন্তু রাজনৈতিক নেতৃত্বেরই।

আরও পড়ুন: ‘তোলা’ না দেওয়ায় তাণ্ডব, গড়িয়ায় ভাঙচুর ৩২টি বাস

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy