প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক রাজনীতির দ্বারা গঠিত হয় গণতান্ত্রিক সরকার। কিন্তু সরকার চালাইতে হয় সহযোগিতার ভিত্তিতে। সে কাজে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার ছায়া পড়িবে কেন? পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের উপদেশবার্তা দেখিয়া এই প্রশ্ন জাগিতে বাধ্য। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কি তাঁহার ক্ষমতা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, দেশবাসীর সুরক্ষার স্বার্থে ব্যবহার করিতেছেন? পশ্চিমবঙ্গে আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি লইয়া রাজ্য সরকারের আত্মতুষ্টির অবকাশ নাই। সাম্প্রতিক সাধারণ নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গেই যে সর্বাধিক হিংসা ঘটিয়াছে, এবং নির্বাচনের পরেও যে মারামারি-হানাহানি নিয়ন্ত্রণ করিতে রাজ্য সরকার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যর্থ, এ বিষয়ে কোনও প্রশ্ন উঠিতে পারে না। কিন্তু, ভারতে যে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা কাজ করিতেছে, তাহাতে কেন্দ্রের ভূমিকাটি নির্দিষ্ট। আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের বিষয়, অতি তীব্র কোনও সঙ্কট উপস্থিত না হইলে কেন্দ্র সে বিষয়ে রাজ্যকে উপদেশমূলক বার্তা পাঠাইবে কেন? কোনও রাজ্যে যদি এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয় যাহাতে সংবিধান-নির্দিষ্ট ব্যবস্থা বিপন্ন হইয়া পড়ে, সীমান্তের সুরক্ষা ব্যাহত হয়, রাজ্যের অভ্যন্তরের ঘটনা যদি সর্বভারতীয় রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে অস্থিরতা তৈরি করিতে থাকে, আইনের ভ্রান্ত প্রয়োগ করিয়া রাজ্য সরকার যদি নাগরিকের মানবাধিকার লঙ্ঘন করিয়া থাকে, তেমন গুরুতর পরিস্থিতিতেই কেন্দ্র উপদেশ পাঠায়। পশ্চিমবঙ্গে সেই পরিস্থিতি এখনও সৃষ্টি হয় নাই।
লক্ষণীয়, কেন্দ্র উপদেশ পাঠাইলে তাহা সংবাদমাধ্যমের নিকট ‘ফাঁস’ হইয়া যাইতে চায় বিরোধী রাজ্য সরকারের ক্ষেত্রেই। ২০০২ সালে গুজরাতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা থামাইবার উপদেশ দিয়া কেন্দ্র চিঠি পাঠাইয়াছিল কি না, কেহ জানিতে পারে নাই। অটলবিহারী বাজপেয়ী দাঙ্গার তিন মাস পরে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে লিখিত একটি চিঠিতে ক্ষোভ প্রকাশ করিয়াছিলেন যে, দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সুবিচার হয় নাই। বহু বৎসর পরে সেই চিঠিখানি জনসমক্ষে আসিয়াছে। অতএব কেন্দ্রের ‘উপদেশ’ কী উপায়ে বর্ষিত হইবে, সর্বসমক্ষে না কি অন্তরালে, তাহা যে রাজনৈতিক হিসাব কষিয়া স্থির হয়, এই আশঙ্কা উড়াইয়া দিবার মতো নহে। পশ্চিমবঙ্গ অমিত শাহকে বিচলিত করিয়াছে। কিন্তু উত্তরপ্রদেশে পুলিশের সহিত ভুয়ো সংঘর্ষে এক বৎসরে আটাত্তর জনের হত্যা তাঁহাকে কেন উদ্বিগ্ন করিতে পারিল না? গোহত্যার অভিযোগে একের পর এক গণপ্রহারে মৃত্যু কি সংবিধানের উপর আঘাত নহে? রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশের সরকারকে কী উপদেশ দিল তাঁহার মন্ত্রক, দেশবাসী আজও জানিতে পারেন নাই।
অতএব প্রশ্ন উঠিবে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কি নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করিতেছেন না? তিনি মানিতে নারাজ। কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গকে ‘পরামর্শ’ দেওয়ার ভঙ্গি এবং উত্তরপ্রদেশ আদি রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে তাঁহার চর্চিত নীরবতা দেখিয়া কেহ বলিতেই পারেন, তিনি সংবিধানস্বীকৃত যুক্তরাষ্ট্রীয়তার গণ্ডি অতিক্রম করিতেছেন ক্ষেত্র বাছিয়া। তাঁহার দলের নিকট পশ্চিমবঙ্গই এখন বৃহত্তম যুদ্ধক্ষেত্র। তিনি সরকারি কুর্সিতে বসিয়া সেই যুদ্ধের রসদ জোগাইতেছেন। দল আর সরকার যে এক নহে, সরকারি পদকে ব্যবহার করিয়া দলের যুদ্ধ লড়া যে অনৈতিক, বর্তমান ভারতের কর্ণধাররা সেই কথাটি স্মরণে রাখিলে গণতন্ত্রের উপকার হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy