Advertisement
E-Paper

এটাই হোক দুর্ভাগ্যের শেষ পর্ব

দক্ষিণ কলকাতার নামী বেসরকারি স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী কৃত্তিকা পাল আত্মহত্যা করেছে বলেই প্রাথমিক অনুমান তদন্তকারীদের।

—নিজস্ব চিত্র।

—নিজস্ব চিত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৯ ০০:৩০
Share
Save

জবাবদিহি কে করবেন, কার কাছে করবেন, ঠিক কোন কারণটার জন্য করবেন, বুঝে ওঠা যাচ্ছে না। ফুটফুটে, তরতাজা প্রাণ ঝরে গিয়েছে স্কুলের শৌচাগারে। কেন এমন ঘটল, কী ভাবে ঘটল, কে দায়ী— সবই যেন ধোঁয়াশায় ঢাকা, আবার ঢাকা নয়। কিছুটা কিছুটা আন্দাজ করা যাচ্ছে, কখনও আবার নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু সব ধরনের সম্ভাবনা তথা আশঙ্কার বুক চিরে মাথা তুলছে যেন একটাই শব্দ— অবসাদ।

দক্ষিণ কলকাতার নামী বেসরকারি স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী কৃত্তিকা পাল আত্মহত্যা করেছে বলেই প্রাথমিক অনুমান তদন্তকারীদের। কেন এই দুর্ভাগ্যজনক পরিণতি, বিশ্লেষণের চেষ্টা চলছে। কিন্তু খণ্ড খণ্ড কাহিনি, টুকরো টুকরো তথ্যপ্রমাণ আমাদের যে উপসংহারে নিয়ে যাবে, তা আসল উপসংহার নয়। কৃতি ছাত্রী কৃত্তিকা, হাসিখুশি কৃত্তিকা, অভিভাবকদের প্রত্যাশা, কৃত্তিকার উপরে সে প্রত্যাশার চাপ, সম্ভাব্য কোনও প্রণয়, একটা সুইসাইড নোট, আত্মহত্যার কায়দা, পরিচিত এবং সহপাঠীদের বয়ান— এইসবই হয়তো বাস্তব কিন্তু টুকরো টুকরো বাস্তব। বেশ কিছু টুকরো সম্ভবত নিরুদ্দেশও। তাই এই টুকরো টুকরো বাস্তবগুলোকে জুড়ে একটা পূর্ণাঙ্গ ছবি আমরা তৈরি করতে পারব না। অনেক খামতি থেকে যাবে সে ছবিতে বোধহয়। বোধের গভীরতায় পৌঁছনো জরুরি, একটা অত্যন্ত সংবেদনশীল মন নিয়ে বোঝার চেষ্টা করা জরুরি।

হীরক রাজ্যের কথা মনে পড়ছে। যন্তরমন্তর ঘরে মগজধোলাই হতো, মগজে এক নির্দিষ্ট মন্ত্র ঢুকিয়ে দেওয়া হতো। ঘর থেকে বেরিয়ে সেই মন্ত্রই অনবরত আউড়ে যেতেন প্রজারা। আজকের সমাজটা বা সামাজিকতার বর্তমান বোধটা যেন সেই যন্তরমন্তর ঘরের সমতুল। শৈশব থেকেই মগজে যেন একটাই মন্ত্রের দাপট— সাফল্য, সাফল্য, সাফল্য। আসল সাফল্য কী, সাফল্যের সংজ্ঞা কে নির্ধারণ করলেন, যাকে আমরা সাফল্য ভাবছি তা আদৌ সাফল্য কি না, তা কিন্তু খুব গুরুত্ব দিয়ে ভেবে দেখার সময় হয়েছে। শৈশব থেকে তথাকথিত সাফল্যের পিছনে ছোটা, পরিবার-পরিজন এবং সমাজের প্রত্যাশার চাপ নিরন্তর বহন করতে বাধ্য হওয়া, সে চাপে ক্রমশ নুইয়ে পড়া— জীবন তো এই পথে এগোতে পারে না। ক্রমশ নুইয়ে পড়ার নাম তো জীবন নয়। ক্রমশ উন্নত ও প্রসারিত হতে থাকাই তো জীবন। তথাকথিত সাফল্যের পিছনে ছুটতে গিয়ে জীবনের সেই গোড়ার কথাটাই আমারা ভুলে যাচ্ছি যে।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

আবার বলছি, ঠিক কী কারণে এমন দুর্ভাগ্যজনক পরিণতির মুখে পড়তে হল ছোট্ট কৃত্তিকাকে, সে বিষয়ে আমরা কেউই পূর্ণ মাত্রায় নিশ্চিত নই। কিন্তু কৃত্তিকার আচরণগত তথ্য, কৃত্তিকার আত্মহত্যালিপি বিশ্লেষণ করে অধিকাংশ মনস্তত্ত্ববিদই গভীর অবসাদের নাগাল পাচ্ছেন। সে অবসাদের অনেকগুলো মেরু। কোনও মেরু ছুঁয়ে রয়েছে প্রত্যাশার চাপকে, কোনও মেরু ছুঁয়ে রয়েছে প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারার আশঙ্কাকে, কোনও মেরু স্পর্শ করেছে জীবনের বাধ্যবাধকতাজনিত অতৃপ্তিকে, কোনওটা আবার গিয়ে মিশেছে কোনও অপ্রাপ্তির গভীর বেদনায়। আত্মহত্যালিপির ছত্রে ছত্রে যেন সেই অবসাদের প্রতিফলন। দশম শ্রেণির ছাত্রীর বোধের নিরিখে অভাবনীয় পরিণত এক কলম। আত্মহত্যালিপি বলে যায় কতটা প্রাণবন্ত অস্তিত্ব ছিল মেয়েটার। তার সঙ্গেই বলে যায় যে, বিপুল সম্ভাবনার কী দুর্ভাগ্যজনক অপচয় ঘটে গিয়েছে। আমাদের সামাজিকতার ধারণায় যে বিপদগুলোর কথা এতক্ষণ বলছিলাম, সেগুলোকে ছাড়া অন্য কিছুকে দায়ী করতে পারছি না এই মুহূর্তে।

আরও পড়ুন: ওরা ভাবত... মরার মতো দম আমার নেই, কৃত্তিকার সুইসাইড নোটের ‘ওরা’ কারা?

আত্মমন্থন বা আত্মসমীক্ষায় কাজ সারা কিন্তু হবে না এ বার। একটা বদল খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। অদৃশ্য যন্তরমন্তর ঘরটার প্রথম বলি কৃত্তিকা, এমন কিন্তু নয়। এর আগেও এমন অপচয় অনেক হয়েছে। তখনও আমরা চর্চায় মেতেছি, আত্মসমীক্ষা করেছি, কয়েকদিনেই মিইয়ে গিয়ে আবার গড্ডালিকার স্রোতে মিশেছি। অচিরেই ফিরে এসেছে পরবর্তী কোনও দুর্ভাগ্য। কৃত্তিকার মৃত্যু সে দুর্ভাগ্যের পরম্পরার সাম্প্রতিকতম পর্ব। এই পর্বই যাতে শেষ পর্ব হয়, সেটুকু নিশ্চিত করার জন্য এ বার উঠে পড়ে লাগা দরকার।

জীবনবোধেই গলদ থেকে যাচ্ছে কোথাও। গোটা সমাজকে বুঝতে হবে তা। আমি বুঝলাম, আপনি বুঝলেন, আরও কয়েকজন বুঝলেন— এইরকম বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু বদলাবে না। সংগঠিত ভাবে বদলানোর প্রক্রিয়াটা শুরু করতে হবে। সেটা রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে হোক বা প্রচারমাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে হোক বা স্কুলের পাঠ্যক্রমকে কাজে লাগিয়ে হোক, বোধের প্রবাহে বদল আনতে হবে। আনতেই হবে। এই একই বিষয় নিয়ে আমাদের আবার কখনও এইরকম চর্চায় মেতে উঠতে হোক বা আত্মসমীক্ষায় বসতে হোক, এমনটা আর চাই না।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

Krittika Paul Newsletter Anjan Bandyopadhyay Suicide অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

ক্যানসেল করতে পারবেন আপনার সুবিধামতো

Best Value
প্রতি বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
প্রতি মাসে

৪২৯

১৬৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।