Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Mahinda Rajapaksa

দাপটের জয়

রাজাপক্ষে বিশেষ ভাবে চিনের ঘনিষ্ঠ বলিয়া পরিচিত, তাঁহার জমানাতেই শ্রীলঙ্কায় চিনের অর্থনৈতিক বিনিয়োগ বিপুল মাত্রায় বাড়িয়াছে, তাহার সহিত গাঁটছড়া বাঁধিয়া আসিয়াছে রাজনৈতিক প্রভাব।

ছবি: এএফপি।

ছবি: এএফপি।

শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

চতুর্থ বার শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর আসনে অধিষ্ঠিত হইলেন মাহিন্দা রাজাপক্ষে। তাঁহাকে শপথবাক্য পাঠ করাইলেন গোতাবায়া রাজাপক্ষে, তাঁহার অনুজ। প্রধানমন্ত্রীর পুত্র, জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা, তস্য পুত্র এবং আরও এক ভ্রাতুষ্পুত্র— সকলেই সংসদে নির্বাচিত। এই অনুমান প্রবল যে, মন্ত্রিসভায় এই স্বজনবর্গ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পাইবেন। পুত্র নমল যে প্রধানমন্ত্রীর উত্তরসূরি, তাহা অনুমানের ঊর্ধ্বে। পরিবারতন্ত্র সর্বশক্তিমান। কিন্তু জনাদেশ যদি গণতন্ত্রের নির্ণায়ক হয়, তবে মানিতেই হইবে, দ্বীপরাষ্ট্রের এই পারিবারিক শাসন গণতান্ত্রিক। কোভিডের ছায়ায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৭০ শতাংশের বেশি ভোট পড়িয়াছে এবং রাজাপক্ষের দল এসএলপিপি জয় করিয়াছে প্রায় ৬০ শতাংশ ভোট ও ১৪৫টি আসন। লক্ষণীয়, শ্রীলঙ্কার উত্তরভাগে তামিলপ্রধান অঞ্চলগুলিতে রাজাপক্ষের দলের পক্ষে জনসমর্থন নাই, অর্থাৎ সংখ্যাগুরু সিংহলি অধ্যুষিত বাকি দেশে তাঁহাদের পক্ষে ভোটের হার বিপুলতর।

এইখানেই রাজাপক্ষের সাফল্যের প্রথম সূত্রটি নিহিত। তাঁহারা প্রবল বিক্রমে দেশে সিংহলি সংখ্যাগুরুবাদের আধিপত্য কায়েম করিয়াছেন। এই শতাব্দীর প্রথম দশকে তামিল জঙ্গিদের দমনে প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা (এবং তাঁহার প্রতিরক্ষা সচিব গোতাবায়া) রাজাপক্ষের নির্মম আগ্রাসন রাষ্ট্রপুঞ্জ-সহ বিভিন্ন সংগঠন ও রাষ্ট্রের তীব্র সমালোচনাকে সম্পূর্ণ তুচ্ছ করিয়া জাফনা-সহ উত্তর শ্রীলঙ্কায় জঙ্গি নিধনের সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ তামিল অধিবাসীদের জীবনে অকল্পনীয় ধ্বংসলীলা ঘটাইয়াছে এবং ওই অঞ্চলটিকে কার্যত কলম্বোর উপনিবেশে পরিণত করিয়াছে। স্পষ্টতই, এই আগ্রাসী নীতি সিংহলিদের মধ্যে বিপুল জনপ্রিয়তার উৎস হইয়া উঠিয়াছে। কিন্তু ইহা কেবল সিংহলি বনাম তামিল দ্বন্দ্বের বিষয় নহে। সামগ্রিক বিচারেই শ্রীলঙ্কার সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক ‘শক্তিমান’ প্রশাসনের পক্ষে ভোট দিয়াছে। ইউএনপি দলের নেতৃত্বে রাজাপক্ষের বিরোধী শিবির গত কয়েক বৎসর যে অন্তর্দ্বন্দ্ব এবং প্রশাসনিক দ্বিধাগ্রস্ততার পরিচয় দেয়, তাহাতে রাজাপক্ষের কাজ সহজ হইয়াছে। তাহার সহিত যুক্ত হইয়াছে গত বছরের সন্ত্রাসী তাণ্ডবের প্রতিক্রিয়া। লক্ষণীয়, গণতান্ত্রিকতার নমনীয় মাত্রাগুলির তোয়াক্কা না করিয়া প্রবল শাসকের হাতে রাষ্ট্রচালনার দায়িত্ব সমর্পণের যে উদ্বেগজনক প্রবণতা দুনিয়া জুড়িয়া জোরদার, শ্রীলঙ্কাও তাহার শামিল।

ভারতের পক্ষে এই নির্বাচনী ফলাফল বাড়তি উদ্বেগ সৃষ্টি করিতেছে। তাহার কারণ: চিন। রাজাপক্ষে বিশেষ ভাবে চিনের ঘনিষ্ঠ বলিয়া পরিচিত, তাঁহার জমানাতেই শ্রীলঙ্কায় চিনের অর্থনৈতিক বিনিয়োগ বিপুল মাত্রায় বাড়িয়াছে, তাহার সহিত গাঁটছড়া বাঁধিয়া আসিয়াছে রাজনৈতিক প্রভাব। এখন, চিন-ভারত দ্বৈরথের নূতন পরিবেশে, রাজাপক্ষের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা দিল্লির নীতিকারদের চিন্তা বাড়াইয়া তুলিবে। সংখ্যাগুরুবাদের নীতিতে দুই দেশের শাসকের মিল আছে, কিন্তু সেই কারণেই নরেন্দ্র মোদীর উদ্বেগ সমধিক— ‘আধিপত্যবাদী’ রাজাপক্ষদের অনমনীয়তার মোকাবিলা সহজ না-ও হইতে পারে। তাহার সঙ্গে আছে তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক জটিলতা। প্রয়োজন সূক্ষ্ম ও কুশলী কূটনীতির। প্রতিবেশীদের সহিত কূটনৈতিক আদানপ্রদানে মোদী সরকারের রেকর্ড আশাব্যঞ্জক নহে।

অন্য বিষয়গুলি:

Sri Lanka Mahinda Rajapaksa
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy