Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Sports

লেখাপড়া খেলাধুলো পাশাপাশি

বিগত দেড় বছর ধরে ঘরে আটকে থাকা বহু পড়ুয়ার মনেই একাকিত্ব এবং হতাশার ‘মাকড়সার জাল’ জমেছে।

সূর্যশেখর দাস
শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২১ ০৮:৫৮
Share: Save:

বিভিন্ন রাজ্যে স্কুল ইতিমধ্যেই খুলে গিয়েছে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলে পশ্চিমবঙ্গেও পুজোর পরে স্কুল খুলে যাওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। ও দিকে গত দেড় বছর হল শ্রেণিকক্ষের দরজা বন্ধ। কোভিড-১৯ অতিমারির জন্য বহু পড়ুয়ার জীবন থমকে গিয়েছে। কারণ ‘ই-স্কুল’ (অনলাইনে লেখাপড়া) কখনওই এক জন শিক্ষার্থীর জীবনে সম্পূর্ণতার স্বাদ এনে দিতে পারে না। শ্রেণিকক্ষ, স্কুলের খেলার মাঠ, স্কুলের করিডরে বন্ধুদের সঙ্গে হইহই করা, আবার শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে পড়াশোনা করা— এর সত্যিই কোনও বিকল্প হয় না। দমবন্ধ-করা এক সময়ের পর যে স্কুল খুলেছে বা খুলতে চলেছে, এ সত্যিই খুব আনন্দের বিষয়। এ বার বিদ্যালয়ে ফিরে গিয়ে ছাত্রছাত্রীরা যাতে মসৃণ ভাবে খেলার মাঠে পৌঁছে যেতে পারে— সেই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আন্তরিক পদক্ষেপ করতে হবে।

বিগত দেড় বছর ধরে ঘরে আটকে থাকা বহু পড়ুয়ার মনেই একাকিত্ব এবং হতাশার ‘মাকড়সার জাল’ জমেছে। শিক্ষার্থীদের চিন্তা-ভাবনাকে আবিল করেছে অনেক ধুলোবালি। আবার বেশ কিছু পড়ুয়া ডিজিটাল লেখাপড়ার ফাঁকে মোবাইলে নানান খেলা খেলছে! কেউ বা মারাত্মক ক্ষতিকারক কিছু গেমসে মজে রয়েছে! ‘ব্লু হোয়েল’ (Blue Whale)-এর মতো ভয়ঙ্কর মোবাইল গেমসের মরণফাঁদ আমরা নিশ্চয়ই ভুলে যাইনি। তাই ছাত্রছাত্রীরা নকল খেলার বদলে প্রকৃতই খেললে করোনার ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া তাদের মানসিক স্বাস্থ্যেরও উন্নতি হবে। কোভিড-১৯’এর ‘রাক্ষুসে’ দাপটের জন্য ছেলেমেয়েরা স্কুলে না যেতে পেরে বাড়িতে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো জীবনযাপন করছে/করেছে। এর ফলে তাদের মধ্যে এক সঙ্গে থাকার বোধ অর্থাৎ ‘টুগেদারনেস’ এবং পারস্পরিক সহমর্মিতাও অনেকটাই নষ্ট হয়েছে। এই রকম পরিস্থিতিতে পড়ুয়াদের জন্য সবচেয়ে ভাল জায়গা হল বাধাহীন খেলার মাঠ।

আমাদের দেশে স্কুলে পড়াশোনা মানে কার্যত শুধুই লেখাপড়া! সেখানে খেলাধুলো যেন দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক। এর ফলে আমাদের এবং স্কুলপড়ুয়াদের কাছে বিভিন্ন খেলা সে ভাবে গুরুত্ব পায় না। গোড়াতেই গলদ থাকলে যা হয়। খেলাধুলোকে কেন্দ্র করে আমাদের প্রায় সবার মনেই অপেশাদারি ভাবনার ‘আগাছা’ জন্মাতে শুরু করে। তাই তো আমাদের দেশ অলিম্পিক্সে বিক্ষিপ্ত ভাবে সাফল্য পায়।

আবার ভারতের অনেক বেসরকারি স্কুল গর্বের সঙ্গে দাবি করে যে তাদের বিশ্বমানের পরিকাঠামো রয়েছে। খুব ভাল কথা! তা হলে তারা লেখাপড়ার পাশাপাশি স্কুলে শিক্ষার্থীদের জন্য খেলাধুলোর উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তুলুক। যেখানে ‘আউটডোর গেমস’ ফুটবল কিংবা হকির পাশাপাশি ‘ইনডোর গেমস’ যেমন ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিসও ‘ডানা মেলতে’ পারবে। ভলিবল কিংবা বাস্কেটবলের মতো দলগত খেলাকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কারণ এই খেলাগুলোর জন্য তুলনামূলক ভাবে কম জায়গা লাগে।

এ বার সরকার-পরিচালিত স্কুলগুলোর কথা ভাবা যাক। এই ধরনের বিদ্যালয়গুলিতে এমন অনেক দরিদ্র বাড়ির সন্তানরা পড়াশোনা করে, যারা মূলত খেলাতেই পারদর্শী। কিন্তু বাস্তবে যেটা হয়, তারা প্রধানত স্কুল পর্যায়ের আঞ্চলিক কিংবা জেলাভিত্তিক খেলার ময়দানের সীমাবদ্ধ গণ্ডিতেই আটকে থাকে। ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হওয়ার কয়েক দিন আগে থেকে তারা হয়তো জোর কদমে অনুশীলন করল। তার পর প্রতিযোগিতায় নেমে পুরস্কারও জিতল। ব্যস! তার পর সব কিছুই যেন থিতিয়ে পড়ে। অর্জিত সাফল্যের উপর ‘বিল্ড-অন’ আর হয় না। এখানেই ক্রীড়া-শিক্ষকদের বড় ভূমিকা নিতে হবে। তাঁদের কিন্তু প্রায় সারা বছর ধরেই পড়ুয়াদের অনুশীলন করিয়ে যেতে হবে।

সেই সঙ্গে খেলুড়ে ছাত্রছাত্রীরা যাতে স্কুলেই উপযুক্ত খাবার পায়, সেই দিকে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হবে। কারণ, খালি পেট নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়া যায় না। এই কথাটা তো আর অস্বীকার করা যাবে না যে অনেক প্রতিভা-সম্পন্ন খেলোয়াড় অপুষ্টির শিকার। আমাদের দেশে এটাও কিন্তু বিরল নয় যে ক্রীড়াবিদরা প্রয়োজনীয় খাবার না খেতে পেয়ে দুর্বল শরীর নিয়ে প্রতিযোগিতায় নেমে রীতিমতো চোট-আঘাতগ্রস্ত হয়েছেন।

ও দিকে পুজোর কিংবা গরমের ছুটিতে সংশ্লিষ্ট ছাত্রছাত্রীরা যাতে প্র্যাকটিস করে, সেই জন্য ক্রীড়া-প্রশিক্ষকরা ‘টাস্ক’ দেবেন। লক্ষ রাখতে হবে, স্কুলে খেলার পিরিয়ডগুলো যেন শুধুই আনুষ্ঠানিকতায় পর্যবসিত না হয়। সিরিয়াস হওয়াটা যে খুব দরকার। আবার অনেক স্কুলে বিশেষত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নির্দিষ্ট কোনও ক্রীড়া-শিক্ষক থাকেন না; অথচ ‘স্পোর্টস টিচার’-এর প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। এ ছাড়া বর্তমানে স্কুলগুলোতে আর পাঁচ জন পড়ুয়াদের সঙ্গেই কিছু বিশেষ চাহিদা-সম্পন্ন শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করে। বিশেষ ভাবে সক্ষম ছেলেমেয়েরাও যাতে খেলাধুলোয় নিজেদের দক্ষতা দেখাতে পারে সে দিকে সংশ্লিষ্ট ক্রীড়া-প্রশিক্ষকের নজর রাখা উচিত। আবার শিক্ষাবিদরা এমন পাঠ্যক্রম নির্মাণ করতে পারেন যা খেলাধুলোতে দক্ষ পড়ুয়াদের বিশেষ ভাবে উৎসাহিত করবে। এ দিকে এ বারের প্রতিবন্ধীদের অলিম্পিক্স প্যারালিম্পিক্সে ভাবিনাবেন পটেল, সুমিত অন্তিল, মণীশ নরওয়ালরা বহু বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে পদক জিতেছেন। অবনী লেখারা তো প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসাবে প্যারালিম্পিক্সে সোনা জিতে নতুন ইতিহাস তৈরি করেছেন। বঙ্গসন্তান মনোজ সরকারও পদক জিতে দেশকে গর্বিত করেছেন।
আমাদের দেশের স্কুলগুলোতেই তো ভবিষ্যতের লিয়েন্ডার পেজ, কর্ণম মালেশ্বরী, অভিনব বিন্দ্রা, নীরজ চোপড়া, এমসি মেরি কম, ভাইচুং ভুটিয়া কিংবা পিভি সিন্ধুর মতো খেলোয়াড়রা বেড়ে ওঠার প্রত্যাশায় রয়েছেন।

করোনা পরিস্থিতির আগে শিক্ষার্থীরা স্কুলে সেই ছকে বাঁধা লেখাপড়া চালিয়ে গিয়েছে। তার পর কোভিড-১৯ আমাদের খুব জোরে একটা ‘থাপ্পড়’ মেরেছে। আমাদের লক্ষ রাখতে হবে, এই ‘থাপ্পড়’ খাওয়ার ফল যেন ইতিবাচক হয়।

তাই বিদ্যালয় খোলার সময় যেমন শ্রেণিকক্ষ ‘স্যানিটাইজ়’ করা হয়েছে/হবে, ঠিক তেমনই খেলার মাঠে গজিয়ে ওঠা আগাছা ছেঁটে ফেলা ভীষণ প্রয়োজন। স্কুলে গিয়ে ছাত্রছাত্রীরা যেন লেখাপড়ার পাশাপাশি মনের আনন্দে খেলতে পারে।

অন্য বিষয়গুলি:

Sports Schools Students
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy