Advertisement
E-Paper

নিরাপত্তা তো জরুরি, কিন্তু দায়বদ্ধতা?

তরুণ ইঞ্জিনিয়ারের এই মারাত্মক ক্ষতিটার মাশুল কে দেবেন? কার গাফিলতির খেসারত সারা জীবন ধরে দিতে হবে ওই ইঞ্জিনিয়ারকে?

নীলোৎপল চক্রবর্তী।—নিজস্ব চিত্র।

নীলোৎপল চক্রবর্তী।—নিজস্ব চিত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৯ ০১:০২
Share
Save

হাসপাতালের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ এ রাজ্যে খুবই ওঠে। সরকারি হোক বা বেসরকারি, সব ধরনের হাসপাতালের বিরুদ্ধেই এ ধরনের অভিযোগ উঠতে দেখি আমরা। সব অভিযোগ যে সর্বাংশে সত্য, এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। ভাল পরিষেবা বা তৎপরতার সঙ্গে চিকিৎসার নমুনাও অজস্রই মিলবে। তাই হাসপাতালকে বা চিকিৎসকদের সারাক্ষণ কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে রাখা যুক্তিযুক্ত নয় মোটেই। কিন্তু চিকিৎসকরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে যতটা ভাবিত, রোগীর নিরাপত্তা নিয়ে সবক্ষেত্রে যে ততটাই যত্নবান, এমন কথাও জোর দিয়ে বলা যায় না। বলা যায় না বলেই বাঁ হাতের একটা আঙুল খোয়াতে হল হাওড়ার বাসিন্দা তরুণ ইঞ্জিনিয়ারকে।

নিলোৎপল চক্রবর্তীর বাড়ি হাওড়ার আন্দুলে। হাওড়ারই ফোরশোর রোডে বাইক দুর্ঘটনায় পড়েন তিনি। তাতে কেটে পড়ে যায় তাঁর বাঁ হাতের মধ্যমা। দুর্ঘটনার অভিঘাত সামলেও চৈতন্য ধরে রেখেছিলেন নিলোৎপল, রাস্তায় পড়ে যাওয়া আঙুল কুড়িয়ে নিয়ে কাগজে মুড়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন হাসপাতালেও। চিকিৎসক জানান, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অস্ত্রোপচার করা হলে ওই আঙুল আবার জোড়া দেওয়া সম্ভব। চিকিৎসকের পরামর্শেই অস্ত্রোপচারের জন্য নীলোৎপল ভর্তি হয়ে যান দক্ষিণ এক নামী বেসরকারি হাসপাতালে। বরফে মুড়ো আঙুলও পাঠিয়ে দেওয়া হয় সেখানে। কিন্তু পর দিন সকালে অস্ত্রোপচারের সময়ে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি সে আঙুল।

নীলোৎপল চক্রবর্তীর পরিবার পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছে। হাসপাতাল থেকে আঙুল হারিয়ে গেল কী ভাবে, তা এ বার পুলিশ খতিয়ে দেখছে। অপরাধ কার বা গাফিলতি কার তরফে, পুলিশ হয়তো তা খুঁজে বার করবে। কিন্তু আঙুল জোড়া লাগার আর কোনও সম্ভাবনাই নেই। তরুণ ইঞ্জিনিয়ারের এই মারাত্মক ক্ষতিটার মাশুল কে দেবেন? কার গাফিলতির খেসারত সারা জীবন ধরে দিতে হবে ওই ইঞ্জিনিয়ারকে?

ম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

হাসপাতালগুলোর তরফে গাফিলতির যে সব অভিযোগ ওঠে, তা নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। নজরদারি সংস্থাও গ়ড়ে দিতে হয়েছে তাঁকে। মুখ্যমন্ত্রী সতর্ক করেছেন আর নজরদার বসিয়েছেন বলেই যে টুকু যা স্বাস্থ্য পরিষেবা মিলছে, না হলে কিছুই মিলত না— বিষয়টা এমন নয়। কোনও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই নিশ্চয়ই চাইবেন না যে, রোগীরা পরিষেবা না পান। কোনও চিকিৎসকই নিশ্চয়ই রোগীকে বিপাকে ফেলে আনন্দ পান না। অর্থাৎ হাসপাতাল বা চিকিৎসকের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ কমই। কিন্তু দায়বদ্ধতার অভাব কিছু কিছু ক্ষেত্রে মারাত্মক ভাবে প্রকট যে হচ্ছে, সে কথাও অস্বীকার করার উপায় নেই। হাওড়ার নীলোৎপল চক্রবর্তীর সঙ্গে যা ঘটল, তাকে দায়বদ্ধতার চূড়ান্ত অভাব ছাড়া আর কী বলা যেতে পারে?

আরও পড়ুন: ​আঙুলের কাটা অংশ হারাল হাসপাতাল

চিকিৎসকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবিকে ঘিরে সম্প্রতি গোটা রাজ্য উত্তাল হয়ে গিয়েছিল। রাজ্য জুড়ে কর্মবিরতিতে চলে গিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। সিনিয়ররাও সমর্থন করেছিলেন সে আন্দোলনকে। গোটা দেশের চিকিৎসক সমাজ বাংলায় শুরু হওয়া এই আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়েছিল। আন্দোলনের জেরে রাজ্য জুড়ে স্বাস্থ্য পরিষেবা সাংঘাতিক সঙ্কটের মুখে পড়েছিল ঠিকই। কিন্তু আন্দোলনটা যে সর্বৈব অযোক্তিক ছিল, এ কথা কিছুতেই বলা যাবে না। আবার বলছি, চিকিৎসক বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কখনওই রোগীর ক্ষতি চান না। কিন্তু এ কথা মনে রাখতে হবে যে, চিকিৎসকরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে যতটা উদ্বিগ্ন, রোগীদের নিরাপত্তা বা সুস্থতা নিয়েও ততটাই উদ্বেগ তাঁদের থেকে কাম্য। সেখানে বোধ হয় ঘাটতি থেকে যাচ্ছে কিছুটা। সেই ঘাটতিই দায়বদ্ধতার অভাবের কারণ। সেই অভাবই কেডে় নিল নীলোৎপল চক্রবর্তীর একটা আঙুল।

যে ক্ষতি নীলোৎপলের হল, তা আর কখনও পূরণ হবে না। কারও কারও দায়বদ্ধতার অভাবে আরও অনেকের এই রকম চিরস্থায়ী ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। এর বিরুদ্ধেও কিন্তু কণ্ঠস্বরটা তীব্র হওয়া উচিত এবং সেটা হওয়া উচিত চিকিৎসকদের মধ্যে থেকেই। মনে রাখতে হবে, চিকিৎসকরা আন্দোলনে নামতে পারেন, নিরাপত্তা সুনিশ্চিত না হলে পরিষেবা দেওয়া বন্ধ করে দিতে পারেন। কিন্তু কোনও রোগী বা চিকিৎসাপ্রার্থীর পক্ষে আন্দোলনে নামা সম্ভব নয়, চিকিৎসক এবং হাসপাতাল দায়বদ্ধতার প্রমাণ না দেওয়া পর্যন্ত চিকিৎসা নেব না বলে গোঁ ধরে বসে থাকা সম্ভব নয়। ডাক্তারবাবুরা সে কথাটা মাথায় না রাখলে নীলোৎপলের মতো ক্ষতি আরও অনেকের হতে পারে।

Newsletter অ়ঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় Anjan Bandyopadhyay Health

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}