Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

গোলাপি ভবিষ্যৎ

অতঃপর ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ গোলাপি বল এবং দিন-রাত্রির ক্রিকেটেই বাঁধা পড়িল কি না, তাহা লইয়া প্রশ্ন উঠিতে পারে। উঠিতেছেও।

ইডেন গার্ডেন্স

ইডেন গার্ডেন্স

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৯ ০০:৫৪
Share: Save:

সপ্তাহ পূর্বেই গোলাপি বর্ণে রঞ্জিত হইয়াছিল কলিকাতার ইডেন গার্ডেন্স। ভারত-বাংলাদেশ ‘পিঙ্ক টেস্ট’ ম্যাচটি বিবিধ কারণে তাৎপর্যপূর্ণ। গোলাপি বলে এই প্রথম দিন-রাত্রির টেস্ট খেলা অনুষ্ঠিত হইল ভারতে। ইতিপূর্বে বিদেশের মাটিতে দিন-রাত্রির টেস্টে গোলাপি বলের আবির্ভাব ঘটিলেও ভারতের পিচে তাহা দেখা যায় নাই। ইডেন পথ প্রদর্শনের কাজটি করিল সফল ভাবে। তৃতীয় দিনেই প্রতিপক্ষ বাংলাদেশকে ইনিংসে হারাইয়া জয় আনিল ভারত। এবং বহু বৎসর পর ফিরিল টেস্ট ম্যাচ দেখিতে আসা দর্শকদের মধ্যে টিকিটের জন্য উন্মাদনা। ম্যাচের দিনগুলিতে ইডেন ভরিল কানায় কানায়।

অতঃপর ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ গোলাপি বল এবং দিন-রাত্রির ক্রিকেটেই বাঁধা পড়িল কি না, তাহা লইয়া প্রশ্ন উঠিতে পারে। উঠিতেছেও। ক্রিকেটের সঙ্গে বিনোদনকে মিশাইয়া ফেলিবার সাম্প্রতিক রেওয়াজে এই প্রশ্নটিই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হইয়া উঠিতেছে। টি-টোয়েন্টির যুগে টেস্ট ক্রিকেটের জৌলুস ক্রমশ অস্তমিত। নিঃসন্দেহে বিগত কয়েক বৎসর ধরিয়া সংক্ষিপ্ত টি-টোয়েন্টি ফর্ম্যাটের ক্রিকেট যে পরিমাণ বিনোদন উপহার দিয়া আসিতেছে, টেস্ট ক্রিকেটে তাহা হইবার উপায় নাই। ফলে, টেস্ট ক্রিকেট ক্রমশ দর্শক হারাইতেছে। পাঁচ দিনের খেলা দেখিবার মতো সময় আর কত জনেরই বা আছে? সুতরাং, পুনরুজ্জীবনের স্বার্থে টেস্ট ক্রিকেটের চলনে কিছু পরিবর্তনের প্রয়োজন ছিল। ভারতের নবনিযুক্ত ক্রিকেট প্রশাসক তাহা বুঝিয়াছেন। সময়ের সদ্ব্যবহার করিতে এবং মাঠে দর্শক টানিতে তাই দিন-রাত্রির ম্যাচের আয়োজন। এবং ইডেনের গর্জন প্রমাণ করিয়াছে সেই আয়োজন সম্পূর্ণ রূপে সফল। ইহার পরও প্রশ্ন উঠিতে পারে, বিনোদনের এই প্যাকেজের মধ্যে টেস্ট ক্রিকেট তাহার কৌলীন্য হারাইয়া ফেলিবে কি না। ইতিপূর্বে পঞ্চাশ ওভার এবং কুড়ি ওভারের ক্রিকেটের জন্মলগ্নেও একই প্রশ্ন মাথাচাড়া দিয়াছিল। কিন্তু নবীনতর প্রজন্ম উভয় ক্ষেত্রেই সেই পরিবর্তনকে সাড়ম্বরে বরণ করিয়া লইয়াছে। এবং প্রমাণ করিয়াছে, যে পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী, তাহাকে স্বাগত জানানোই বিধেয়।

তবে সপ্তাহান্তের জমজমাট ইডেনে একটি প্রশ্ন সম্পূর্ণ উপেক্ষিত রহিল। গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। পরিবেশের প্রশ্ন। যে পরিবেশকে ইডেনের ফ্লাডলাইটের আলো সযত্নে চাপা দিয়া রাখিয়াছিল। পরিবেশবিদরা ইতিমধ্যেই ম্যাচটিকে পরিবেশের দিক হইতে এক ‘ঐতিহাসিক ভুল’-এর আখ্যা দিয়াছেন। বস্তুত, নৈশালোকে ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজন করিতে হইলে যে পরিমাণ আলোর ব্যবস্থা সাধারণত মাঠে রাখিতে হয়, তাহা হইতে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ বিপুল। পরিবেশের উপর ইহার প্রভাব মারাত্মক এবং অপূরণীয়। ভারতে পরিবেশের প্রশ্নটিকে আর চাপা দিয়া রাখিবার উপায় নাই— দেশের হরেক প্রান্তে মানুষের প্রাণ দূষণের চাপে ওষ্ঠাগত। অথচ, ম্যাচের উন্মাদনায় সেই জনস্বাস্থ্যের প্রশ্নটি যথেষ্ট গুরুত্ব পাইল না। প্রশ্ন উঠিতেছে, দিনের আলোতে যে অনুষ্ঠান সম্ভব, তাহার জন্য পরিবেশের এই বাড়তি ক্ষতি করিবার যুক্তি কী। টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ দিবালোক হইতে নৈশালোকে পরিবর্তিত হইলে পরিবেশের বিষয়টি সর্বাগ্রে ভাবা উচিত। বিনোদনের ঔষধে তো আর নাগরিকের স্বাস্থ্য সারিবে না।

অন্য বিষয়গুলি:

Eden Gardens Pink Ball Test Environment Pollution Flood Lights
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy