পাশ হল তিন তালাক বিল।—ছবি পিটিআই।
একে সংখ্যালঘু, তদুপরি নারী সমাজ। প্রতিকূলতা কত রকম ভাবে ঘিরে ধরতে পারে, আন্দাজ করা শক্ত নয়। সেই প্রতিকূলতা কিছুটা কমানোর জন্য যদি সংসদে পাশ হয়ে থাকে কোনও বিল, তাহলে অবশ্যই স্বাগত। কিন্তু যে উদ্দেশ্য সাধনের কথা বলে তিন তালাক বিল পাশ করানো হল, সেই উদ্দেশ্য সাধনই আসল লক্ষ্য, নাকি নিশানায় অন্য কিছু, তা প্রমাণ হওয়া এখনও বাকি।
ভারতের মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে তাৎক্ষণিক বিবাহ-বিচ্ছেদের যে প্রথা প্রচলিত থেকেছে শতকের পর শতক ধরে, সেই প্রথায় পূর্ণচ্ছেদ টেনে দেওয়ার আইন প্রণয়নের কাজ প্রায় সম্পন্ন। এই আইন সংসদে পাশ করানোর আগে দীর্ঘ বিতর্ক চলেছে নানা স্তরে। আইন যাঁরা পাশ করাতে চাইছিলেন, তাঁরা সওয়াল করছিলেন ভারতীয় মুসলিম সমাজে লিঙ্গ বৈষম্য দূর করার পক্ষে। এই আইনের বিরোধিতা যাঁরা করছিলেন, তাঁদের সওয়াল ছিল দণ্ডবিধির কাঠিন্যের বিরুদ্ধে। শেষ পর্যন্ত সংসদের দুই কক্ষেই পাশ হয়ে গেল তাৎক্ষণিক তালাক বিরোধী বিল। রাষ্ট্রপতির হস্তাক্ষর হওয়া মাত্র এই বিল আইনে পরিণত হবে। কিন্তু আইনটা মুসলিম সমাজে লিঙ্গ বৈষম্য সত্যিই নির্মূল করতে পারবে তো? দাম্পত্যে মুসলিম পুরুষ এবং মুসলিম নারীর সমানাধিকার এই আইনে প্রতিষ্ঠিত হবে তো? এখন থেকে শুরু হবে এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা।
মুসলিম সমাজ হোক অথবা হিন্দু সমাজ, কম-বেশি বৈষম্য সর্বত্রই রয়েছে। শুধু মুসলিম বা শুধু হিন্দুদের কথা উল্লেখ করারও কোনও অর্থ হয় না, এ বিশ্বের প্রায় সব প্রান্তেই এবং প্রায় সব অংশের মধ্যেই কোনও না কোনও সামাজিক বৈষম্য রয়েই গিয়েছে। বৈষম্য সর্বত্র রয়েছে মানে এই নয় যে, কেউ কোথাও কোনও বৈষম্য দূর করায় উদ্যোগী হবেন না। যাঁর পক্ষে যেমন ভাবে সম্ভব হবে, তিনি সে ভাবেই বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়বেন। যে বৈষম্য অধিকতর ক্ষতিকর, সেই বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই অগ্রাধিকার পাবে। সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে তিন তালাক প্রথার অবলুপ্তি ঘটানোর জন্য ভারত সরকারের সক্রিয়তায় আপত্তি করা যায় না। কিন্তু যাঁদের অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলে এই বিল পাশ করানো হল, তাঁদের অধিকার সত্যিই প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে কি-না, সে দিকেও নজর রাখা আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
তিন তালাক প্রথার অবলুপ্তি ঘটানোর জন্য ভারত সরকারের যে সক্রিয়তা দেখা গিয়েছে, তা নিয়ে বিতর্ক শুধু সামাজিক পরিসরে সীমাবদ্ধ থাকেনি। বরং রাজনৈতিক পরিসরের বিতর্ক হিসেবেই অনেক বেশি করে ধরা দিয়েছে এই ইস্যু। প্রায় সব রাজনৈতিক দলই কোনও না কোনও পক্ষ নিয়ে রাজনৈতিক মুনাফা তোলার চেষ্টা করেছে। তাই সংশয়ের অবকাশটা থেকেই যায়। এই নতুন আইন শুধু রাজনীতির হাতিয়ার হয়েই থেকে যাবে না তো? মুসলিম নারীর সমানাধিকার সত্যিই প্রতিষ্ঠিত হবে তো? রাষ্ট্রের সদিচ্ছার প্রমাণ কিন্তু আইনটার সার্থক রূপায়ণেই মিলবে। সে রূপায়ণ হয় কি-না, মুসলিম নারীর সামাজিক অবস্থান আরও সশক্ত হয় কি-না, সেদিকে কিন্তু নজর থাকবে সমগ্র ভারতের।
আরও পড়ুন: তিন তালাক বিল রাজ্যসভাতেও পাশ, বড় জয় মোদী সরকারের
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy