Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

ঠিকাচাষির সুরক্ষা

ঠিকাচাষকে অনুমোদন না দেওয়ার পশ্চাতে যে কেবলই রাজ্যগুলির জাড্য ও উদাসীনতা কাজ করিতেছে, এমন নহে। চাষের জমির ঠিকা বৈধ করিলে ছোট চাষির জমি হাতছাড়া হইবে কি না, সে বিষয়ে উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ আছে।

শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ২৩:৫৫
Share: Save:

ঠিকাচাষ বৈধ করা উচিত কি না, তাহা বিবেচনা করিতে বারো জন মন্ত্রীর দল তৈরি করিল কেন্দ্র। তাহাতে দুইটি প্রশ্ন উঠিয়াছে। এক, কৃষি রাজ্যের বিষয়, কেন্দ্র তাহা লইয়া আইন করিবে কেন? আর দুই, চাষের জমি ঠিকা দেওয়া আইনত বৈধ হইলে তাহাতে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষির লাভ, না কি ক্ষতি? প্রথম প্রশ্নটির উত্তরে বলিতে হয়, কৃষিতে আইন তৈরি করিবার অধিকার রাজ্যেরই। কয়েকটি রাজ্য শর্তসাপেক্ষে ঠিকাচাষ অনুমোদন করিয়াছে, অনেক রাজ্য তাহা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করিয়াছে। রাজ্য সরকার আইন না বদল করিলে ঠিকাচাষির বৈধ সুরক্ষা সম্ভব নহে। কিন্তু ঠিকাচাষ বৈধ হওয়া উচিত কি না, তাহা গোটা দেশের জন্যই একটি জরুরি প্রশ্ন, এবং সে বিষয়ে বিতর্কের প্রয়োজন অনেক দিনই অনুভূত হইয়াছে। একটি ‘মডেল আইন’ প্রণয়ন উপলক্ষে কেন্দ্র সেই বিতর্কের সূচনা করিলে তাহাতে দোষের কিছু নাই। সংবাদে প্রকাশ, নীতি আয়োগ ঠিকাচাষ বিষয়ে একটি খসড়া আইন তৈরি করিয়াছিল, কিন্তু তাহাতে কেন্দ্রের সকল মন্ত্রক সহমত হয় নাই। তাই ২০১৬ সালে তৈরি হইলেও খসড়াটি উপেক্ষিত রহিয়া গিয়াছে। এখন কৃষি-উৎপাদন বৃদ্ধি এবং কৃষকের রোজগার বাড়াইবার তাগিদে তাহার পুনরুদ্ধারের ব্যবস্থা হইয়াছে। আলোচনায় ক্ষতি নাই। তবে কেন্দ্র তাহার ‘মডেল আইন’ রাজ্যের উপর চাপাইবার চেষ্টা না করিয়া, বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভায় বিতর্কের সূচনা করিবার উদ্দেশ্যে যদি প্রণয়ন করে, তাহাতেই মঙ্গল।

ঠিকাচাষকে অনুমোদন না দেওয়ার পশ্চাতে যে কেবলই রাজ্যগুলির জাড্য ও উদাসীনতা কাজ করিতেছে, এমন নহে। চাষের জমির ঠিকা বৈধ করিলে ছোট চাষির জমি হাতছাড়া হইবে কি না, সে বিষয়ে উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ আছে। শহরে মধ্যবিত্ত যে কারণে ফ্ল্যাট খালি থাকিলেও ভাড়া দেন না, সেই কারণেই চাষিও তাঁহার জমি ঠিকা দিতে ভয় পান। এক বার সম্পদ বেহাত হইলে তাহা ফিরিয়া পাইতে কালঘাম ছুটিয়া যাইবার আশঙ্কা। আইনি প্রক্রিয়ার উপর ভরসা করিয়া দরিদ্র নিজের সম্পদ সুরক্ষিত রাখিতে পারিবে কি? নীতি আয়োগের যুক্তি, আইনি সুরক্ষা নাই বলিয়াই জমি ঠিকায় দিতে ভীত চাষি। ইহার ফলে প্রায় আড়াই কোটি হেক্টর চাষযোগ্য জমি নিষ্ফলা পড়িয়া আছে, যাহাতে অন্তত পাঁচ কোটি টন ফসল উৎপন্ন হইতে পারিত। ভাগচাষির নথিভুক্তি পশ্চিমবঙ্গে বৈধ বটে, কিন্তু তাহাতে জমি মালিকের দরাদরির অবকাশ নাই। ভাগচাষির অধিকার বংশানুক্রমিক। এই কারণে পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে যত জমি ভাগচাষিদের নামে নথিভুক্ত হইয়াছিল, তাহার অনেক বেশি জমি হইতে ভাগচাষিদের উৎখাত করিয়াছিলেন মালিকেরা। এই জন্য ঠিকাচাষের আইন প্রয়োজন।

ঠিকাচাষির কী হইবে, সেই প্রশ্নটিও বড় হইয়া উঠিয়াছে। সাম্প্রতিকতম জাতীয় নমুনা সমীক্ষায় ধরা পড়িয়াছে, ঠিকাচাষের অধীনে জমির অনুপাত দশ শতাংশ, যাহা ভূমিসংস্কারের পূর্ববর্তী সময়ের সমান। এ রাজ্যে প্রায় আঠারো শতাংশ কৃষিজমি ঠিকার অধীন। কিন্তু ইহা সকলই মৌখিক চুক্তি, এবং ইহার ফলে প্রকৃত কৃষক সরকারি ঋণ হইতে ফসলের ন্যায্য দাম, কিছুই পাইতেছেন না। ইহা প্রাপ্য হইতে বঞ্চনা নয় কি? ঠিকাচাষকে বৈধ করা হইবে কি না, সেই প্রশ্নটি জটিল। কিন্তু কেন্দ্রে এবং রাজ্যে এ বার তাহার সদুত্তর সন্ধান করা প্রয়োজন।

অন্য বিষয়গুলি:

Farmer Security Indian Farmer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy