Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Durga Puja 2021

দেবীপক্ষ

এই পরিবর্তনকে প্রথা ভাঙা বলা চলিবে না। তাঁহারা কেহ প্রথাগুলিকে অস্বীকার করেন নাই। বরং, ইহার যথার্থ নামকরণ হইতে পারে— প্রথা-বদল।

শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২১ ০৯:০৯
Share: Save:

অধিকার বুঝিয়া লইতে সর্বদা প্রথা ভাঙিবার প্রয়োজন নাই। প্রথাটিকে প্রয়োজনমতো পরিবর্তন করিয়াও নিজ অধিকার বুঝিয়া লওয়া যায়। উত্তরবঙ্গের দোলা রায়, মুনমুন সরকাররা সেই পথটিই অনুসরণ করিয়াছেন। মহালয়ার ভোরে তাঁহারা দল বাঁধিয়া মহানন্দায় নামিয়া তর্পণ করিয়াছেন। তর্পণের প্রশ্নটি সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, দীর্ঘকাল অবধি ধারণা ছিল যে, তর্পণের কাজটি একান্ত ভাবেই পুত্রের কর্তব্য। অথচ, অনেক শাস্ত্রজ্ঞ জানাইয়াছেন, মেয়েরা তর্পণ করিতে পারিবেন না, এমন কথা কোথাও বলা হয় নাই। শুধুমাত্র তর্পণ কেন, সার্বিক ভাবে ধর্মাচরণের ক্ষেত্রে মেয়েদের সমানাধিকার দিবার প্রশ্নেও সমাজ দ্বিধাগ্রস্ত। মৃতের মুখাগ্নি হইতে বিবাহে কন্যাদান, বড় পূজায় পৌরোহিত্য— দীর্ঘদিন ইহাকে একান্ত ভাবেই পুরুষের কর্ম বলিয়া চিহ্নিত করা ছিল। সেই চিহ্ন ক্রমে মুছিতেছে। এই সকল কার্যে মেয়েদের অংশগ্রহণ ধীরে হইলেও ক্রমে বৃদ্ধি পাইতেছে। মা কন্যাদান করিতেছেন, অথবা মহিলা পুরোহিত বিবাহ দিতেছেন, ইহাতে এখন আর কেহ আশ্চর্য হন না। নিঃসন্দেহে ইহা সুলক্ষণ।

এই পরিবর্তনকে প্রথা ভাঙা বলা চলিবে না। তাঁহারা কেহ প্রথাগুলিকে অস্বীকার করেন নাই। বরং, ইহার যথার্থ নামকরণ হইতে পারে— প্রথা-বদল। এই পরিবর্তনের ইতিহাসটি শুধুমাত্র হিন্দুধর্মের নহে, অন্য ধর্মেও দেখা যায়। এখনও ক্যাথলিক চার্চ কৃত্রিম উপায়ে জন্মনিয়ন্ত্রণকে ধর্ম-বিরোধী বলিয়া মানে। ইহার বিরুদ্ধে বারংবারই সরব হইয়াছেন মেয়েরা। তাঁহারা সকলেই যে ধর্মবিরোধী, তাহা নহে। বরং ধর্মবিশ্বাসী হইয়াও তাঁহারা স্বাস্থ্য ও স্বাধীনতার অধিকারে ধর্মীয় হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করিয়াছেন। ধর্মের ন্যায় যে কোনও প্রাতিষ্ঠানিক নিয়মকানুন, ধারণা, প্রথা সকলই সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন করিবে, ইহাই কাম্য। অন্যথায়, তাহার গতি রুদ্ধ হয়। মুক্ত বাতাস প্রবেশ করিতে পারে না। প্রতিষ্ঠানকে সকলকে সঙ্গে লইয়া চলিতে হইবে। প্রথা, রীতির দোহাই দিয়া বিভাজনের রেখাটিকে যুগের পর যুগ লালন করা প্রতিষ্ঠানের কাজ নহে। প্রতিষ্ঠান যদি নিজে সেই পরিবর্তন বা সংস্কার সাধন করিতে না পারে, তবে ইহার কর্মধারায় বিশ্বাসীদের মধ্য হইতেই সেই প্রচেষ্টা করিতে হইবে। প্রতিষ্ঠানের কার্যকলাপের প্রতি অবিশ্বাস প্রদর্শন করিয়া তাহাকে ত্যাগ করা তুলনায় সহজ। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের ভিতরে থাকিয়া সংস্কারের প্রচেষ্টা কঠিন। উত্তরবঙ্গের কন্যারা সেই কঠিন পথটিকেই বাছিয়া লইয়াছেন।

বস্তুত, তাঁহারা যে শুধুমাত্র ধর্মাচরণের ক্ষেত্রে সমানাধিকারের পথটি দেখাইয়াছেন, তাহা নহে। যে কাজগুলিকে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ সাধারণত ‘পুরুষোচিত’ বলিয়া মনে করে, তাঁহারা নির্দ্বিধায় সেই কাজের ভারটিকেও স্বহস্তে তুলিয়া লইয়াছেন। কেহ করোনা-আক্রান্ত রোগীকে নিজ টোটোতে বহন করিয়াছেন, সংক্রমণের ভয়ে যখন কেহ আগাইয়া আসেন নাই, এই মেয়েরাই করোনায় মৃতদের দেহ শ্মশানে লইয়া গিয়াছেন। পাশাপাশি স্যানিটাইজ়েশনের কাজটি করিয়াছেন, রক্তদান শিবিরেরও আয়োজন করিয়াছেন। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ কবে ধর্মের ক্ষেত্রে, সামাজিক কার্যের ক্ষেত্রে তাঁহাদের সমানাধিকার প্রদান করিবে, সেই আশায় তাঁহারা বসিয়া থাকেন নাই। নিজে কর্মের মধ্য দিয়া সেই সমানাধিকার আদায় করিয়া লইয়াছেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja 2021
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy