পোলবায় দুর্ঘটনাগ্রস্ত পুলকার। —ফাইল চিত্র
একটি শিশুর মৃত্যুর মূল্যেও কি পশ্চিমবঙ্গ কিছু শিখিবে না? স্কুলগুলি শিক্ষা লইবে না? পুলকার সংক্রান্ত দুর্ঘটনা এখন কার্যত প্রাত্যহিক হইয়া দাঁড়াইয়াছে। সিংহভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, যে গাড়িগুলি দুর্ঘটনায় পড়িতেছে, সেগুলির সহিত স্কুলের কোনও সম্পর্ক নাই— গাড়িগুলি বেসরকারি মালিকানাধীন, অভিভাবকেরা সেই মালিকের সহিত সন্তানের যাতায়াতসংক্রান্ত চুক্তি করিয়া থাকেন। ফলে, দুর্ঘটনার পর স্কুলের মাত্র দুইটি দায় পড়িয়া থাকে— এক, ঘটনায় ‘দুঃখ’ এবং ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করা; এবং দুই, জানাইয়া দেওয়া যে দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটির সহিত স্কুলের কোনও সম্পর্ক নাই। এ-ক্ষণে প্রশ্ন, যে স্কুলে যাতায়াতের নিমিত্ত ছেলেমেয়েগুলি প্রতি দিন পুলকারে সওয়ার হয়, সেই স্কুল কি সত্যই দায় এড়াইতে পারে? তাহার জন্য স্কুলগুলিকে নিজস্ব গাড়ি বা বাস কিনিতে হইবে না— স্কুলবাসের ব্যবসা করা কোনও স্কুলের কর্তব্য হইতে পারে না। কিন্তু, নিজস্ব বাস না হইলে তাহার উপর নিয়ন্ত্রণও সম্ভব নহে, এই মানসিকতাটি গত শতাব্দীর। বর্তমান কাজচালানোর যুগে বহু সংস্থাই তাহাদের কাজের সিংহভাগ অন্যতর সংস্থাকে দিয়া করাইয়া লয়। কিন্তু, কাজটি অন্য সংস্থা করিতেছে, ফলে তাহার উপর আমাদের কোনও নিয়ন্ত্রণ নাই— বাণিজ্যিক দুনিয়ায় এই অলীক যুক্তি অদ্যাবধি অশ্রুত। ছাত্র-পরিবহণের কাজে ব্যবহৃত সমস্ত গাড়ির উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা, এবং সেই গাড়ির দায়িত্ব গ্রহণ করা স্কুলগুলির কর্তব্য। সেই দায়িত্ব গ্রহণে স্কুলগুলিকে কী ভাবে সম্মত করানো সম্ভব, রাজ্য সরকারকে তাহা ভাবিতে হইবে।
সেই দায়িত্বের অনেকগুলি স্তর। স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের দেওয়ানেওয়ার কাজে যে গাড়িগুলি ব্যবহৃত হইতেছে, সেগুলি স্কুলের নিকট নথিভুক্ত হওয়া প্রয়োজন। তাহার জন্য গাড়ির যাবতীয় নথিপত্র দেখাইতে হইবে। প্রতি ছয় মাস বা এক বৎসরে এক বার নথিভুক্তিকরণ করাইতে হইবে। স্কুলের গাড়ি হিসাবে খাটিবার যথাযথ ছাড়পত্র আছে কি না, তাহা পরীক্ষা করিতে হইবে। গাড়িগুলিকে পরীক্ষা করিয়া দেখিবার ব্যবস্থাও রাখা বিধেয়। গাড়ির চালক এবং সহকারীদের যাবতীয় নথিও স্কুলের নিকট জমা করিতে হইবে। প্রতি দিন ছাত্র দেওয়ানেওয়ার কাজে যে এই নথিভুক্ত কর্মীরাই আসিতেছেন, তাহাও নিশ্চিত করিবার দায়িত্ব স্কুলের। তাঁহারা অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায় আছেন কি না, তাহা যেমন দেখিতে হইবে, তেমনই ছাত্রছাত্রীদের প্রতি এই গাড়িকর্মীরা যথেষ্ট দায়িত্বশীল হইতেছেন কি না, তাহা দেখাও স্কুলেরই কর্তব্য হইবে। স্কুলের ছাড়পত্র না থাকিলে কোনও পুলকারে যাহাতে কোনও ছাত্রছাত্রী যাতায়াত না করে, সেই নিয়মও বাঁধিয়া দিতে হইবে। অর্থাৎ, পুলকারগুলি ছাত্রছাত্রীদের জন্য যথেষ্ট নিরাপদ কি না, তাহা যাচাই করিবার প্রথম ধাপটি স্কুলেই সম্পন্ন হইবে।
স্পষ্ট বলিয়া দেওয়া প্রয়োজন, এই ব্যবস্থায় পুলিশ বা প্রশাসন দায়িত্বমুক্ত হইবে না। তাহাদের কাজ পুলকারগুলিকে আইন মানিতে বাধ্য করা— সেই কাজটি তাহাদের সর্বশক্তিতে করিতে হইবে। স্কুলগুলি নিজেদের দায়িত্ব পালন করিলে পুলিশ-প্রশাসনের কাজ কিঞ্চিৎ সহজ হইবে, তাহা নিশ্চিত। কিন্তু, এই ব্যবস্থায় তাহাই প্রধান লাভ নহে। পুলিশ ও প্রশাসনের ফাঁকফোকর গলিয়া কী ভাবে পুলকারগুলি চলিতেছে, রাজ্যবাসী তাহা বিলক্ষণ জানেন। যদি স্কুলগুলির দায়িত্ব নির্দিষ্ট হয়, তবে স্কুলের সুনামের স্বার্থেই তাহাদের নজরদারি জোরদার হইবে। প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়া পার পাইবার সম্ভাবনা অনেকখানি কমিবে। বেসরকারি স্কুলগুলিকে এই দায়িত্ব লইতে বাধ্য করা যায় না, তাহা সত্য— কিন্তু, স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে তাহারা কি স্বপ্রবৃত্ত ভাবেই এই দায়িত্ব লইবে না? বিশেষত, স্কুল সামান্য বাড়তি দায়িত্ব লইলে যদি বহু শিশুর জীবন নিরাপদতর হয়, তবে আশা করা যায়, মানবিকতার স্বার্থেই স্কুলগুলি স্বেচ্ছায় আগাইয়া আসিবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy