Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus Lockdown

উদ্ধারের পথ

এই সঙ্কট হইতে মুক্তি কোন পথে?

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০২০ ০১:১৬
Share: Save:

গত সপ্তাহে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস এমন একটি কথা বলিলেন, যাহা একই সঙ্গে অতি প্রত্যাশিত এবং অপ্রত্যাশিত। তিনি জানাইলেন, বর্তমান অর্থবর্ষে ভারতীয় অর্থব্যবস্থায় আর্থিক বৃদ্ধির হার ঋণাত্মক হইবার সম্ভাবনা। কথাটি অতি প্রত্যাশিত, কারণ সরকারপক্ষ ব্যতীত সকলেই কথাটি মাসাধিক কাল যাবৎ বলিতেছিলেন। অপ্রত্যাশিত, কারণ বালিতে মুখ গুঁজিবার কু-অভ্যাসটি ত্যাগ করিয়া সরকারপক্ষ যে বিপদটিকে স্বীকার করিতে পারিবে, সেই ভরসা ক্রমে ক্ষীণতর হইতেছিল। ব্যাঙ্ক জানাইয়াছে, পরিস্থিতির মোকাবিলায় রেপো এবং রিভার্স রেপো রেট আরও কমানো হইল— হার দুইটি দাঁড়াইল যথাক্রমে চার ও সাড়ে তিন শতাংশ। ভারতে এই শতকে কখনও সুদের হার এতখানি কমিয়া যায় নাই। সুদের হার কার্যত মূল্যস্ফীতির হারের কম হইল, অর্থাৎ যাহাকে বলে ঋণাত্মক সুদের হার। ভারতে ইহাও অভূতপূর্ব। এক্ষণে প্রশ্ন, এহেন ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তে লাভ হইবে কি? কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক ও রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক, অর্থনীতির উভয় পরিচালকেরই বিশ্বাস, ঋণের ব্যবস্থা হইলেই অর্থব্যবস্থা ঘুরিয়া দাঁড়াইবে। অর্থমন্ত্রী যেমন তাঁহার ত্রাণ প্যাকেজ ভরিয়া দিয়াছেন সহজলভ্য ঋণের হিসাবে, সস্তায় ঋণ পাইলেই ব্যবসায়ীরা নূতন লগ্নি করিবেন, এই আশায়; রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের সুদ কমাইবার সিদ্ধান্তটির যুক্তিক্রমও অনুরূপ। এক, ঋণ সহজলভ্য হওয়ায় লগ্নি এবং ভোগব্যয় বাড়িবে; দুই, সঞ্চয় যেহেতু আরও অলাভজনক হইল, ফলে লোকে টাকা না জমাইয়া ভোগব্যয়ে খরচ করিবে। বাজারে চাহিদা বাড়িবে। এই আশার গোড়ায় গলদ— যখন অদূর ভবিষ্যতে আয় অতি অনিশ্চিত, তখন মানুষ খড়কুটাকেও আঁকড়াইয়া ধরিতে চাহে। সুদ কম মিলিতেছে বলিয়া ভোগব্যয়ে হাতের টাকা উড়াইয়া দিবে, এমন শিকাগো স্কুলের র্যাশনালিটিতে দীক্ষিত মানুষের সন্ধান অর্থশাস্ত্রের কেতাবের বাহিরে মেলা ভার।

তাহা হইলে এই সঙ্কট হইতে মুক্তি কোন পথে? দেখা যাইতেছে, কেন্দ্রীয় সরকার ও রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক ব্যতীত সকলেই এই প্রশ্নের উত্তরে একমত— মানুষের হাতে নগদ টাকা তুলিয়া দেওয়াই একমাত্র পথ। অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় হইতে রঘুরাম রাজন, সব প্রথম সারির অর্থশাস্ত্রী যেমন কথাটি বলিতেছেন, তেমনই দেশের বিরোধী দলগুলিও এই প্রশ্নে একমত। আয় যেখানে অনিশ্চিত বা বন্ধ, সেখানে বাজারে চাহিদা ফিরাইতে হইলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াইতে হইবে, এই কথাটি রকেট বিজ্ঞান নহে— বুঝিতে নিতান্ত নারাজ না হইলে বোঝা অত্যন্ত সহজ। বাজারে চাহিদা ফিরিলে লগ্নিকারীরা নিজস্ব তাগিদেই ব্যবসা বাড়াইতে চাহিবেন, তাহার জন্য ঋণও লইবেন। কেন্দ্রীয় সরকার ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়িবার পণ্ডশ্রম করিতেছে, শুধু সেটুকুই নহে, একটি জরুরি অস্ত্রের অপচয়ও করিতেছে। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের সুদ কমাইবার ক্ষমতার সীমা আছে। বাজারে চাহিদা বাড়িবার পর যখন সত্যই লোকে ঋণ লইতে আগ্রহী হইবে, সুদ কমাইবার অস্ত্রটি তত দিন অবধি বাঁচাইয়া রাখিলে লাভ বেশি হইত। এই মুহূর্তে একমাত্র কর্তব্য ছিল রাজস্ব ব্যয়। যেহেতু ভোগব্যয় ধাক্কা খাইয়াছে, নূতন লগ্নি কার্যত বন্ধ, রফতানির বাজারও স্তিমিত, ফলে জিডিপি বাড়াইবার একমাত্র পথ সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি। হিসাব বলিতেছে, জিডিপির বৃদ্ধির হারকে যদি শূন্যে আটকাইয়া রাখিতে হয়, তাহার জন্যও অতিরিক্ত সরকারি ব্যয় হিসাবে বর্তমান জিডিপির অন্তত পাঁচ শতাংশ ব্যয় করা প্রয়োজন। নির্মলা সীতারামনের প্যাকেজ খাতায় কলমে জিডিপির দশ শতাংশ। কিন্তু, তাহাতে প্রকৃত ব্যয়ের পরিমাণ দুই লক্ষ কোটি টাকা, অর্থাৎ জিডিপির এক শতাংশের গণ্ডি ছাড়াইবে কি না, সন্দেহ। সেই গল্পগাছায় তাঁহাদের রাজনীতির উপকার হইতে পারে, কিন্তু অর্থনীতির চিঁড়া ভিজিবে না, এই কথাটি স্বীকার করিয়া লইয়া এই বার প্রকৃত ব্যয়বৃদ্ধির কথা ভাবা প্রয়োজন।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown Cyclone Amphan Cyclone
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy