Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Supreme Court

শেষ ভরসা

সুপ্রিম কোর্টের ভরসাদায়ী কথাগুলি তাই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ মানুষ আশ্বস্ত হইতে পারেন যে, দেশের শীর্ষ আদালত এখনও মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকাররক্ষায় অতন্দ্র, তাহার জন্য সেই মামলাকে অগ্রাধিকার দিতেও আদালতের দ্বিধা নাই।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২০ ০২:৪১
Share: Save:

আরও এক বার ভারতীয় গণতন্ত্রের আব্রু রক্ষা করিল সুপ্রিম কোর্ট। অর্ণব গোস্বামীর জামিনের আবেদন মঞ্জুর করিয়া স্মরণ করাইয়া দিল, হাই কোর্ট বা নিম্ন আদালতগুলি যে ভাবে জামিন না-মঞ্জুর করিয়া থাকে, তাহা অনুচিত। শীর্ষ আদালতের নিকট কৃতজ্ঞ থাকিবার যথেষ্ট কারণ আছে, বিশেষত এই দুঃসময়ে, যখন দেশের শাসনবিভাগ ক্রমেই প্রত্যাশিত নিরপেক্ষতা হারাইতেছে, প্রশাসন ক্রমেই রাজনৈতিক শাসকদের আজ্ঞাবহ হইয়া উঠিতেছে, এমনকি এক সম্পাদিকার অভিযোগ মানিলে বলিতে হয়, তাঁহাদের পেশাদার সংগঠনও আর সকল সদস্যের প্রতি সমদর্শী থাকিতে পারিতেছে না। বাস্তবিক, অর্ণব গোস্বামীর জামিন মঞ্জুর করিবার সময় সর্বোচ্চ আদালত যাহা বলিল, তাহা এই দেশে ক্রমশই দুষ্প্রাপ্য হইতেছে। এক, যে কোনও মানুষের ব্যক্তি-স্বাধীনতার অধিকার; এবং দুই, সংবাদমাধ্যমের ও সাংবাদিকদের অধিকার। শাসনবিভাগ ও বিচারবিভাগ, উভয়েরই দায়িত্ব সেই অধিকার রক্ষা করিবার। তাই, সুপ্রিম কোর্টের অবস্থান স্পষ্ট হওয়ায় যদি প্রত্যাশা করা হয় যে বিচারবিভাগের সমস্ত স্তর সমস্ত ক্ষেত্রেই গণতান্ত্রিক দেশের দস্তুর মানিয়া স্মরণে রাখিবে যে জামিন মঞ্জুর করাই স্বাভাবিক নিয়ম, না-মঞ্জুর করা নহে— তাহা হয়তো অতিরিক্ত আশা নহে! শীর্ষ আদালত যে ভাবে অর্ণব গোস্বামীর আবেদনকে অগ্রাধিকার দিল, তাহাতেও নিশ্চয় স্পষ্ট যে, ব্যক্তির স্বাধীনতার প্রশ্নের তুল্য গুরুত্বপূর্ণ আর কিছুই নাই। ইহা যে ব্যক্তি অর্ণব গোস্বামীর প্রতি পক্ষপাত নহে, বরং ভারতের সাংবিধানিক আদর্শের প্রতি দায়বদ্ধতার নজির— তাহা প্রমাণ করিবার দায় দেশের সব আদালতের উপর বর্তায়।

কথাটি বলিতে হইতেছে এই জন্য যে, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন কারাগারে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ বিনা বিচারে বন্দি হইয়া আছেন। তাঁহাদের জামিনের আবেদন বারংবার না-মঞ্জুর হইয়াছে। তাঁহাদের সিংহভাগের বন্দিত্বই আট দিনের তুলনায় অনেক দীর্ঘ। সেই মানুষদের মধ্যে যেমন সাংবাদিক আছেন, তেমনই আছেন সমাজকর্মী, কবি, রাজনৈতিক কর্মী-সহ আরও অনেক মানুষ, যাঁহাদের এক সূত্রে গাঁথিয়াছে নরেন্দ্র মোদীর সরকারের প্রতি তাঁহাদের বিরোধিতা। বর্ষীয়ান ভারাভারা রাও বা স্ট্যান স্বামীর শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও তাঁহাদের জামিন মঞ্জুর হয় নাই। জেলে বন্দি উমর খালিদ, হানি বাবু, জি এ সাইবাবা, সুধা ভরদ্বাজ, সোমা সেন— কেহই জামিন পান নাই। হাথরসের ঘটনাকালে গ্রেফতার করা হইয়াছিল কেরলের সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পানকে। তিনিও কারাগারেই বন্দি। সরকার-বিরোধী কণ্ঠস্বর বলিয়াই তাঁহাদের কারাবন্দি থাকিতে হইতেছে, জামিন হইতেছে না— সাধারণ মানুষের মধ্যে এমন একটি ধারণা ক্রমে অনপনেয় হইতে থাকিলে তাহা ভারতীয় গণতন্ত্রের পক্ষে সুসংবাদ নহে। বিচারবিভাগের গায়েও সেই কলঙ্ক আসিয়া পৌঁছয় বইকি।

সুপ্রিম কোর্টের ভরসাদায়ী কথাগুলি তাই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ মানুষ আশ্বস্ত হইতে পারেন যে, দেশের শীর্ষ আদালত এখনও মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকাররক্ষায় অতন্দ্র, তাহার জন্য সেই মামলাকে অগ্রাধিকার দিতেও আদালতের দ্বিধা নাই। আশা করা চলে, অন্য যাঁহারা জামিন না মেলায় বন্দি হইয়া আছেন, আদালত তাঁহাদের প্রতিও সমদর্শী হইবে। এক্ষণে এক ধাপ অগ্রসর হইয়া কি আশা করা চলে না যে, শীর্ষ আদালত স্বপ্রবৃত্ত হইয়াই এই মামলাগুলির দিকে নজর দিবে? জামিনের ব্যবস্থা করিবে? সাংবাদিক বা অন্যান্যদের বিরুদ্ধে অন্যায় ভাবে ইউএপিএ বা দেশদ্রোহ আইনে মামলা হইলে প্রশাসনকে তিরস্কার করিবে, এবং সেই হেনস্থা বন্ধ করিবার ব্যবস্থা করিবে? অর্ণব যে ন্যায় পাইয়াছেন, সিদ্দিক কাপ্পানও যেন তাহাতে বঞ্চিত না হন, দেশের বিচারবিভাগ তাহা নিশ্চিত করিবে বলিয়াই গণতন্ত্রের আশা।

অন্য বিষয়গুলি:

Supreme Court Bail Arnab Goswami
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy